মহামন্ত্র—
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে’॥”
‘মন্ত্র’ নামাত্মক হইলেও তাহাতে চতুর্থ্যন্ত পদ প্রযুক্ত থাকায় সম্প্রদান সম্বন্ধে আত্মসমর্পণেরই কথা ব্যক্ত হয়। মহামন্ত্রে সকল পদই সম্বোধনের পদ; ‘তাহাতে মন্ত্রের ন্যায় চতুর্থ্যন্ত পদ নাই॥
স্মার্তগণ মহামন্ত্রকে “তারক-ব্রহ্মনামে অভিহিত করেন। স্মার্তগণ সকলেই ন্যনাধিক নির্বিশেষবাদী; সুতরাং ভোগাবসানে নির্বিশিষ্ট ত্যাগেরই পক্ষপাতযুক্ত ধর্মে অবস্থিত। কর্মী ও জ্ঞানীর কবল হইতে মুক্ত পুরুষগণ কামনা-বর্জিত। অপস্বার্থ কামের বশবর্তী হইয়া কতিপয় ব্যক্তি ভোগী এবং কতিপয় ব্যক্তি ভোগপরিহারেচ্ছাযুক্ত মুমুক্ষু হইয়া স্বীয় অবস্থা মোচনের জন্য মুক্তির প্রয়াসী। এইরূপ বাসনার বশবর্তী হইয়া মহামন্ত্র গ্রহণ করিলে তুচ্ছ ফলাকাঙ্ক্ষা প্রবল হইয়া পড়ে।
‘হরি’ শব্দের সম্বোধনে ‘হরে’ পদ এবং ‘হরা’ শব্দের সম্বোধনেও ঐ ‘হরে’ পদই নিষ্পন্ন হয়। স্বয়ংরূপ ‘কৃষ্ণ’ ও সর্বশক্তিমান স্বয়ংপ্রকাশ ‘রাম’ এবং ‘হরি’ শব্দ কামনারহিত জিহ্বায় উচ্চারিত হইলে চতুর্দশভুবন, বিরজা-নদী ব্রহ্মলোক প্রভৃতিতে অবস্থান করিয়া সেবা করা সম্ভব হয় না। পরব্যোমেই সেবার আরম্ভ সম্ভাবনা আছে। কৃষ্ণের স্বয়ংপ্রকাশতত্ত্বে বা তাঁহার আনুষঙ্গিক অন্যান্য প্রকাশ-বিলাস-বিশেষে রসের উৎকর্ষ বিচার করিতে গেলে অখিলরসামৃতমূর্তি কৃষ্ণেই সর্বরসের পূর্ণাভিব্যক্তি লক্ষিত হয়। সুতরাং রসের উৎকর্ষ বিচার করিয়া আংশিক রসবিগ্রহের অধিষ্ঠান প্রকাশ-বিলাস-সমূহের সর্ব রসাপ্তির সম্ভাবনা নাই তজ্জন্য তাঁহারা ন্যূনাধিক স্বয়ংরূপেই নিজ-নিজ অংশ প্রকাশদ্বারা সেবা করিয়া থাকেন। কৃষ্ণভক্তির উপলব্ধি ঘটিলে সম্বোধনের পদে ‘আত্মারাম’-মাত্র উপলব্ধি করিবার পরিবর্তে “রাধারমণের” সেবা প্রবৃত্তি স্ফূর্তি-প্রাপ্ত হয়।