গত ১৩ই ফাল্গুন ২৬শে ফেব্রুয়ারী শ্রীব্যাসপূজা বাসরে লক্ষ্মৌস্থ শ্রীপাদ অধোক্ষজ ভক্তিকোবিদ প্রভুর বাসাগৃহে (শ্ৰীভাগবত পত্রিকা অফিসে) প্রাতে উষাকীৰ্ত্তন এবং সন্ধ্যায় গুরুবন্দনা, গুর্ব্বষ্টক গীত এবং সমাগত জনগণের সম্মুখে শ্রীব্যাসদেবের বেদবিভাগাদি কাৰ্য্য এবং আচার্য্যমহিমা কীৰ্ত্তন হয়। তৎপরে সমাগত শ্রোতৃবৃন্দকে পর্যাপ্ত মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হইয়াছিল।
━━━
ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীমদ্ভক্তিভূদেব শ্ৰৌতী মহারাজ শ্রোতৃবৃন্দকে সম্বোধন করিয়া বলেন যে, আজ যে মহাপুরুষের বিষয় আপনাদের নিকট কীৰ্ত্তন করিবার প্রয়াস পাইতেছি, তাঁহার মহামহীয়সী শক্তির কথা আমি কিছুই জানি না। কারণ ‘‘অপ্রাকৃত বস্তু নহে প্রাকৃত গোচর”। প্রাকৃত জীবের নিকট অপ্রাকৃত বস্তুর ধারণা অসম্ভব, তবে “যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্যস্তস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্’ সেই আত্মবস্তু নিজেকে যাহার নিকট প্রকাশ করেন, তিনিই তাহার দর্শন লাভ করিয়া ধন্য হইতে পারেন। ব্যাসাভিন্ন মদীয় আচাৰ্য্যদেব কৃপাপূর্ব্বক মৎসমীপে তাঁহার যেটুকু মহিমা প্রকাশ করিয়াছেন, তাহা আপনাদের নিকট কীৰ্ত্তন করিতে পারিলে ধন্য হইব।
━━━
শ্রীব্যাসদেব বেদবিভাগাদি কার্য্য দ্বারা জীবগণের প্রকৃত মঙ্গল হইবার সম্ভাবনা নাই জানিতে পারিয়া ‘লোকস্যাজানতো বিদ্বাংশ্চক্রে সাত্বতসংহিতাম্” অজ্ঞান ব্যক্তিগণের হিতার্থ সাত্বতসংহিতা শ্রীমদ্ভাগবত রচনা করেন। তাহাতেই শ্রবণ কীর্ত্তন যোগে আমাদের অনর্থ উপশম হইবে। সেই ব্যাসদেবের আসনে অধিষ্ঠিত থাকিয়া। যিনি তাঁহার ন্যায় কার্য্য করেন অর্থাৎ, সেই নিঃশ্রেয়সপ্রদ ভাগবতবাণী জগতের নিকট প্রকাশ করেন, তিনিই ব্যাসপূজা দিবস ব্যাসাভিন্ন বিচারে পূজিত হইয়া থাকেন।
━━━
অস্মদাচাৰ্য্য ওঁ বিষ্ণুপাদ শ্রীশ্রীমদ্ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী মহারাজ, বর্ত্তমান ব্যাসানুগসম্প্রদায়ের আচার্য্য। শ্রীব্যাসদেব যেমন কোন সম্প্রদায়বিশেষের আচাৰ্য্য বা গুরু নহেন, কিন্তু তিনি সদ্গুরু, ইনিও তদ্রূপ। শ্রীমন্মহাপ্রভুর পর এত বড় দয়াবতার আর কেহ আসেন নাই, ইহার মত জীব-দুঃখদুঃখী আর কেহ অবতীর্ণ হন নাই। ইনি আচার ও প্রচারে বর্ত্তমান কলিকালে যুগান্তর আনয়ন করিয়াছেন। শ্রীচৈতন্যদেবের যে ভবিষ্যদ্ বাণী “সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম”, তাহা গৌর মনোভীষ্ট-প্রচারক আমাদের গুরুবরের দ্বারাই সাধিত হইয়াছে। সৰ্ব্ব বর্ণের সকল ব্যক্তিই ইঁহার শ্রীমুখে শ্রীগৌরসুন্দরের বাণী শ্রবণ করিয়া ধন্য হইয়াছেন ও হইতেছেন।
━━━
নিজ শিষ্যগণের প্রতি ইহার ব্যবহার অতীব আশ্চৰ্যজনক। তাঁহাদিগকে ইনি শিষ্য অর্থাৎ লঘু বিচার করেন না, কিন্তু অমানি-মানদ-ধৰ্ম্মবশে স্বয়ং নিজেকে লঘু জ্ঞান করিয়া শিষ্যদের প্রতি বলেন,― আপনারা আমার নিকট আগমন করিয়া আমাকে ভগবদ্ভজনে সাহায্য করিয়া ধন্য করিয়াছেন।
━━━
ইনি আাচরণে এবং প্রচারে অদ্বিতীয়। যাঁহারা ইঁহার শিষ্যানুশিষ্যদিগের আচরণও লক্ষ্য করিয়াছেন, তাঁহারা জানেন যে ইনি কিরূপ আচার্য্য। আচার্য্য শব্দের অর্থ—
আচিনোতি যঃ শাস্ত্রার্থং আচারে স্থাপয়ত্যপি।
স্বয়মাচরতে যস্মাদাচার্য্যস্তেন কীৰ্ত্তিতঃ॥
━━━
আমাদের ন্যায় ভোগী জীবের চিত্ত শ্রীকৃষ্ণোন্মুখী করিবার জন্য ইঁহার যে কত রকমের চেষ্টা তাহা বর্ণনাতীত। আমাদের চক্ষু বিষয় দর্শনে লালায়িত—থিয়েটার, বায়স্কোপ, প্রদর্শনী প্রভৃতি দেখিতে সৰ্ব্বদা ব্যস্ত, সুতরাং ইনি ধৰ্ম্মের সূক্ষ্ম তত্ত্বগুলি প্রদর্শনী দ্বারা অভিনব ও অদ্ভুত ভাবে লোকের নিকট দেখাইতে লাগিলেন, যাহাতে আকৃষ্ট হইয়া কলিকাতার ন্যায় স্থানে, প্রত্যহ লক্ষ লোক আগমন করিতে লাগিলেন এবং শুদ্ধভাগবতমুখে প্রদর্শনীর দ্রষ্টব্য বিষয়ের কীৰ্ত্তন শ্রবণ করিয়া সুকৃতি সঞ্চয়ের অধিকারী হইলেন।
━━━
আমরা জিহ্বার দাস। সুতরাং আমাদের আচার্য্যচরণ আমাদের জিহ্বায় বিচিত্ৰতাপূর্ণ মহাপ্রসাদ প্রদানের ব্যবস্থা করিলেন যদ্দ্বারা আকৃষ্ট হইয়া আমার ন্যায় জিহ্বাবেগের বশীভূত বহু ব্যক্তি তাঁহার নিকট আসিতে লাগিলেন। তদ্দ্বারা ইনি শ্রবণ-কীৰ্ত্তনরূপ ঔষধ ও পথ্যস্বরূপ মহাপ্রসাদ বিতরণ করিয়া জীবের সুকৃতি সঞ্চয়ের সুযোগ করিয়া দিলেন।
━━━
স্থানে স্থানে শ্রীচৈতন্যচরণচিহ্ন স্থাপন ও মঠ মন্দিরাদি প্রতিষ্ঠা করিয়া ভাগবতবাণী শ্রবণ কীৰ্ত্তন দ্বারা জড়ৈকসর্ব্বস্ব অচৈতন্য বিশ্বে চেতনতা বিধানের ব্যবস্থা করিয়াছেন। ভক্তিগ্রন্থ প্রকাশ, লুপ্ততীর্থ উদ্ধার, শ্রীগৌরমণ্ডল, নবদ্বীপ ধাম, বৃন্দাবনধামাদি পরিক্রমার ব্যবস্থা করিয়া শ্রীহরি ও হরিধামের স্বরূপ সকলের নিকট কীৰ্ত্তন করিতেছেন। ধামপরিক্রমায় ব্যয়াশঙ্কা করিয়া লোকে তাহাতে গমনে অনিচ্ছা প্রকাশ করিবে বলিয়া ইনি প্রত্যেকের দ্বারে দ্বারে প্রতিনিধি প্রেরণপূর্ব্বক স্বাচ্ছন্দ্যের সহিত বিনা ব্যয়ে ধামপরিক্রমার সুযোগের কথা জানাইয়া সকলকে ধামপরিক্রমা দ্বারা গৃহ পরিক্রমা, দেহ পরিক্রমা প্রভৃতি আসক্তি ত্যাগ করাইতেছেন। “যারে দেখ, তারে কহ কৃষ্ণ উপদেশ” শ্রীচৈতন্যদেবের এই বাণী ইঁহার দ্বারাই পূর্ণরূপে প্রচারিত হইতেছে।
━━━
এই মহাপুরুষের পাদপদ্ম আশ্রয় যাঁহারা করিয়াছেন, তাঁহারাই ধন্য। আপনারা আশীর্ব্বাদ করুন, আমি যেন তাঁহাদের পাদত্রাণবাহী থাকিয়া এ জন্ম অতিবাহিত করিতে পারি।
━━━
কীর্ত্তিগণ মধ্যে জীবের কোন্ বড় কীর্ত্তি? কৃষ্ণভক্ত বলিয়া যাহার হয় খ্যাতি॥
━━━
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যের দয়া
মাদৃশ মায়ামুগ্ধ জীব হরিগুরু-বৈষ্ণবের কৃপার মর্ম্ম উপলব্ধি করিতে না পারিয়া সেই পরম অনুগ্রহকেই দণ্ড মনে করেন এবং যাহাতে আরও অধিকতর মায়ার কবলে কবলীকৃত হইতে হয় এইরূপ আপাত মধুর ইন্দ্রিয়তৃপ্তিকর ব্যাপারকেই কৃপা বলিয়া কল্পনা করেন।
রোগীর নিসর্গ এই যে সুচিকিৎসকের ব্যবস্থিত ঔষধ পথ্যাদি তাহার নিকট তিক্ত ও বিষবং বোধ হয় এবং চিকিৎসককে পরম বন্ধুরূপে না দেখিয়া পরম শত্রুরূপে দেখেন, কিম্বা নালী ঘা আরোগ্য করিবার জন্য পরম হিতৈষী চিকিৎসকের অস্ত্রোপচার এবং নিষ্ঠুরপ্রকৃতি শত্রুর অস্ত্রাঘাত এক শ্রেণীর মনে করিয়া চিকিৎসকের প্রতি কটূক্তি প্রয়োগ করিতেও ত্রুটী করেন না; তথাপি যিনি সুচিকিৎসক তিনি রোগীর প্রলাপ বাক্যে কর্ণপাত না করিয়া অবিচলিত চিত্তে রোগীর মঙ্গল বিধানই করিয়া থাকেন।
আবার যাঁহারা রোগীর রোগ আরোগ্যের দিকে দৃষ্টি না রাখিয়া রোগীর মনোমত ঔষধ ও পথ্য ব্যবস্থা করিয়া রোগ বাড়াইয়া দেন এমন কি বাহার ফলে পরিণামে জীবন রক্ষা করা কঠিন হইয়া পড়ে সেইরূপ বঞ্চকগণকেই রোগী সুচিকিৎসক বলেন।
মাদৃশ ভবরোগাক্রান্ত রোগীগণের অবস্থাও সেইরূপ। আমরা ভবরোগে এতই বিকারগ্রস্ত হইয়া পড়িয়াছি যে চিকিৎসক সজ্জায় সজ্জিত মাদৃশ ভবরোগীকেই সমাজ-বন্ধু, দেশবন্ধু, জীববন্ধু জ্ঞানে ভবরোগ-বৈদ্যরূপে বরণ করি এবং তাঁহার ব্যবস্থা মত চলিয়া, গণগড্ডলিকা স্রোতে গা ঢালিয়া দিয়া আধিকতর ত্ৰিতাপক্লিষ্ট হইবার ব্যবস্থা করি।
তথাকথিত বৈদ্যের আপাতমধুর বাণীতে প্রমত্ত হওয়ায় গণগড্ডালিকা আজ স্বরূপবিভ্রান্ত হইয়া স্থূল লিঙ্গ দেহে এবং দেহসম্বন্ধীয় ব্যক্তি ও বস্তুতে অহং মম বুদ্ধি প্রবল করিয়াছে বাস্তব স্বদেশের কথা ভুলিয়া অশোক অভয়ামৃত নিত্যানন্দপ্রদ নিত্য ধামের কথা ভুলিয়া আজ দুই চারি দিনের পান্থশালাকেই (মরীচিকার ন্যায় দূর হইতে বহু কল্পিত সুখের স্বপ্ন দেখাইলেও যে দেশে ছুটাছুটী করিয়া কেবল অনন্ত দুঃখই লাভ হয়) সেই মেটে দেশকেই স্বদেশ বলিয়া ভ্রম করিতেছেন, পরমার্থ ছাড়িয়া অনর্থ অর্জ্জনের জন্য গা ঢালিয়া দিয়াছেন, নিঃশ্রেয়স বস্তুর সন্ধান না করিয়া প্রেয়কেই শ্রেয়ঃ বলিয়া ভ্রম করিতেছেন, সর্ব্বশক্তি সমন্বিত ভগবানের শরণাগত না হইয়া নিজের ক্ষুদ্র প্রাকৃত বল ও অক্ষজ-জ্ঞানকেই অবলম্বন করিয়া অহঙ্কারবিমূঢ় ও নাস্তিক হইয়া পড়িতেছেন। তাই আজ প্রকৃত বিশ্ববন্ধু, অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডের নিখিল জীব-কুলের নিত্য বন্ধু, ত্রিতাপক্লিষ্ট পতিত দীনহীন জীবের ত্রিতাপউন্মূলনকারী, পতিতপাবন, দীনবন্ধু, অচৈতন্য জীবের হৃদয়ে চৈতন্যদানকারী শ্রীশ্রীচৈতন্যদেবের দয়ার কথা, শ্রীচৈতন্যের প্রকাশবিগ্রহ শ্ৰীচৈতন্যবাণীর কথা,শ্রীচৈতন্য চরণানুচরগণের কথা, শ্রীচৈতন্য ভাগবতরূপ অমল পুরাণের কথা তাঁহাদের কর্ণে ভাল লাগিতেছে না।
শ্রীচৈতন্যের দয়ার কথা ভোগীকুলের ভোগোন্মুখ কর্ণে ভাল না লাগিলেও তাহাই সর্ব্বশক্তিসমন্বিত পরম হৃৎকর্ণরসায়ন কথা। সেই চৈতন্যবাণী শ্রবণ-প্রভাবে অচিরেই জীব চরম মঙ্গল লাভ করিতে পারেন।
সেই চৈতন্যবাণী ভাগ্যবান্ জীবের কর্ণে প্রবিষ্ট হইলেই সৰ্ব্বপ্রকার দেহধর্ম্ম, মনোধৰ্ম্ম এমন কি ধ্যানপূজাদির চেষ্টা পর্য্যন্ত বিরত হইয়া যায়, তখন সেবোন্মুখ জিহ্বায় ঐ নাম উচ্চারিত হন, এই শ্রীনাম যে-কোনরূপে উচ্চারিত হইলেই অর্থাৎ নামাভাসেই জীবকুল সর্ব্বপ্রকার তাপ হইতে নিঃসন্দেহে মুক্তি লাভ করেন। এই শ্রীকৃষ্ণ নাম একমাত্র পরম অমৃত-স্বরূপ ইহাই জীবন চেতনের পরম ভূষণ।
তাই শ্রীচৈতন্যদেব বলিয়াছেন, শ্রীচৈতন্যের অভিন্ন-বিগ্রহ আশ্রয়-জাতীয় ভগবান্ শ্রীচৈতন্যবাণীর মূর্ত্তবিগ্রহরূপে অবতীর্ণ হইয়া বলিতেছেন, তাঁহার চরণানুচরগণ বলিতেছেন—
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা॥
গণগড্ডালিকা আজ এহেন শ্রীনামপ্রভুর চরণে শ্রদ্ধাহীন হইয়া, নামাপরাধী হইয়া, শ্রীনামের কৃপা, শ্রীনামীর কৃপা, শ্রীনামাচার্য্যের কৃপা, আচাৰ্য্যদাসগণের কৃপা উপলব্ধি করিতে পারিতেছে না। হরি-গুরু-বৈষ্ণবের অমন্দোদয়া দয়া এবং দেশবন্ধুরূপী স্বজনাখ্য দস্যুগণের মন্দউদয়া দয়ার বৈশিষ্ট্য বুঝিতে পারিতেছেন না। তাহারা বলেন, ভগবান্ দুব্বল, নিরীহ, দরিদ্র, দেশবাসীকে আর্থিক, রাজনৈতিক প্রভৃতি বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে ফেলিয়া আধ্যাত্মিক আধিভৌতিক ও অধিদৈবিক এই ত্রিতাপের দ্বারা কষ্ট দিতেছেন। তিনি যদি সর্ব্বশক্তিসম্পন্ন হইতেন তাহা হইলে তিনি এই সব অসুবিধা ঘুচাইয়া দেশবাসীকে স্বাধীনতা, ধন সম্পত্তি, রাজ্যাদি দিতে পারিতেন। এইরূপে তাঁহারা ভগবান্কে ইন্দ্রিয়তর্পণের একটী যন্ত্র মনে করেন এবং ইন্দ্রিয়তর্পণের ব্যাঘাত হইলেই মিছাভক্তিরূপ কপটতা প্রকাশিত হইয়া পড়ে। তখন তাঁহারা বলেন, এখন ভগবানের সেবা টেবা রাখিয়া দাও এখন কায়, মন, বাক্য, ধন, প্রাণ সমস্তই প্রেয়ঃ অর্জ্জনের জন্য নিয়োগ কর। তাঁহারা আরও বলেন, যাঁহারা এই গণগড্ডালিকাস্রোতে ঝাঁপ না দিয়া শ্রেয় লাভের জন্য ও নিঃশ্রেয়স্ বস্তু বিতরণের জন্য শ্রীহরিনাম কীৰ্ত্তন করেন তাঁহারা কাপুরুষ, তাঁহারা জগতের কোন উপকার করেন না, সুতরাং তাঁহাদিগকে কোন প্রকার সহানুভূতি করা উচিৎ নয়। এইরূপে গণগড্ডালিকা প্রলাপবাক্য বকিয় হরি-গুরু-বৈষ্ণব চরণে অপরাধ অর্জ্জন পূর্ব্বক ক্রমশঃ আরও জটিল হইতে জটিলতর সমস্যার মধ্যে পড়িতে থাকেন। কারণ উহাই বিমুখ জীবের প্রতি দৈবীমায়ার দান। যতদিন পর্য্যন্ত জীব কৃষ্ণোন্মুখ না হইবে ততদিন ভগবানের দাসী বহিরঙ্গা শক্তি দুর্গাদেবী ঐ দান বা নানা প্রকার দণ্ড দিয়া গৌণভাবে কৃপা করেন অর্থাৎ অশোক অভয়ামৃত কোটীচন্দ্রসুশীতল শ্রীভগবানের পাদপদ্মসেবা-রূপ মুখ্য কৃপা―নিত্য শান্তি নিত্য আনন্দ লাভ করিবার জন্য ইঙ্গিত করেন। তাই মহাজনগণ বলেন,—উহা দণ্ড নয় কৃপা।
ভগবান্ মঙ্গলময়, তাই মূর্খ আমরা না বুঝিয়া অমঙ্গল চাহিলেও, সম্মণির পরিবর্ত্তে কাচ চাহিলেও তিনি আমাদিগকে কাচ দিয়া বঞ্চনা না করিয়া সন্মণিই দিয়া থাকেন। ধ্রুব যেরূপ প্রথমে রাজ্য চাহিলেও পরিশেষে ভগবচ্চরণ-সেবাই লাভ করিয়াছিলেন এবং তখন তিনি রাজ্যকে কাচের ন্যায় তুচ্ছ জ্ঞান করিয়াছিলেন। শ্রীভগবানের পাদপদ্মের এত মহিমা যে, কেবল ধন, জন, রাজ্যাদি কেন ঐ পাদপদ্মের নিকট কৈবল্যকেও নরকসদৃশ মনে হয়, শিব ব্রহ্মাদির পদকেও কীটবৎ জ্ঞান হয়। এ-হেন পাদপদ্মসেবা দান করিবার জন্যই অভিন্ন ব্রজেন্দ্রননন শ্রীচৈতন্য অবতীর্ণ—শ্রীচৈতন্যের শক্তি শ্রীচৈতন্যবাণীর মূর্ত্তবিগ্রহরূপে অবতীর্ণ; সুতরাং হে বিশ্ববাসী ভ্রাতৃবৃন্দ! শ্রীচৈতন্যের দয়া, শ্রীচৈতন্যবাণীর দয়া নিরপেক্ষভাবে বিচার করুন, তাহা হইলেই সকল সমস্যার অপূর্ব্ব সমাধান হইবে, যাবতীয় সমস্যার নিত্য সমাধান হইবে; তখন আপনারা সকলেই অতিশয় চমৎকৃত হইবেন।
━━━
শ্রীব্যাসপূজা বাসরে
ভক্তি-অর্ঘ্য
জয় জয় জয় ভকতি নিলয়
শ্রীগুরু চরণযুগ।
যাঁহার স্মরণে সার্থক জীবনে
নাহি রহে ভব-রোগ॥
হেন গুণনিধি কৃপার বারিধি
ভকতি সিদ্ধান্ত বর।
তব পদযুগে যেন প্রাণ লাগে
জন্মে জন্মে নিরন্তর॥
শ্রীগুরুর চরণ করিয়া স্মরণ
বন্দি সযতনে অমি।
তোমারই কৃপায় আমার জিহ্বায়
স্ফুরিবে তোমার বাণী॥
বড় ইচ্ছা মোর, শুন হে ঠাকুর
তব যশো-গাথা গাহি।
বিনা কৃপা তব নহে তা’ সম্ভব।
অহৈতুকী কৃপা চাহি॥
আমার প্রভুর প্রিয় সহচর
যতেক প্রভুর গণ।
চরণে সবার মোর নমস্কার
কৃপা মাগি অনুক্ষণ॥
সর্ব শক্তিমান বেদের প্রমাণ।
তুমি গুরু দয়াময়।
তোমার, মহিমা এ অধম জনা
বর্ণিবার যোগ্য নয়॥
আমি অতি দীন মূঢ় ভাগ্যহীন
তব নিজ জন মোরে।
আপনার গুণে কৃপা বিতরণে
অনিয়াছে তব দ্বারে॥
পতিত অধমে কর প্রভো দয়া
মোর অপরাধ ক্ষমি।
এই কৃপা কর জানি দৃঢ় ভাবে
আমার পালক তুমি॥
ধরাতলে আর তুলনা তোমার
নাহি পাই খুজে আমি।
তাই মোর মনে আশা সর্ব্বক্ষণে
না ছাড়িবে প্রভু তুমি॥
শ্রীগুরু-কৃপায় সুকৃতি মানব
পাইয়া অমূল্য ধন।
শ্রীগৌরহরির রাতুল চরণে
করে আত্মনিবেদন॥
জয় শ্রীসিদ্ধান্ত সরস্বতী জয়
পতিত-পাবন তুমি।
তব কৃপাবলে তারিলে জগৎ
পতিতের তুমি স্বামী॥
এই অকিঞ্চনে কৃপা বিতরণে
রাখ তব রাঙ্গা পায়।
অবিদ্যা নাশিয়া তত্ব জ্ঞান দিয়া
শোধ হে করুণাময়!
তব শ্রীচরণ-সেবাভিলাষী
জনৈক দাসানুদাস
━━━
সম্পত্তির মধ্যে জীবের কোন্ সম্পত্তি গণি?
রাধাকৃষ্ণে প্রেম যার সেই বড় ধনী॥