Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation
Gaudīya Base»Books»গর্ভ স্তুতি স্তোত্র»গর্ভ স্তুতি স্তোত্র ৯

গর্ভ স্তুতি স্তোত্র ৯

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • শ্রীমদ্ভাগবত  ১০.২.৩৪

    সত্ত্বং বিশুদ্ধং শ্ৰয়তে ভবান্স্থিতৌ
    শরীরিণাং শ্রেয় উপায়নং বপুঃ
    বেদক্রিয়াযোগতপঃ সমাধিভি-
    স্তবার্হণং যেন জনঃ সমীহতে

    অনুভবানন্দ স্বরূপ অপ্রাকৃত কৃষ্ণবপুই যদি ভগবানের স্বীয় বপু হয় তবে পরব্যোমস্থিত লক্ষ্মীপতি নারায়ণ রূপের প্রয়োজনাভাব এরূপ আশঙ্কা দূর করিবার জন্য দেবতারা কহিলেন, হে ভগবন্‌, স্থিতিতে অর্থাৎ পালনকর্ত্তা নারায়ণে শরীরিদিগের বদ্ধ জীবদিগের শ্রেয় প্রাপ্তির উপায়স্বরূপ বিশুদ্ধ সত্ত্বময় বপু তুমি গ্রহণ কর যেহেতু ঐ চতুর্ভুজ বপুর দ্বারা বেদক্রিয়া, যোগ তপস্যা ও সমাধিযোগে তাহারা তোমারই অর্চ্চন করিয়া থাকে।

    বেদক্রিয়া দ্বারা মানবগণ গৃহস্থ হইয়া ধৰ্ম্ম অর্জ্জন করে, তোমার বেদরূপী গরুড়ই গৃহস্থ ধৰ্ম্ম স্বরূপ নারায়ণরূপী তোমাকে সেবা করিতেছে। ধৰ্ম্মকে গৃহস্থগণ বহন করে কিন্তু উহার মূল রসস্বরূপ ভগবদ্ভক্তি শীঘ্র প্রাপ্ত হয় না। গৃহস্থ বৈদিক ধৰ্ম্মের সহিত গরুড়ের বহন ক্রিয়াতে তুলনা দৃষ্ট হয়। ব্রহ্মচারীগণও শরীরের যোগ সাধন করিয়া তোমার পরমাত্ম স্বরূপ বৈভবকে পূজা করিয়া থাকে, অতএব যোগদ্বারাও তোমার ঐশ্বৰ্য্য প্রেমই হইয়া থাকে। বানপ্রস্থ মুনিগণও মানসিক তপস্যা দ্বারা তোমার ঐশ্বৰ্য্যকে ধ্যান করে। কৃতজ্ঞতারূপ বৃত্তির দ্বারা তোমার প্রদত্ত প্রাকৃত দানের অনুশীলন করতঃ তোমাকে ধন্যবাদ দেয় ও ধ্যান করে। সন্ন্যাসীসকল জ্ঞানযোগে তোমার ব্রহ্মত্বরূপ পরমৈশ্বৰ্য্যে আবিষ্টচিত্ত হইয়া সমাধি দ্বারা তোমার বৃহত্তত্ত্বের উপাসনা করে। এই সকল বাক্যের দ্বারা সম্পূর্ণ বোধ হয় যে, চতুর্ব্বিধ বর্ণ ও আশ্রমধৰ্ম্ম সমুদায়ই ধৰ্ম্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ এই চতুর্ব্বিধ পুরুষার্থ লোভেই ভগবদৈশ্বর্য্যের পুনঃ পুনঃ উপাসনা করে। যদিও উহাই জীবের পরমশ্রেয় নহে, তথাপি কৃষ্ণপ্রেম-রূপ পরমশ্রেয়ের উপায় স্বরূপ ইহাতে সন্দেহ নাই। নারায়ণদাসেরা ঐ চতুর্ব্বিধ আশ্রমধর্ম্মের মধ্যে পঞ্চবিধ উপায় লক্ষ্য করিয়াছেন যথা কৰ্ম্ম, জ্ঞান, ভক্তি, প্রপত্তি ও আচাৰ্য্যাভিমান। যজ্ঞ, দান, তপ, ধ্যান, সন্ধ্যা ও বন্দনা এই পঞ্চ প্রকার কৰ্ম্মের অঙ্গ। অগ্নিহোত্র, তীর্থযাত্রা, পুণ্যক্ষেত্র, বাস, কৃচ্ছ্র চান্দ্রায়ণ, পুণ্যনদীস্নান, ব্রত, চাতুর্ম্মাস্য, শাস্ত্রাভ্যাস, আরাধন, জপ, তর্পণ, উপবাস, যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি এই সমুদয় কর্ম্মের প্রত্যঙ্গ। নারায়ণ মূর্ত্তি উপলব্ধি ও আলোচনাকে জ্ঞান কহা যায়। তৈলধারাবদনবচ্ছিন্ন অনুভব প্রীতিকে ভক্তিযোগ কহা যায়। ঐ ভক্তির পরিণামের নাম প্রপত্তি। এই প্রপত্তি দুই প্রকার অর্থাৎ আর্ত্তরূপ প্ৰপত্তি ও দৃপ্তরূপ প্রপত্তি। উত্তম আচার্য্যের দ্বারা উপদিষ্ট হইয়া শাস্ত্রাভ্যাসে নির্হেতুক ভগবৎ প্রসাদে যে ভক্তির উৎপত্তি হয় তাহাকে আর্ত্তরূপ প্রপত্তি কহে। উত্তম আচার্য্যের উপদেশ ক্রমে সংসার যন্ত্রণা ভীত হইয়া বিপরীত প্রবৃত্তি নিবৃত্তি দ্বারা যে ভক্তির উদয় হয় তাহাকে দৃপ্ত প্রপত্তি কহা যায়। প্রপত্তির দ্বারা ইহা স্থিরীকৃত হয় যে ঈশ্বর প্রভু জীব দাস, ঈশ্বর নিয়ন্তা জীব নিয়াম্য, ঈশ্বর প্রাণ জীব দেহ, ঈশ্বর স্বামি জীব সত্তা, ঈশ্বর ব্যাপক জীব ব্যাপ্য, ঈশ্বর ধারক জীব ধাৰ্য্য, ঈশ্বর রক্ষক জীব রক্ষ্য, ঈশ্বর ভোক্তা জীব ভোগ্য, ঈশ্বর সর্ব্বজ্ঞ জীব অজ্ঞ, ঈশ্বর সর্ব্বশক্তিমান জীব অশক্ত, ঈশ্বর পূর্ণ জীব অপূর্ণ। ভবরোগ নিবৃত্তির উচিতোপায় প্রদর্শক মহাভাগবত কোন মহাপুরুষকে অবলম্বন করত তাঁহাকে প্রভু বোধ করাকে আচার্য্যাভিমান কহে। নারায়ণদাস কর্ত্তৃক এই সমস্ত উপায় অবলম্বিত হয়। ইহাতে অধিকার ভেদ আছে। জ্ঞানী কর্ম্মী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ, ভক্ত জ্ঞানী ও কর্ম্মী এতদুভয় অপেক্ষা উৎকৃষ্ট এবং আচাৰ্য্যাভিমানী প্ৰপন্ন ঐ সমুদয় অপেক্ষা উচ্চ। কিন্তু সকলেই নারায়ণের দাস। কেবল প্রেমরূপ যে কৃষ্ণদাসত্ব তাহা এ সমুদয় হইতে ভিন্ন, যেহেতু জীবের চরম অবস্থায় ঐ ভাবের প্রাপ্তি হয়। ঐশ্বর্য্যপ্রেম কদাচই বিমল হইতে পারে না, যেহেতু তটস্থ বিচারে ঐশ্বৰ্য্য প্রেমের নির্ম্মলতা দৃষ্ট হয় না। যে সকল ব্যক্তি প্রার্থনায় কৃতজ্ঞতা বৃত্তির ব্যবহার করে তাহারা বস্তুতঃ স্বার্থপর। প্রার্থনায় যদি এরূপ কহা যায় যে ভগবন্‌! তুমি আমার প্রতি অশেষ কৃপা করিয়াছ, তুমি আমার শৈশব অবস্থায় আমার রক্ষাৰ্থ জননীর স্তনে দুগ্ধ সঞ্চার করিয়াছ, তুমি আমাদের কল্যাণ করিবার অভিপ্রায়ে বৃত্তি সকল ও তাহাদের বিষয় সকল ব্যবস্থা করিয়াছ, তুমি এই জগতে অনেক প্রকার মঙ্গল বিধান করিয়াছ এবং আমার জন্য অনন্ত সুখ রাখিয়াছ। তুমি অনন্ত জ্ঞান সত্য স্বরূপ ও সৰ্ব্ব শক্তিমান। তাহা হইলে এরূপ বুঝা যায় যে, তুমি যদি এই সমস্ত না করিতে ও তুমি যদি এতদূর ঐশ্বৰ্য্যবান্ না হইতে তাহা হইলে তুমি আমার উপাস্য হইতে না। এইপ্রকার প্রার্থনা কতদূর দূষণীয়। কৃষ্ণদাসেরা যদিও এ সমুদয় বিষয় অবগত আছেন তথাপি ঐ সমুদয় বৃত্তি অর্থাৎ বিস্ময়, কৃতজ্ঞতা, ভয় প্রভৃতি বৃত্তির দ্বারা কদাচ চালিত হন না। তাঁহারা কেবল পরমেশ্বরের মাধুর্য্যেই স্বভাবত প্রেমকে নিয়োগ করেন। ঐশ্বৰ্য্য ও কৃপা কৃষ্ণমূর্ত্তিতে থাকিলেও তন্মূৰ্ত্তির মাধুর্য্যালোকে গুপ্ত হইয়া আছে। যদিও কৃষ্ণ ইচ্ছা করিলেই অর্ব্বুদ কোটি গোপবালক ও গাভিগণ সৃষ্টি হয় তথাপি ঐ শক্তি বংশীর নিকট কিছুমাত্র নহে। যদিও কৃষ্ণ ইচ্ছা করিবামাত্র অবলীলাক্রমে বকাসুর রূপী ধূৰ্ত্ততা, পুতনারূপিণী তঞ্চকতা ও অঘাসুররূপী পাপ বিনষ্ট হইয়া যায় তথাপি গোচারক বেশের উৎকৃষ্টতা ঐ শক্তি অপেক্ষা মহত্তর আকর্ষণীয়। যদিও অনুতাপকারী ঐশ্বৰ্য্যভক্ত ব্রহ্মা ও ঐশ্বৰ্য্য ভোক্তা ইন্দ্র, শ্রীকৃষ্ণের পাদপীঠে স্বীয় স্বীয় রত্নময় মুকুটকে প্রতিঘাত করত অপূর্ব্ব শব্দের প্রকাশ করে, তথাপি গোপীদত্ত নূপুরের নিকট ঐ ঐশ্বর্য্যের মাহাত্ম্য কি? মাধুৰ্য্যানন্দের নিকট ঐশ্বৰ্য্যানন্দের কিছুমাত্র প্রভুত্ব নাই। অতএব দেবতাগণ কহিলেন হে ভগবন্! যদিও কৃষ্ণবপু সর্ব্বোৎকৃষ্ট, তথাপি নারায়ণবপু ব্ৰহ্ম অপেক্ষা উৎকৃষ্ট যেহেতু ব্রহ্ম ক্লীব এবং নীরস নিম্বফলস্বরূপ। অরসিক কাকই কেবল উহার চোষণ কর্ত্তা যেহেতু উহাতে প্রেম নাই। শুষ্ক জ্ঞানের দ্বারা শান্তপদপ্রাপ্ত পুরুষেরা উহার সেবা করে। কিন্তু পরব্রহ্ম যে নারায়ণরূপী তুমি তোমাতে দাস্যরূপ একটি আনন্দময় রস আছে। এই নারায়ণরূপ আম্র মুকুলই আকর্ষক, রসিক কোকিল ঐ মুকুলের আস্বাদন করিয়া দাস্যরস ভোগ করেন। যে ব্যক্তি কাকত্ব পরিত্যাগ করিয়া কোকিলত্ব গ্রহণ করিতে সক্ষম হয় সে অনন্ত উন্নতির সোপানে আরূঢ় হইয়া থাকে। সে কেবল মুকুলেই আবদ্ধ থাকে না; পরে ঐ মুকুল ফলরূপ হইলে উহার মধুর রসকেও আস্বাদন করিতে পায়। অতএব নারায়ণ দাসেরাও ধন্য যেহেতু তাহারা ব্ৰহ্মজ্ঞান হইতে মুক্ত হইয়াছে।

    শ্লোকে যে “শ্রয়তেশব্দ আছে তাহাতে অদূরদর্শী ব্যক্তিগণ বোধ করিতে পারেন ভগবানের বিশুদ্ধ সত্ত্ব রূপও নিত্য নহে। এই আশঙ্কা অকর্ম্মণ্য। ভগবানের অপ্রাকৃত কৃষ্ণমূৰ্ত্তি অনাদি ও অনন্ত যেহেতু ইহা সচ্চিদানন্দ ব্যতীত আর কিছুই নহে। সচ্চিদানন্দ মূৰ্ত্তিকে ভগবান যে কোন কালে গ্রহণ করেন ও কোনকালে পরিত্যাগ করেন এরূপ বিচার করা যাইতে পারে না, যেহেতু ভগবান আপনাকে আপনি ধ্বংস কিরূপে করিবেন; সচ্চিদানন্দকলেবর নিত্য এবং প্রকৃত সমুদয় অবস্থা হইতে বিলক্ষন। সমুদয় ঐশ্বর্য্যরহিত হইলেও ভগবানের অস্তিত্বরহিত হয় না। এ প্রযুক্ত প্রলয়াবসানে গোলোক বৃন্দাবনের অস্তিত্ব স্বীকার করা যায় যেহেতু অপ্রাকৃত তত্ত্বের নিত্যতা স্বীকৃত হইয়াছে। কিন্তু পরব্যোমধাম ঐ অচিন্ত্য অপ্রাকৃত ধামের পরিমাণ, অতএব উহার পর্য্যবসান গোলোক ধামেই সম্ভবে। অতি মহাপ্রলয় যদি কখন ভগবানের ইচ্ছা হয় তবে এই অসৎ ব্রহ্মাণ্ড সমুদয় ও সৎস্বরূপ পরব্যোমধাম লুপ্ত হইয়া এক অপ্রাকৃত পরম তত্ত্ব অবশিষ্ট থাকিবে। চতুঃশ্লোকীই ইহার প্রমান। মহাপ্রলয়েও পরব্যোমধামের পরিণাম সম্ভবে না। অতএব পরব্যোম ধামকে এই শ্লোকে স্থিতি শব্দে ব্যাখ্যা করা হইয়াছে এবং উহাতে যে নারায়ন মুর্ত্তি তাহাতেই শ্রয়তে শব্দের উদ্দ্যেশ্য স্বীকার করিতে হইবে সমস্ত বেদকর্ত্তা ব্রহ্মা ও আগম তন্ত্রাদির বক্তা মহাদেব যে ভগবানের অপ্রাকৃত দেহকে অনিত্য কহিবেন ইহা কে স্বীকার করিবে?

Page execution time: 0.0857541561127 sec