শ্রীমদ্ভাগবত ১০.২.৩০
ত্বয্যম্বুজাক্ষাখিলসত্ত্বধাম্নি সমাধিনা বেশিত চেতসৈকে।
ত্বৎপাদপোতেন মহৎকৃতেন কুর্ব্বন্তি গোবৎসপদং ভবাব্ধিম্॥
এই প্রকার অনন্ত অবতারের মধ্যে বিশুদ্ধ সত্ত্ব গুণান্বিত যে ভগবদ্বপু তাহাই জীবের পক্ষে একমাত্র অবলম্বনের বিষয় ইহা নিশ্চয় করিয়া দেবগণ কহিলেন হে অম্বুজাক্ষ! বিবেকী পুরুষগণ সমাধিযোগে বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণের ধামস্বরূপ তোমাতে চিত্ত নিবেশিত করিয়া মহৎ লোকের কৃত তোমার পাদপদ্মকে তরীর ন্যায় জ্ঞান করত ভবসাগরকে গোবৎস পদ করিয়া পার হইয়া থাকেন।
অম্বুজাক্ষ নামে এই স্থলে ভগবানকে সম্বোধন করার অনেক অভিপ্রায় আছে। ভগবান্ অখিল জগতের দ্রষ্টা, তাঁহাকে কেহই দৃষ্টি করিতে পারে না। তিনি সকলের সাক্ষী অতএব কেহই তাঁহাকে যুক্তি অথবা বিচারের দ্বারা প্রমাণ করিতে সমর্থ হয় না। তবে যে কেহ তাঁহার শান্ত মৃত্তির ব্যাখ্যা করিবে সে কেবল স্বীয় আত্মার তৃপ্তি ব্যতীত ভগবানের স্বরূপ লক্ষণ বলিতে পারিবে না। ভগবানের জ্ঞানস্বরূপকে চক্ষুর সহিত তুলনা করিয়া উহার প্রেমময় লক্ষণের ব্যাখ্যার্থে পদ্মের সহিত উপমা দেওয়া হইয়াছে। তাঁহার সচ্চিদানন্দভাবই তাঁহার পদ্মলোচন। বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণান্বিত বপুর ব্যাখ্যায় তাঁহার সচ্চিদানন্দমূর্ত্তিকে প্রথমে উল্লেখ করার প্রয়োজনে তাঁহাকে অম্বুজাক্ষ বলিয়া দেবতারা সম্বোধন করিলেন।
বিশুদ্ধ সত্ত্বধামের প্রকৃত অর্থ বিচার করা বৈষ্ণবগণের পক্ষে নিতান্ত কর্ত্তব্য, যেহেতু উহাই তাঁহাদের প্রাপ্য। প্রথমত মায়াতে যে তিনটী মূল গুণের দৃষ্টি হয় তন্মধ্যে সত্বগুণই শ্রেষ্ঠ। প্রাকৃত জগতের উৎকৃষ্টাংশকে সত্ত্বগুণ বলা হয়। যে সকল লোক প্রাকৃতভাবে আবদ্ধ তাহারা প্রথমে সত্ত্বগুণকে অবলম্বন করত রজ ও তম গুণকে জয় করিবেক। কিন্তু সত্ত্বগুণই যে চরম এমত নহে যেহেতু তাহাতেও প্রাকৃতভাব প্রাপ্ত হওয়া যায়। পবিত্রতা, দয়া, বিচার, জ্ঞান, নিষ্পাপ সুখ, জনসঙ্গলিপ্সা, প্রার্থনা, সদালোচনা, উপকার, বৈষ্ণব-সংসার, বৈষ্ণব সেবা, দেহ, মন প্রভৃতির উন্নতি, ইন্দ্রিয় নিগ্রহ প্রভৃতি অনেক সাত্ত্বিক ব্যবহার আছে কিন্তু এ সমুদয়ই প্রাকৃত। ভৌতিকভাবের সহিত যাহা কিছু আবদ্ধ আছে তাহাই প্রাকৃত। সাংসারিক কার্য্যে পূৰ্ব্বোক্ত বৃত্তি সমুদয়ের যত আলোচনা হইয়া থাকে সমুদয়ই ভৌতিক। পীড়িত লোককে ওষধিদান যদিও দয়ার কার্য্য তথাপি ঐ দয়া ভৌতিক উপকার ব্যতীত তদ্দ্বারা আর কিছুই করিতে সমর্থ হয় না। ভৌতিক কার্য্যের নির্গুণ ফল হইবার সম্ভাবনা নাই যেহেতু কৰ্ম্মানুযায়ী ফল হইয়া থাকে। আকৃতি, বিস্তৃতি, আকর্ষণ, স্থিতি-স্থাপকতা প্রভৃতি ভৌতিক বিষয়ের গুণ। কিন্তু আত্মা যে কি পদার্থ তাহা বিচার করিতে হইলে ভৌতিক গুণ সকল হইতে বিচারকে প্রথমে নিৰ্ম্মল করা প্রযোজন। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, যত দিবস মানব, দেহের সহিত সম্বন্ধ রাখেন ততদিবস তাঁহার অভৌতিক ভাবের নির্ম্মল প্রকাশ সম্ভবে না; এ বিধায় সত্ত্বগুণই বিশেষরূপে সেব্য। কিন্তু তাহাই যে জীবের পক্ষে প্রাপ্য তাহা নহে। সমুদয় গুণ সকলের বিপরীত অবস্থাকে অপ্রাকৃত তত্ত্ব কহা যায়। মানব যখন তত্ত্বজিজ্ঞাসু হইয়া গুরুর প্রতি অপ্রাকৃত তত্ত্বের বিষয় জিজ্ঞাসা করেন, গুরু তখন তাঁহাকে প্রাকৃত ভাব বিসর্জ্জন দিতে অনুমতি করিয়া থাকেন। এই জন্য গুরু কহিয়া থাকেন যে, হে শিষ্য তুমি স্বয়ং অপ্রাকৃত নির্গুণ ও ঈশ্বর দাস এবং জগদীশ্বর অপ্রাকৃত নির্গুণ ও প্রভু। শিষ্য জিজ্ঞাসা করেন যে, আমার এবং ঈশ্বরের আকার কি প্রকার এবং আমরা কোথায় অবস্থিতি করি। গুরু এই স্থলে বিপদ্গ্রস্ত হইয়া ভৌতিক ভাব নিষেধ করিবার জন্য কহিয়া থাকেন “তুমি ও পরমেশ্বর উভয়েই নিরাকার অতএব তোমাদের স্থানের প্রয়োজন নাই।” শিষ্য প্রথমে অত্যন্ত কষ্টের সহিত এই বিষয়ের আলোচনা করিতে করিতে দেখিতে পান যে আত্মতত্ত্ব সমুদয় ভৌতিক তত্ত্বের বিলক্ষণ কিন্তু অবস্তু নহে। মন আত্মবস্তুকে সন্ধান করিতে পারে না যেহেতু ইন্দ্রিয়জনিত ভাবনিচয় কর্ত্তৃক মনের গঠন হইয়াছে। আত্ম বস্তু অতীন্দ্রিয় ও গুণাতীত ও মন কর্ত্তৃক গৃহীত হইতে গেলে ব্যভিচার দোষে দূষিত হয়। কিন্তু আত্মবস্তু যে কি ইহা জানা কর্ত্তব্য এবং কোন বৃত্তিদ্বারাই বা উহা জানা যাইতে পারে। এই প্রকার চিন্তায় ব্যাকুল হইয়া তিনি পুনরায় গুরুর নিকট প্রশ্ন করিয়া থাকেন হে গুরো! আপনি কহিয়াছেন যে আত্মা নির্গুণ ও নিরাকার তবে জীব কি প্রকারে স্বীয় আত্মা ও আত্মার আত্মা পরমাত্মাকে উপলব্ধি করিতে পারিবেন এবং গুণাভাবে উপলব্ধি অসম্ভব অতএব ভৌতিক জগত হইতে জীবের স্বস্বরূপে অধিষ্ঠান কি রূপে হইতে পারে। গুরু দেখিলেন যে শিষ্য এই সময়ে আত্মতত্ত্ব জানিবার যোগ্য হইয়াছেন যেহেতু তিনি ভৌতিক ভাব সকলকে বিশেষরূপ অবগত হইয়া অভৌতিক ভাবের অনুসন্ধান করিতেছেন। গুরু আহ্লাদ পূৰ্ব্বক কহেন যে, “হে উপযুক্ত শিষ্য তোমাকে যে নির্গুণ ও নিরাকার এই দুইটী শব্দ কহিয়াছিলাম তাহার অর্থ এই যে আত্মা ও পরমেশ্বর ভৌতিক সমস্ত ভাবের অতীত কিন্তু অবস্তু নহেন, যেহেতু প্রাকৃতাতীত পদার্থ হইলে অপ্রাকৃত শব্দ বাচ্য হয়। আত্মা ও পরমেশ্বরে অপ্রাকৃত গুণ সকল আছে তন্মধ্যে জীবের বর্ত্তমান অবস্থায় জ্ঞান ও আনন্দ এই দুইটীই প্রত্যক্ষ। আত্মা প্রাকৃত জগতে দ্রষ্টা অতএব চক্ষু যেমত সমুদয় পদার্থ দৃষ্টি করিয়া আপনাকে আপনি দেখিতে সমর্থ হয় না তদ্রুপ আত্মা ও আপনাকে আপনি দেখিতে পায় না। চক্ষু-দৃষ্ট পদার্থের জ্ঞান ও তদুদঘাটিত আনন্দস্বরূপ আপনাকে জানে তদ্রুপ আত্মা ও সৰ্ব্বদৃক্ হইয়া স্বীয় জ্ঞান ও আনন্দকে অনুভব করে। এই অনুভবটীই আত্মার প্রত্যক্ষ। বস্তুত জ্ঞানানন্দই যে আত্মা ইহা অনুভূত হয়। পরমেশ্বর ঐ জ্ঞানানন্দের পূর্ণ স্বরূপ। অতএব হে শিষ্য, তোমাকে পূর্ব্বে যে নিরাকার ও নির্গুণ বলিয়া কহিয়াছিলাম তাহার বাস্তবিক অর্থ এই যে, তুমি এবং ঈশ্বর নির্ম্মল জ্ঞান ও নির্ম্মলানন্দ গুণ বিশিষ্ট। তোমরা বাস্তবিক নিরাকার ও নির্গুণ নহ কেবল অপ্রাকৃত আকার ও অপ্রাকৃত গুণে তোমার বিচারকে আনিবার জন্য এরূপ কহিয়াছিলাম। তুমি অতিশয় ভাগ্যবান যেহেতু আমার ইঙ্গিত বুঝিতে পারিয়া পরমতত্ব প্রাপ্ত হইবার যোগ্য হইলে। তুমি যদি মূর্খ হইতে তবে আমার পূর্ব্ব বাক্য হইতে তুমি আপনাকে ও পরমেশ্বরকে অবস্তু জানিয়া ভৌতিক তত্ত্বকে প্রত্যক্ষানুমান দ্বারা পরমতত্ব বোধ করিয়া অসত্য বিষয়ে আবদ্ধ থাকিতে। ইন্দ্রিয়জনিত ভাবনিচয়কে যে মন প্রত্যক্ষ করিয়া বোধ করে উহাকে আত্মানন্দ জ্ঞানে পর্য্যবসান কর তাহা হইলে অপ্রাকৃত গুণ সকলের কিছু কিছু অনুভব করিয়া ক্রমে ক্রমে বিমলানন্দের ধামকে প্রাপ্ত হইবে। আত্মানন্দের অনুভবই বিমলানন্দের দ্বার-স্বরূপ। এই পরম তত্ত্বের অনুভবকে সমাধি কহা যায়। ইন্দ্রিয় জনিত ক্ষুদ্র জ্ঞানাত্মক যে যুক্তি, তাহার ঐ বিষয়ে গতি না থাকায় তাহার দ্বারা এই পরমতত্বের অনুভব স্বরূপ আত্মপ্রত্যয়ের বিশেষ কোন উপকার হইবার সম্ভাবনা নাই। অতএব আত্মপ্রত্যয় সম্ভূত যে সমাধি তাহাই কেবল আত্মতত্ত্ব জ্ঞান বিষয়ে কার্য্যকারী হয়। অনুভবানন্দই যে চরম প্রাপ্য তাহা নহে, উহা কেবল চরম প্রাপ্য বিশুদ্ধ সত্ত্বধামের দ্বার স্বরূপ। জীবাত্মা সমাধি দ্বারা ক্রমে ক্রমে ঐ বিশুদ্ধ সত্ত্বধামের অভৌতিক দেশ ও তদাত্মক বস্তু সকল দেখিতে পান এবং আত্মাকে তথায় ক্রমে ক্রমে নীত করেন। হে শিষ্য অভৌতিক দেশ শব্দে ভাবের বিরোধ বোধ করিও না যেহেতু বাক্য সকল ইন্দ্রিয় সম্ভূত মনের প্রকাশক মাত্র। অতএব ঐ অপ্রাকৃত ধামের আমি যত কিছু বর্ণন করিব তাহা বাক্যের ব্যভিচার মলের দ্বারা দূষিত হইবে কিন্তু তুমি তাহার অপ্রাকৃত সারভাগকে উপলব্ধি করিবে আমার এইটী বিশেষ উপদেশ। দেশ শব্দে আকৃতি বিস্তৃতি বিশিষ্ট আধারকে ভৌতিকভাবে উপলব্ধি হয় কিন্তু আমি যখন অভৌতিক দেশ শব্দ ব্যবহার করিলাম। তখন তুমি আত্মার অনুভবরূপ জ্ঞানের দ্বারা অপ্রাকৃত জগতকে উপলব্ধি করিবে আমার বাক্য মলকে লইবে না। হে শিষ্য! তুমি যখন সমাধির দ্বারা অপ্রাকৃত ধামের অম্বেষণ করিবে তখন ভৌতিক ভাবকে পরিত্যাগ করিবামাত্র এক অপূর্ব্ব বিরজা নদী দেখিতে পাইবে। ঐ বিরজাতে স্নান করিয়া তুমি স্বয়ং অপ্রাকৃত কলেবর প্রাপ্ত হইবে। তদনন্তর পরব্যোম নামে এক অপূর্ব্ব বৈকুণ্ঠ ধাম দৃষ্টি করিবে। তথায় ষড়ৈশ্বৰ্য্য পূর্ণ পরমেশ্বরকে বিরাজ করিতে দেখিবে। জগদীশ্বরের বিমল দাস্য সুখই যে জীবের একমাত্র স্বভাব তাহা তথায় উত্তমরূপ উপলব্ধি করিবে। স্নিগ্ধতা, যশ, কৌশল, অজেয়তা, প্রফুল্লতা, আকর্ষণ শোভা, ঐশ্বৰ্য্য, জ্ঞান, নিয়ম প্রভৃতি অপ্রাকৃত গুণ নিচয়ের মূর্ত্তি স্বরূপ, শ্যামবর্ণ, শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম, তুলসীগন্ধ, বনমালা, লক্ষ্মী, গরুড় ও বিশ্বক্সেন প্রভৃতি ভগবদ্ পারিষদ্ সমুদয় দেখিতে পাইবে। ইহাতে যদিও বহুতর আনন্দ প্রাপ্ত হইবে তথাপি ঐশ্বর্য্যজনিত আনন্দকে তুমি তৃপ্তিকর বোধ করিতে পারিবে না, যেহেতু তদ্দ্বারা তুমি কেবল আশ্চৰ্য্য-সম্ভূত আনন্দ ব্যতীত ভগবানের স্বরূপ স্পর্শানন্দ পাইতে পারিবে না। তোমার আত্মা অধিকতর উন্নতির প্রার্থনা করিবে অতএব তুমি অতিশীঘ্রই তদূর্দ্ধে উড্ডীয়মান হইয়া গোলোক নামা অন্তঃপুরধামে প্রবেশ করিবে। গোলোক ধামের মহান্ সীমার মধ্যে প্রবেশ করিবামাত্র তোমার একটী আশ্চৰ্য্য অবস্থা হইবে। তুমি তখন নিজ পুরুষত্ব পরিত্যাগ করত আপনাকে স্ত্রীলোক জ্ঞান করিবে। ইহাতে আরও আশ্চর্য এই যে, তুমি যে কখন পুরুষ ছিলে তাহা তোমার স্মরণ গোচরও হইবে না তখন তোমার বোধ হইবে যে তুমি জগতে পূর্ব্বে এক গৃহস্থিনী ছিলে।
বিধিমার্গানুশাসনরূপ কোন ব্যক্তির সহিত তোমার পূর্ব্বে পরিণয় হইয়া ছিল, তুমি বহুকার স্বীয় পতির সেবায় বিধিবৎ নিযুক্ত থাকিয়া পতিব্রতা নাম প্রাপ্ত হইয়াছিলে কিন্তু কোন সময়ে যমুনা তটস্থ কদম্ব কানন মধ্য হইতে এক আশ্চর্য্য মধুর বংশীশব্দ তোমার কর্ণগোচর হইয়া তোমাকে অস্থির করায় জগদ্রূপ চিত্রপটে কোন সখী কর্ত্তৃক তোমার আকর্ষকের বংশীবদন মূর্ত্তি দেখিয়া তুমি আরও বিহ্বল হইলে। শাস্ত্ররূপ ভাট সকলও তোমার আকর্ষকের গান করিতেছিল তাহাতে তোমার যে দুর্দ্দশা হইয়াছিল তাহাকে তোমার পূৰ্ব্বরাগ কহা যায়। এই বৈরাগ্য-রূপ পূৰ্ব্বরাগ হইতে তোমার পূৰ্ব্ব গৃহস্থ ধৰ্ম্ম বিসর্জন ও আকর্ষকের অন্বেষণে যমুনাতটে বৃন্দাবনে তোমার অভিসারিকা বিভাবিত হইল। ঐ পূর্ব্বোক্ত গোলোক ধামের সীমা প্রাপ্ত হইবামাত্র তোমার এই সমুদয় ভাবের উদয় হইয়া তুমি উন্মত্তবৎ ঐ অপ্রাকৃত বৃন্দাবনের বন হইতে বনেতে ভ্রমণ করিবে তুমি তথায় একলা থাকিবে না। তোমার অবস্থাপ্রাপ্তা অনেক সহচরীর সহিত সাক্ষাৎ হইবে। তখন তোমার মনে হইবে যে তুমি যে গ্রামের গোপবনিতা ছিলে সেই গ্রামের অন্য সহচরীগণ তোমার সঙ্গী হইয়াছে অতএব তাহারা চিরপরিচিতা ও তোমার মহৎ সুহৃদ্বর্গ। তুমি তথায় বিপ্রলম্ভ ও সম্ভোগরূপ দুই প্রকার পরমানন্দ প্রাপ্ত হইবে। ঐশ্বৰ্য্যবর্জ্জিত পরমেশ্বরের পরমমাধুর্য্য তোমার প্রেমের উদ্দীপক ও আলম্বন স্বরূপ হইবে। অবশেষে কৃষ্ণানুস্পর্শরূপ কেবলানুভবানন্দ প্রাপ্ত হইয়া তাহাতেই তোমার মহাভাব পর্য্যন্ত উন্নতি হইবে। এই প্রকার উপদিষ্ট পুরুষেরা সমাধিযোগে ভগবদ্ধামকে প্রাপ্ত হন। মহৎ লোকেরা এই অপ্রাকৃত ধামের আবিষ্কার করায় ইহাকে মহৎকৃত ভগবদ্দাস বলিয়া উক্ত করা হইয়াছে। এই সমাধি স্বরূপ মহদুপায় অবলম্বন করিলে পূরুষেরা অনায়াসে এই দুস্তর ভবসমুদ্রকে পার হইতে পারে। ভবসমুদ্র পার হইবার উপায়ান্তয় নাই, অতএব সমস্ত বিবেকী জীবের এই নির্ম্মল উপায় অবলম্বন করা কর্তব্য। এই বিশুদ্ধ সত্ত্বধাম স্বরূপ কেবল প্রেমই জীবের পক্ষে পঞ্চম পুরুষার্থ। যাঁহারা এই প্রেমের অধিকারী তাঁহারা ধম্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ এই চারি পুরুষাৰ্থকে নিতান্ত ঘৃণা করিয়া থাকেন ॥