শ্রীমদ্ভাগবত ১০.২.৩৭
শৃণ্বনৃ গৃণন্ সংস্মরয়ংশ্চ চিন্তয়ন্নামানি রূপাণি চ মঙ্গলানি তে।
ক্রিয়াসু যুষ্মচ্চরণারবিন্দয়োরাবিষ্টচিত্তো ন ভবায় কল্পতে॥১২॥
গুণজন্ম কৰ্ম্মের দ্বারা যেসকল নাম ও রূপ নিরূপিত হয় তাহা নারায়ণ উদ্দেশেই হইয়া থাকে, কৃষ্ণ উদ্দেশে হয় না এরূপ পূর্ব্বশ্লোকে ব্যক্ত হওয়ায় ঐ সমস্ত নাম ও রূপকে অনেকেই অগ্রাহ্য করিতে পারে এইজন্য দেবগণ কহিলেন, হে কৃষ্ণ! তোমার পরম মঙ্গল নাম ও রূপ সকল যাঁহারা শ্রবণ, উচ্চারণ ও চিন্তন করিতে করিতে ও অন্যকে স্মরণ করাইতে করাইতে তোমার চরণারবিন্দে উপাসনা যোগে আবিষ্টচিত্ত হন, তাঁহাদের সংসারের সংকল্প থাকে না।
উপাসনা যদিও আত্মারই ক্রিয়া বলিয়া নিশ্চিত আছে, তথাপি জীব যত দিবস দেহের মধ্যে আবদ্ধ আছেন তত দিবস দেহ ও মন ও উপাসনার সহকারী হয়। দেহে শ্রবণ কীৰ্ত্তন ও মনে চিন্তন ও নিদিধ্যাসন এই দুই প্রকার উপাসনাও প্রসিদ্ধ। যদিও দেহ যোগ জীবের পক্ষে বাস্তবিক কারাবাস তথাপি এই অবস্থাকে সাধক সুব্যবহার করিবেন। ইন্দ্রিয় সকল যদিও বিষয় উদ্দেশ্যেই প্রদত্ত হইয়াছে তথাপি জীব নিজস্বভাব পরিচালনায় তদ্দ্বারা ভগবৎ সাধন করিয়া লইবেন। শ্রবণ কীর্তনই দেহীদিগের পক্ষে সর্ব্বোৎকৃষ্ট ঔষধি, যেহেতু শ্রবণ কীৰ্ত্তনের দ্বারা দেহের চরিতার্থতা সাধন হয়। কোটি চান্দ্রায়ণও জীবকে ততদূর শুদ্ধ ও নিস্পাপ করিতে পারে না যে প্রকার হরিকথা শ্রবণ ও কীর্ত্তনের দ্বারা হইয়া থাকে। পূজা ও নৈবেদ্যাদি জীবের ততদূর প্রয়োজনীয় বোধ হয় না যতদূর হরিকীৰ্ত্তন আবশ্যক। বহুবিধ উপাচারের সহিত কোন বিপ্র পরমেশ্বরের সাধনা করিলেও ঈশ্বরের ততদূর প্রসাদ সম্ভব হয় না, যতদূর ভক্তি সহকারে কোন চণ্ডাল হরিকীর্ত্তন করিয়া প্রাপ্ত হইয়া থাকেন। যত প্রকার সাধন প্রণালী জগতে দৃষ্ট হয় সমুদয় অপেক্ষা হরিকীৰ্ত্তনই শ্রেষ্ঠ। শ্রবণ কীর্তনের মাহাত্ম্যের অবধি নাই।
দেহ যোগে শ্রবণ, কীৰ্ত্তন, মনের দ্বারা ধ্যান ও আত্মায় ভক্তিরসের চালনা ইহাই জীবের বিশেষ কৰ্ত্তব্য। শ্রবণ, কীৰ্ত্তন ও ধ্যান নারায়ণেরই হইয়া থাকে যেহেতু নাম ও রূপ সমুদায় নারায়ণের, শ্রীকৃষ্ণের নহে। অনুভব প্রেমই শ্রীকৃষ্ণের সাধন। অতএব দেহী যৎকালে শ্রবণ-কীর্ত্তন করিতে থাকেন তখন তাঁহার আত্মা যদি ভক্তি সহকারে শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দে আবিষ্ট হয় তবে ঐ দেহীর অধোগতি কখনই সম্ভব হয় না অর্থাৎ ক্রমশ ঊর্দ্ধগতি হইতে হইতে শ্রীকৃষ্ণ চরণ কল্পবৃক্ষ পৰ্যন্ত প্রাপ্ত হয়। ভক্তিলতা শ্রবণ কীৰ্ত্তন জলসেচনের দ্বারা বৃদ্ধি হইয়া ক্রমে ক্রমে বৈকুণ্ঠ, ব্রহ্মলোক, পরব্যোম ভেদ করিয়া বৃন্দাবনস্থ শ্রীকৃষ্ণের পদে কল্পতরু প্রাপ্ত হয়। তথায় প্রেম ফুল ফলিতে থাকে। যত দিবস জীব দেহী থাকেন তত দিবস শ্রবণ কীৰ্ত্তন জল সেচনের দ্বারা ঐ লতাকে পুষ্ট করিবেন।