শ্রীমদ্ভাগবত ১০.২.৩৬
ন নামরূপে গুণজন্মকৰ্ম্মভির্নিরূপতিব্যে তব তস্য সাক্ষিণঃ।
মনো বচোভ্যামনুমেয়বর্ত্ম নো দেবক্রিয়ায়াং প্রতিমন্ত্যথাপি হি॥
বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণের দ্বারা নির্গুণ অর্থাৎ—অপ্রাকৃত গুণবিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণ প্রকাশিত হন এরূপ পূৰ্ব্ব শ্লোকে ব্যাখ্যাত হইয়াছে, ইহাতে গুণময় নারায়ণ রূপকে শ্রেষ্ঠজ্ঞান হইবার সম্ভাবনা এই আশঙ্কা দূর করিবার আশয়ে দেবগণ কহিলেন হে দেব! হে নিয়ন্তা। গুণজন্ম ও কর্ম্মের দ্বারা তোমার নাম ও রূপ নিরূপণ হয় না যেহেতু তুমি গুণজন্ম ও কৰ্ম্মের আধার যে প্রকাশ তাহার ও সাক্ষী। তুমি মন ও বচনের অনুমেয় মাত্র, প্রত্যক্ষ নহ। ক্রিয়া সমুদয়ে তুমি নিশ্চিতরূপে প্রতীত হও, অতএব গুণের দ্বারা তোমার উপাসনা হইলেও নির্গুণ স্বরূপ তুমি গুণ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণ প্রকাশের দ্বারা পরমেশ্বর নারায়ণরূপ গ্রহণ করেন কিন্তু ঐ বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণও গুণ; অতএব গুণাধার পরম পুরুষ নহে! অতএব নারায়ণের দ্বারাও পরমেশ্বরের নাম ও রূপ নিরূপিত হয় না যেহেতু নারায়ণ রূপ গুণেরও সাক্ষী ভগবানকেই বলিতে হইবে। নারায়ণকে মনের দ্বারা ধ্যান ও কল্পনা করা যায় ও বাক্যের দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। যেহেতু বেদসকল ভগবানের অপ্রাকৃত ভাবের কল্পনা অথবা চিন্তা অথবা ব্যাখ্যা কবিতে না পারিয়া নারায়ণকেই প্রতিষ্ঠা ও গান করিয়াছেন। বস্তুত ভগবানের নাম ও রূপ নাই এইজন্য শুকদেব গোস্বামী তাঁহার কোন নাম না পাইয়া তাঁহাকে আকর্ষক অর্থাৎ কৃষ্ণ কহিলেন। তাঁহার কোন রূপ না পাইয়া চরাচরের রক্ষকরূপ গোপাল বেশে তাঁহাকে সজ্জীভূত করিলেন। কোন প্রকার অস্ত্রের দ্বারা তাঁহার স্বরূপ স্বভাব ব্যাখ্যা করিতে না পারিয়া তাঁহার করে বংশী দৃষ্টি করিলেন। কোন প্রকার অলঙ্কারের দ্বারা তাঁহার সৌন্দৰ্য্য প্রকাশ করিতে না পারিয়া আনন্দ প্রকাশ ময়ূরপুচ্ছ ও শান্তি বাদক নূপুর তদীয় চরণে লক্ষ্য করিয়াছেন। কোন প্রকার বর্ণের দ্বারা তাঁহার রূপ ব্যাখ্যা করিতে অশক্ত হইয়া স্নিগ্ধতার প্রকাশক শ্যামবর্ণে তাঁহাকে উপলব্ধি করিয়াছেন। এই সমস্ত রূঢ়ী ভাবকে ব্যাখ্যা করিয়া ভগবানের স্বস্বরূপ দৃষ্টি করিয়াছেন। মন ও বাক্যের অনুমেয় যে পুরুষ তাহার অনন্ত ঐশ্বৰ্য্য থাকিলেও ঐ সমুদয় ঐশ্বর্য্যের দ্বারা তাহার স্বরূপ প্রকাশ হয় না বরং আচ্ছাদিত হইবারই সম্ভাবনা। তাঁহার স্বরূপের প্রতি যাঁহাদের ঐকান্তিক প্রেম জন্মে তাঁহার তদীয় ঐশ্বর্য্যে কদাচ লুব্ধ বা আশ্চর্য্য হন না। বরং ঐশ্বৰ্য্য দৃষ্টি করিলে স্বরূপকে দূরে জ্ঞান করিয়া ঐশ্বৰ্য্যকে পরিত্যাগ করত অন্যত্র স্বরূপ অন্বেষণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ কৌতুক করিবার জন্য নারায়ণের রূপ ধারণ করিলে গোপীগণ বিস্ময় হইয়া তাঁহার সহিত সম্বন্ধ স্বীকার করিল না; যাহাদের স্বরূপ মাধুর্য্যে প্রেম হয় তাহারা গুণজন্ম ও কর্ম্মের দ্বারা প্রকাশিত যে ভগবদ্রূপ তাহাতেও আদর করেন না।
কৃষ্ণতত্ত্বই ভগবানের স্বরূপতত্ত্ব, যেহেতু মন ও বচনের প্রকাশিত নহে, অনুমেয় মাত্র। এই কৃষ্ণতত্ত্ব গুণজন্ম ও কৰ্ম্ম দ্বারা লক্ষিত হন না। গুণজন্ম ও কৰ্ম্ম দ্বারা কৃষ্ণের রূপ ও নামও নিরূপিত হয় না। দেবকীর গর্ভে চতুর্ভুজ নারায়ণের জন্ম হয় অতএব জন্মের দ্বারা কেবল নারায়ণেরই বাসুদেব নাম হয়, শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ হয় না। শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বৰ্য্য প্রকাশকেই নারায়ণ বলা যায়, এ প্রযুক্ত শ্রীকৃষ্ণের অংশ নারায়ণ, যেহেতু স্বরূপ হইতে অনুরূপ ক্ষুদ্র। নারায়ণও কৃষ্ণের অংশ হওয়ায় তাঁহাকে বস্তুত কৃষ্ণস্থ হইতে হয় এই জন্য কৃষ্ণকে বাসুদেব নাম দেওয়া যায়, নতুবা নহে! চতুর্ভুজ মূৰ্ত্তি অতি শীঘ্রই প্রাকৃত শিশুর ন্যায় প্রকাশ পায় যেহেতু চতুর্ভুজেরও পরিণাম স্বরূপে অবস্থিতি স্বীকার করা যায়। কৃষ্ণস্থ নারায়ণই জগতে বৃহৎ বৃহৎ কাৰ্য্য করিয়া থাকেন। কৃষ্ণ ঐ সমুদায় কার্যের দ্বারা উপাধি প্রাপ্ত হন না। অসুর-বধ প্রভৃতি কাৰ্য্য সকলের দ্বারা কৃষ্ণের যত নাম করণ হইয়াছে ঐ সমুদয় নাম নারায়ণের প্রাপ্য। অতএব গুণজন্ম-কর্ম্ম সমুদয় নারায়ণের, কৃষ্ণের নহে। জন্মকালে ও অন্তর্ধান কালে চতুর্ভুজ মূৰ্ত্তিই প্রকাশ পায় যেহেতু আবির্ভাব ও তিরোভাব নারায়ণের সম্ভবে, নির্গুণ অর্থাৎ অপ্রাকৃত গুণ বিশিষ্ট শ্রীকৃষ্ণের সম্ভব হয় না। যেহেতু কৃষ্ণ, মন, বচন, গুণ, জন্ম, কৰ্ম্ম প্রভৃতি যত প্রকার প্রকাশ ভাব আছে তাহার অতীত।
এই কৃষ্ণতত্ত্বকে অদূরদর্শীগণ দুই প্রকারে ব্যাখ্যা করিয়া থাকেন। কেহ কেহ কহিয়া থাকেন যে গোলোক পুরী হইতে সনক সনাতন প্রভৃতির অভিশাপ ক্রমে কৃষ্ণ জগতে আসিয়া জন্মগ্রহণ করত বৃহৎ বৃহৎ কাৰ্য্য সমাধান করিয়া পুনরায় স্বস্বরূপে অবস্থিত হন। এই প্রকার বক্তারা ব্যাসদেবের অপ্রাকৃত তত্ত্ব সুন্দররূপ উপলব্ধি না করিয়া কৃষ্ণতত্ত্বকে সাধারণে প্রাকৃত তত্ত্ব বলিয়া ব্যাখ্যা করেন। পরমেশ্বরের স্থান নিরূপণ ও তাঁহার শাপভয় প্রভৃতি প্রাকৃত বাক্যমাত্র। ইহাতে যে বাক্যমল আছে তাহা পরিষ্কার করত যে পুরুষ অনুভবানন্দ স্বরূপ কৃষ্ণ দর্শন করেন তাঁহার অমৃতত্ত্ব সম্ভব, নতুবা প্রাকৃতজ্ঞানে এই সমুদায় ব্যাখ্যা দৃষ্টি করিলে অকল্যাণ হইবার সম্ভাবনা। “সত্যং পরং ধীমহি” এই প্রকার বক্তা যে ব্যাসদেব, তাঁহার লিখিত সাত্ত্বিক পুরাণ সমুদয়ে যে সমস্ত কথা আছে তাহা অপ্রাকৃত ভাবে পরিপূর্ণ অতএব ঐ সমস্ত হইতে যিনি প্রাকৃত ভাবকে অর্জ্জন করেন তাহার মঙ্গল কোথায়।
দ্বিতীয় প্রকার ব্যবস্থা এই যে, কৃষ্ণলীলা কল্পিত বিবরণ মাত্র। জীবগণের আধ্যাত্মিক তাপোন্মূলন ইচ্ছায় বাদরায়ণ ঋষি আধ্যাত্মিক তত্ব সুলভ করিবার জন্য এই কৃষ্ণলীলা কল্পনা করত লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। ইহা বাস্তবিক ঐতিহাসিক ঘটনা নহে। এই প্রকার ব্যাখ্যাও অযুক্ত। কল্পনাশক্তিও প্রাকৃত যেহেতু ইন্দ্রিয় ভাবজনিত মনই কল্পনা করে। আত্মপ্রত্যয়রূপ অচ্যুতবিশ্বাস যাহাকে অনুভবশক্তি কহা যায় তাহার সহিত মনের কোন সম্বন্ধ নাই। মন প্রাকৃত, কিন্তু অনুভব শক্তি অপ্রাকৃত। মনের দ্বারা যাহা কিছু কল্পিত হয় সকলই প্রাকৃত। অতএব কৃষ্ণলীলা যদি কল্পিত হইত তবে কি প্রকার অপ্রাকৃত তত্ত্বের ব্যাখ্যা হইতে পারিত। কল্পনা দ্বারা স্বর্গ-নরক ও অনেকপ্রকার লোকের চিত্রপট মানবগণের নিকট উপস্থিত হয়। কিন্তু ইন্দ্রিয়সকল যাহার সহিত কখন সাক্ষাৎ করে নাই তাহার কল্পনা কিরূপে হইতে পারে? ব্যাসদেব যদ্যপি প্রাকৃতবস্তু হইতে অপ্রাকৃত-তত্ত্ব কল্পনা করিতেন তবে কৃষ্ণতত্ত্বও কল্পনাও প্রাকৃত হইত। কিন্তু তিনি তাহা করেন না। চতুঃশ্লোকী প্রাপ্তির বিবরণেই ইহার বিশেষ ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ব্রহ্মা যখন সমুদয় প্রাকৃত বস্তুতে কৃষ্ণদর্শন পাইলেন না, তখন তিনি স্বীয় আত্মায় ভগবদ্ভাবকে প্রত্যক্ষ দর্শন করিলেন। ভগবানের নিকট হইতে যে অপ্রাকৃতজ্ঞান প্রাপ্ত হইলেন তাহাই ব্যাসের নিকট প্রেরণ করেন। ব্যাসদেব ঐ জ্ঞানের দ্বারা ভগবত্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করিয়াছেন। আত্মপ্রত্যয় অনুভূত যে জ্ঞান তাহা কদাচ প্রাকৃত কল্পনাবাচ্য হইতে পারে না এবং তল্লক্ষিত কৃষ্ণতত্ত্বও প্রাকৃত হইতে পারে না। কৃষ্ণতত্ত্ব প্রত্যক্ষ সত্য ইহাতে কিছুমাত্র কল্পনা নাই, তবে যাঁহারা কৃষ্ণ লীলাকে কল্পিত বলিয়া বিশ্বাস করেন তাঁহারা প্রাকৃত ভাব হইতে স্বীয় জ্ঞানকে উদ্ধার করিতে পারেন নাই।
দেবতারা এই জন্য কহিলেন যে, যে ব্যক্তিরা পরমেশ্বরের গুণ, জন্ম, কৰ্ম্ম, প্রাকৃত ঐতিহাসিক বিবরণ বোধ করিয়া তদ্বারা তাঁহার নাম ও রূপের ব্যবস্থা করে তাহারা মূঢ় এবং যাঁহারা কৃষ্ণ বিবরণ কল্পিত বোধ করিয়া তদ্দ্বারা উপাসনার প্রণালী পাওয়া গিয়াছে এইরূপ বোধকরে তাহারাও তদ্রূপ। যেহেতু অপ্রাকৃত ভগবান প্রাকৃত গুণ, জন্ম, কৰ্ম্ম, মন ও বচনের সাক্ষীমাত্র, তদ্গত নহেন। তাহারা তাঁহার যে কিছু নাম ও রূপ প্রদান করিবে তাহা নিশ্চয়ই প্রাকৃত হইয়া উঠিবে। তাঁহার স্বরূপ, নাম, রূপ কহিতে পারিবে না। কেবল সম্বন্ধীয় নাম ও রূপ প্রকাশ করিবে এই মাত্র। কিন্তু তাহাতে জীবের পরম তৃপ্তি নাই। জীব যখন এই প্রকার তৃপ্তি রহিত হইয়া ব্রহ্মার ন্যায় ব্যাকুল হন তখন ক্রিয়াতে ভগবানের প্রত্যক্ষতা দৃষ্টি করেন।
শ্রীধর স্বামী ক্রিয়া শব্দের অর্থ উপাসনা কহিয়াছেন। উপাসনা শব্দেও সম্পূর্ণ বোধগম্য নহে এইজন্য ক্রিয়া শব্দের অর্থ প্রকাশ করা কৰ্ত্তব্য। প্রাকৃত বিভাগে মানবের মধ্যে তিনটী বস্তু আছে অর্থাৎ দেহ, মন ও বাক্য। দেহে যে সকল ইন্দ্রিয় আছে তাহারা প্রাকৃত বিষয় উপলব্ধি করে। এ জন্য জগদীশ্বরকে অতীন্দ্রিয় উপাধি প্রদত্ত হইয়াছে। মনও ইন্দ্রিয়জনিত ভাব সকলের চালনা করিয়া থাকে অতএব উহারও ক্রিয়া সকল প্রাকৃত। বাক্য মনকে প্রকাশ করে অতএব উহাও প্রাকৃত। দেহ, মন ও বাক্য ভগবানের কিছুই জানে না। দেহ, মন ও বাক্য এই তিনটী বস্তুর বিলক্ষণ যে তত্ত্ব তাহাই জীব ও তাহাকেই আত্মা কহে। ঐ আত্মার দুইটী লক্ষণ অর্থাৎ জ্ঞান ও আনন্দ। এই জ্ঞান ও আনন্দই পরমেশ্বরকে উপলব্ধি করে যেহেতু অপ্রাকৃত পদার্থই অপ্রাকৃত পদার্থকে জানিতে পারে। এই অপ্রাকৃতজীবের অপ্রাকৃত ঈশ্বরের প্রতি যে ভক্তি তাহাই ইহার ক্রিয়া। ঐ ক্রিয়াকে উপাসনা কহা যায় এবং তদযোগেই জীব ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার লাভ করে। জীব যেকাল পর্য্যন্ত এই প্রাকৃতদেহে আবদ্ধ আছেন তত দিবস উপাসনা ক্রিয়া ও দেহে ব্যক্ত হইতে থাকিবে। আত্মা ভক্তিযোগে যখন উপাসনা করেন তখন বাক্য ঐ ভক্তির সহবাসে স্তবরূপে ব্যক্ত হয়। মন ভগবদ্ভাবের ধ্যান করিতে থাকে। দেহ হাস্য, পুলক, অশ্রু, নৃত্য, স্তম্ভ, স্বেদ এইসকল প্রকাশ করিতে থাকে। ইন্দ্রিয়সকল ব্যাকুল হইয়া নিজ নিজ বিষয়ের মধ্যে ভগবানকে দৃষ্টি করিতে থাকে। হস্ত যাহা কিছু আহরণ করিতে পারে তন্মধ্যে প্রিয় বস্তুসকল জগদীশ্বরকে দান করিয়া তৃপ্ত হয়। পদ নৃত্য করত ও সাধু প্রতিষ্ঠিত স্থান সকলে বিচরণ করত তৃপ্ত হয়। চক্ষু ভগবদ্ভাব স্মারক প্রতিমা সকল দেখিয়া তৃপ্ত হয়। এই সমুদয় বাহ্যিক ক্রিয়াকে উপাসনা কহা যায় না, কিন্তু আত্মাতে যে সকল ভাবের উদয় হয় ঐ সকল ভাব দেহযোগে স্বভাবত প্রকাশ পাইয়া থাকে। আত্মা ব্যাকুল হইয়া অপ্রাকৃত বৃন্দাবন ধামের প্রতি ধাবমান হইলে দেহ মথুরার নিকটবৰ্ত্তী হয়। আত্মা ভগবদ্রূপ দর্শনার্থে যতই ব্যাকুল হয় তত শীঘ্রই অর্চ্চাবতারের দর্শনার্থে চক্ষু ধাবমান হয়। আত্মা স্বীয় প্রিয়বস্তু প্রেম জগদীশ্বরকে দান করিতে ব্যাকুল হইলেই হস্ত পুষ্প চন্দনাদি ও ভোগ নৈবেদ্যাদি ভগবানকে দিবার জন্য ব্যস্ত হয়। এই সমস্ত কাৰ্য্য অপ্রাকৃত উপাসনা-ক্রিয়ার প্রকাশিকা মাত্র, মুখ্য ক্রিয়া নহে। এই প্রকার অপ্রাকৃত উপাসনা ক্রিয়ায় জীবও ভগবানকে প্রত্যক্ষ দর্শন করেন।
এই শ্লোকে কৃষ্ণলীলা যে অপ্রাকৃত ভাবে প্রত্যক্ষ, ইহাই কথিত হইল। এই লীলা যে ইন্দ্রিয় প্রত্যক্ষ অথবা কল্পনাযোগে মনের প্রত্যক্ষ এরূপ যাহারা স্থির করেন তাঁহারা কৃষ্ণলীলার অর্থ অবগত নহেন । কৃষ্ণলীলা অনাদি অনন্ত ও স্বতঃপ্রত্যক্ষ। ইহাই সমস্ত বিষয়ের সাক্ষী, অতএব কোন বস্তু ইহাকে চিত্রিত করিতে সক্ষম নহে। ইহা অপ্রতিম। আত্মপ্রত্যয়রূপ অপ্রাকৃত বিভাগে ইহার সদ্য অবস্থিতি! ইহাকে ইন্দ্রিয়প্রত্যক্ষ বা মনকল্পিত বিষয় বোধ করিলে অত্যন্ত অধমতা প্রকাশ হয়। অতএব জীবের অবস্থাসকল সমাপ্তি হইলে অবস্থা রহিত এই অপ্রাকৃত বিলাস প্রত্যক্ষ হইয়া পড়ে। যতকাল জীব নানাবিধ অবস্থায় বিচরণ করেন ততদিবস সম্বন্ধীয় সত্য স্বরূপ ব্রহ্মাণ্ডস্থ বিষ্ণু অথবা ক্ষীরোদকশায়ী বিষ্ণু অথবা কারণাব্ধিশায়ী পুরুষ অথবা পরব্যোম স্থিত মাধবকে দৃষ্টি করিয়া উপাসনা করেন। অবস্থার সমাপ্তি হইলে কৃষ্ণতত্ব প্রাপ্ত হন। জড়দেহে জড়ীভূততা হইতে স্বরূপ অবস্থা প্রাপ্ত হওয়া পৰ্য্যন্ত যত প্রকার ভাবের উদয় হয় ঐ সকলকে অবস্থা কহা যায়। স্বরূপদেহ প্রাপ্তির নাম অবস্থা।