Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation
Gaudīya Base»Books»গর্ভ স্তুতি স্তোত্র»গর্ভ স্তুতি স্তোত্র ১০

গর্ভ স্তুতি স্তোত্র ১০

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • শ্রীমদ্ভাগবত  ১০..৩৫

    সত্ত্বং চেদ্ধাতরিদং নিজং ভবেদ্বিজ্ঞানমজ্ঞানভিদাপমার্জ্জনং
    গুণপ্রকাশৈরনুমীয়তে ভবান্প্রকাশতে যস্য যেন বা গুণঃ

    অজ্ঞান নিবর্ত্তক বিজ্ঞানস্বরূপ তোমার নারায়ন মূর্ত্তি যদিও তোমার নিজ মূর্ত্তি নয় এরূপ বিতর্ক্কিত হয়, তথাপি হে ধাত, হে গুণ সকলের নিয়ামক! তোমাতে পণ্ডিতেরা অবিশ্বাস করিতে পারেন না। তোমার বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণ প্রকাশে ও তোমার বিশুদ্ধ অপ্রাকৃত বপু অনুভূত হইতেছে, যেহেতু ঐ সত্ত্বগুণ নিজ আধার অথবা প্রকাশককে প্রকাশ করে

    জগতে যত ভাব আছে ঐ সকলের উৎকৃষ্টতাকে সত্বগুণ কহা যায় । শাসন কর্ত্তৃত্ব একটী মহান্ ভার তাহাতে ক্ষমতা ঐশ্বৰ্য্য যশ শ্ৰী জ্ঞান এই প্রকার সমুদয় গুণ নিহিত আছে। ঐ সমুদয় গুণই কিছু না কিছু নরপতি গণের শাসন কার্য্যে দৃষ্ট হয়। যখন ঐ সকলকে পূর্ণভাবে চিন্তা করা যায় তখন সমস্ত রাজা গণের রাজা পরমেশ্বরের একটী ভাবের আবির্ভাব হয়। পার্থিব পদার্থ সমুদয়ই প্রাকৃত অতএব এই রাজ-রাজ্যেশ্বর ভাবকে প্রাকৃত ভাবে দেখিতে গেলেই এই ব্রহ্মাণ্ডস্থ বিষ্ণুর ধ্যান হয়। বিষ্ণুই রাজ-রাজ্যেশ্বর যেহেতু তিনি ব্যতীত আর পালন কর্ত্তা কেহ নাই। এই প্রকার প্রাকৃত ভাবের সাধনও অজ্ঞান জনিত। অতএব জ্ঞান যোগের দ্বারা মানবগণ ঐ রাজ-রাজ্যেশ্বর বিষ্ণুর অপ্রাকৃত স্বরূপ চিন্তা করিতে করিতে পরব্যোমস্থ হইয়া নারায়ণ দর্শন করেন। এই মায়াময় ব্রহ্মাণ্ডে তিনটী লোক আছে অর্থাৎ ব্রহ্মলোক, বৈকুণ্ঠ ও শিবলোক। রজঃ সত্ত্ব ও তম এই গুণ ত্রয়ই ঐ তিনটী লোকের প্রকাশক। ব্ৰহ্মাণ্ড অনন্ত অতএব প্রতি ব্রহ্মাণ্ডের সহিত তিন তিনটী লোকের অবস্থিতি। কিন্তু সমস্ত ব্ৰহ্মাণ্ডগণকে সমষ্টি করিলে সাধারণ একটী পালনকর্ত্তার আবশ্যক। পরব্যোম ঐ পালনকর্ত্তার ধাম। তথায় নারায়ণ সমুদয় ঐশ্বর্যের স্বরূপ লইয়া বিরাজ করিতেছেন। মূঢ় লোকেরা মায়াতীত হইলেই নারায়ণ দাস হইতে পারে। নারায়ণ দাস হইলেই জীবের অজ্ঞান দূরীভূত হইল। মায়ার গুণসকল অবিদ্যা-জনিত অতএব বিরজা স্নানের দ্বারা জীব জ্ঞানময় হন। এই অবস্থাটিকে বিজ্ঞান অবস্থা কহা যায়। নারায়ণ দাসত্বই জীবের অজ্ঞান নাশক বিজ্ঞান স্বরূপ অবস্থা বলিতে হইবে। এই অবস্থাই জীবের মুক্ত অবস্থা।

    পূর্ব্বশ্লোকে এরূপ নির্ণীত হইয়াছে যে কৃষ্ণদাস্যই জীবের চরম স্বরূপ অতএব নারায়ণ দাসেরাও ক্রমে ক্রমে কৃষ্ণদাস হইবার যোগ্য হন। ইহাতে কোন তার্ক্কিক এরূপ কহিতে পারে যে কৃষ্ণদাসত্ব যদি সর্ব্বশ্রেষ্ঠ পদ হয়, তবে জীবের নারায়ণ দাসত্ব স্বীকার করার প্রয়োজন কি? সকলেই একেবারে কৃষ্ণদাস হইবার যোগ্য হউন। দেবগণ এই আশঙ্কা নিরসনার্থে বর্তমান শ্লোকের দ্বারা ভগবানকে স্তব করিয়াছেন। এই শ্লোকে দেবতারা ভগবানকে ধাতা সম্বোধন করত কহিলেন যে তুমি জগতের নিয়ামক। তোমার নিয়ম কেহই অতিক্রম করিতে পারে না। ক্ৰমশোন্নতিই তোমার অলঙ্ঘ্য বিধি। জীব যখন স্বপদ পরিত্যাগ পূর্ব্বক অধোগমন করিয়াছে তখন তাহাকে তোমার বিধির অনুগত হইয়া পুনরায় উঠিতে হইবে। বিধিলঙ্ঘন পূৰ্ব্বক কাৰ্য্য করিতে গেলে জীবের চেষ্টার সাফল্য হইবে না। এই জড়দেহে জীব আবদ্ধ থাকিয়া বিমল ধামের যোগ্য কিরূপে হইবে। প্রথমত, অনিত্য পদার্থের প্রতি স্নেহ দুর হইবে। দ্বিতীয়ত, সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়কৰ্ত্তাস্বরূপ পরমেশ্বর বলিয়া তোমাকে স্বীকার করিবে। তৃতীয়ত, তোমার সহিত যে সম্বন্ধ তাহা জানিতে পারিবে। চতুর্থত, তোমার প্রতি যে কর্ত্তব্য তাহা স্বভাবের দ্বারা তোমার প্রতি অনুষ্ঠান করিবে। এই মত ক্রমে ক্রমে যে জীবের অনন্ত কাল পৰ্য্যন্ত উন্নতি হইবে তাহা তোমারই বিধি। ভগবানের স্বতন্ত্র ইচ্ছাই বিধি। পরমেশ্বর কোন বিধির বাধ্য নন যেহেতু তিনি স্বতন্ত্র পুরুষ কিন্তু বৃক্ষাদি স্থাবর পর্য্যন্ত সকলেই ঐ বিধির বশবর্ত্তী। এই জন্য দেবতারা পরমেশ্বরকে ধাতা শব্দে সম্বোধন করিলেন।

    পণ্ডিতেরা সাধ্যভক্তি ও সিদ্ধভক্তি লইয়া অনেক বিবাদ করিয়া থাকেন। কেহ কেহ কহেন যে কৰ্ম্ম ও জ্ঞানের অনুষ্ঠান করিতে করিতে যে ভক্তির আবির্ভাব হয় তাহাই সাধ্য ভক্তি এবং সমুদয় মানবের পক্ষে সাধ্য ভক্তিই প্রসিদ্ধ। সিদ্ধভক্তি অসম্ভব, যেহেতু পরমেশ্বরকে সিদ্ধ ভক্তির নিয়ামক কহিলে পক্ষপাতী কহা যায়। পক্ষান্তরে কোন কোন পণ্ডিত কহিয়া থাকেন যে জগদীশ্বর স্বতন্ত্র অতএব তিনি স্বীয় বিধির বাধ্য নহেন। এপ্রযুক্ত কোন কোন ব্যক্তিকে সিদ্ধ ভক্তি প্রদান করায় তাঁহার পক্ষপাতিত্ত্ব হইতে পারে না। কোন কোন শ্রীসাম্প্রদায়িক পণ্ডিতেরা সহেতুক ও নির্হেতুক উপাধি প্রদানের দ্বারা ভক্তিকে বিভাগ করেন। নিগূঢ় বিচার করলে এই সমুদয় তর্কের পৰ্য্যবসান হয়। ভক্তিই জীবের স্বভাব ও জীবের সহিত সৃষ্ট হইয়াছে। জীব স্বতন্ত্রতার অসদ্ব্যবহার করত যখন পতিত হয় তখন নিজ স্বভাব গুপ্ত হইয়া যায়। স্বস্বভাবের প্রতি অমনোযোগ ঘটিলেই জীবের অনিত্য বিষয়ে ঐ ভক্তি ন্যস্ত হইয়া যায়। জীব তখন অহংকার মদ্য ইন্দ্রিয়সুখ প্রভৃতি বিষয়ে প্রেম করিতে থাকে। কখনো সাধুসঙ্গবশতঃ যদি ঐ পতিত জীবের জ্ঞানোদয় হয় তখন জীব স্বস্বভাব পরিত্যাগ জন্য অনুতাপ করত স্বীয় প্রেমকে সমুদয় অনিত্য বস্তু হইতে আকর্ষণ করিয়া নিত্য সত্য স্বরূপ পরমেশ্বরে অর্পণ করেন। ইহাতে দৃষ্ট হইতেছে যে, ভক্তি জীবের সহিত উৎপত্তি হইয়াছে। জ্ঞান ইহাকে উৎপত্তি করিতে সক্ষম নহে। তবে জ্ঞান ইহাকে জাগ্রত করে এই মাত্র। জ্ঞান ভক্তির দাস স্বরূপ; যখন জ্ঞান ভক্তির পরিচৰ্য্যায় নিযুক্ত থাকে তখন জ্ঞানের যথার্থ কর্ত্তব্য অনুষ্ঠিত হয়। ভক্তি যদি পতিত না হইত তবে জ্ঞানের কোন প্রয়োজন হইতে পারিত না। স্বীয় স্বাতন্ত্রের সদ্ব্যবহার জীব জ্ঞানের দ্বারাই করিয়া থাকেন অতএব জ্ঞান ভক্তির অনুরক্ষক ও সেবক। ভক্তি সর্ব্বকালেই সিদ্ধ কিন্তু যখন ভক্তি পতিত হইয়া জ্ঞানের সাহায্যে পুনরুত্থিত হয় তখন তাহাকে সাধ্যভক্তি কহি। ফলত সিদ্ধ ও সাধ্য ভক্তির প্রকার ভেদ নহে কেবল অবস্থা ভেদ মাত্র।

    যে প্রকারেই বিচার করা যায় ঈশ্বরের নিয়মই বলবান হইয়া উঠে। তরণী যোগে নদী পার হইলে যেমত নিয়মাবলম্বন হয়, কোন উপায় দ্বারা আকাশ পথে নদী উল্লঙ্ঘন করিলেও ঈশ্বরের নিয়ম প্রতিপালিত হইয়া থাকে। উপায় সাধনপূর্ব্বক ভক্তি অবলম্বন করাকে সাধ্য ভক্তি বলি অতএব ইহাও সত্য। এবং ভক্তি স্বতঃসিদ্ধ বৃত্তি ইহাতে ইহাকে সিদ্ধও বলা যায়। অতএব বৈষ্ণবগণ যাহা কহিয়াছেন তাহা সমুদয়ই সত্য। বৈষ্ণব বাক্য মিথ্যা হইবার সম্ভাবনা নাই। এবং বৈষ্ণব বাক্য যতদূর বিরোধী বোধ হউক না কেন উহাতে তটস্থ বিচার করিলে বিবাদ নাই। তবে যে অন্যান্য লোকে বৈষ্ণবগণের বিবিধ সম্প্রদায় সৃষ্টি করিয়া মতের বিরোধ থাকা প্রকাশ করেন সে কেবল অজ্ঞানতার ফল মাত্র। বৈষ্ণব ধৰ্ম্ম অনাদি ও অচ্যুত বিশ্বাস ও আত্ম প্রত্যয়ানুভব সম্ভুত। অতএব প্রকৃত প্রস্তাবে বৈষ্ণবদিগের কোন শাখা ভেদ বা মতভেদ স্বীকার করা যায় না। তবে ভাষাভেদ ও চিন্তার প্রণালীভেদ বশত কয়েকটী সম্প্রদায় দৃষ্ট হয়। বৈষ্ণবেরা যখন শ্রুতি, প্রত্যক্ষ, ঐতিহ্য ও অনুমান এই চারিটী প্রমাণের দ্বারা সমস্ত তত্ত্বের বিচার করিয়া কাৰ্য্য করেন ও মত নির্ণয় করেন তখন তাঁহাদের মতে স্বরূপ সত্যের অবস্থান স্বীকার করিতে হইবে। সাম্বন্ধিক সত্যকে তাঁহারা স্থান দান করেন না। কেবলমাত্র ধর্মশাস্ত্র অথবা যুক্তির দ্বারা যাঁহারা আচরণ করেন তাঁহাদের সহিত বৈষ্ণবদিগের বিশেষ ভেদ আছে। যেহেতু কেবল শাস্ত্রবাদী অথবা কেবল মুক্তিবাদী খণ্ড জ্ঞানী কহা যায় তাহার বিচার সমস্ত খণ্ড-জ্ঞান দোষে সর্ব্বদাই দূষিত থাকে

    এই সমুদায় প্রমাণ অবলম্বন পূৰ্ব্বক জীব যখন বিচার করেন তখন, তাঁহার অনিত্য বিষয়ে প্রেম দূরীভূত হয়। প্রথমে সত্ত্বগুণের সেবা অর্থাৎ স্বীয় স্বভাবকে সত্ত্ব গুণান্বিত করিয়া রজ ও তমগুণকে জয় করেন। এই কালেই বৈষ্ণবতার প্রবেশ বলিয়া স্বীকার করা যায়। সত্ত্বগুণ অবলম্বন পূৰ্ব্বক যখন ঐ সত্ত্বকে নিত্যানিত্য বিচারের দ্বারা নির্ম্মল করা যায় তখন বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণকে অবলম্বন করা হয়। কিন্তু বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণেও ঐশ্বৰ্য, বীৰ্য্য, যশঃ, শ্রী প্রভৃতি বৃহত্তত্ত্ব উপলব্ধি হয়। এই কালেই জীবের ঈশ্বর দাস্য হইল ইহাই বলিতে হইবে। যতকাল ঐশ্বৰ্য্য, বীৰ্য্য, যশ, শ্রী প্রভৃতি গুণে ভূষিত ঈশ্বরকে দৃষ্টি করা যায় ততকাল নিৰ্ম্মল সখ্য, বাৎসল্য ও মধুর ভাবের আস্বাদন সম্ভব হয় না। তখন ঈশ্বরের বৃহত্ত্বত্ত্ব ও স্বীয় ক্ষুদ্রত্ব আলোচনা জীবকে সভয় করিয়া তোলে। জীব ভয়ে ভয়ে যৎকিঞ্চিৎ প্রেমের সহিত ঈশ্বরের দাস্য করিতে থাকেন। এই প্রকার সেবা করিতে করিতে জীবের উন্নতিকাল উপস্থিত হইলে ঐশ্বর্য্য, বীৰ্য্য, যশঃ, শ্ৰী বিহীন, এক পরম শান্তমূৰ্ত্তি দ্বারা পরমেশ্বর জীবের সাক্ষাতে প্রাদুর্ভূত হন। ঐ পরম রমণীয় মূর্ত্তিই জগদীশ্বরের স্বস্বরূপ। তদ্দর্শনে জীব তন্মাধুর্য্যে আকৃষ্ট হইয়া তাঁহার সেবা করিতে থাকেন। ভয় ও কৃতজ্ঞতা ও সম্মান প্রভৃতি বৃত্তি সকল তিরোহিত হইল। পরম সখ্যের উদয় হইয়া জীব পরমেশ্বরকে স্বীয় সখা বলিয়া জানিতে পারেন। এই প্রকার সখ্যভাবে জীব কিয়দ্দিবস থাকিতে থাকিতে উন্নতির যোগ্য হন। পরে সখ্যরসেও যে ভারী বিচ্ছেদের আশঙ্কা থাকে তাহা দূরীভূত হইয়া যায়। বাৎসল্যরূপ পরম সখ্যরসের উদয় হয়। তখন জীব দেখেন যে পরমেশ্বর নিতান্ত আপনার। এই রসটিতে জীবের তৃপ্তি হইলে সার রসযুক্ত মধুর ভাবের উদয় হয়। তখন জীব জগদীশ্বরের নিরন্তর স্পর্শানন্দ ও অকুণ্ঠ প্রেম প্রাপ্ত হন। এই প্রেমে অনন্ত ভাব সকল থাকায় চরমত্ব সম্ভব হয় না। উন্নতি, উন্নতি মহোন্নতি এইপ্রকার ভাবে অনন্তকাল পর্য্যন্ত থাকিতে হয়।

    কৃষ্ণবপুই এই মহাভাব পৰ্য্যন্ত রাগানুগা ভক্তির আলম্বন। যেহেতু কৃষ্ণস্বরূপই জগদীশ্বরের স্বরূপ। ঐ স্বরূপে ঐশ্বৰ্য্যরূপ বৃক্ষের আশ্রয় হইলেই নারায়ণ স্বরূপ হইয়া থাকে। অধিকারী ভেদে নারায়ণও জীবের উপাস্য যেহেতু তিনি পরব্যোমস্থিত পরব্রহ্ম। ঐ নারায়ণ ধামের বহির্ভাগে অপ্রাকৃত জ্যোতির্ম্ময় স্বরূপ এক ব্ৰহ্ম-ধাম আছে। ব্ৰহ্মকে যাঁহারা উপাসনা করিয়া থাকেন তাঁহারা অরসিক যেহেতু পার্থিব ঐশ্বর্য্যের ভাবে মুগ্ধ হইয়া পরমজ্যোতির অন্বেষণ করতঃ ঐ জ্যোতিতে পার্থিব ভাবেরই সাধনা করেন। ফলতঃ তাঁহাদের ভগবৎ সাধন হয় না। সুতরাং সংসার পরিত্যাগরূপ স্বপদত্ব তাঁহাদের পক্ষে সুদুর্ল্লভ। তবে ভাগ্যবান পুরুষেরা ব্রহ্মকে ভেদ করিয়া পরব্যোমধামে প্রবেশ করতঃ নারায়ণের উপাসনা করিয়া থাকেন। যদিও পরমেশ্বর একমাত্র দ্বিতীয় রহিত এ বিধায় তাঁহার ধামসকল এবং রূপসকলের ভেদ অযুক্ত বোধ হয় তথাপি বিচার করিলে এই ধাম ও রূপসকলের ভেদ দৃষ্ট হইবে। মানব যতই উন্নত হইতে থাকেন তাঁহার সহিত তাঁহার আত্মারাম ঈশ্বর ও কলেবর পরিবর্ত্তন করেন, ইহাই স্বরূপ সত্য। আত্মাই চিন্তামণি ধাম, ঐ ধামের রূপ পরিবর্ত্তনের সহিত ঐ ধামস্থ ঈশরের রূপ পরিবর্ত্তন হইতে হইতে যখন অত্যুচ্চ ধামকে প্রাপ্ত হওয়া যায় তখন কৃষ্ণবপুই দৃষ্ট হয়। মানব যতই জ্ঞানের চালনা করিতে থাকে ততই ঈশ্বর ভাবের নির্ম্মলতা হইয়া উঠে। অতএব সত্বগুণাধিষ্ঠিত বিষ্ণু হইতে মহাভাবের আলম্বন শ্রীকৃষ্ণের পরম অপ্রাকৃত রূপ পৰ্য্যন্ত চিন্তার নির্ম্মলতা হইতে পারে। যাঁহারা আত্ম প্রত্যয়রূপ অনুভবানন্দকে উপলব্ধি ও বিচার করিতে সক্ষম হন তাঁহারা ক্রমে ক্রমে কৃষ্ণতত্ত্ব অবগত হইতে পারেন। ইহাই জগদীশ্বরের অলঙ্ঘ্য নিয়ম। এই নিয়ম অতিক্রম করা কাহারও সাধ্য নহে। যাঁহারা এই নিয়মের অতিক্রম করিয়াছেন তাঁহারা অধোগমন করিয়াছেন ইহাই বলিতে হইবে। ইহার উদাহরণ অসংখ্য। প্রাকৃতাপ্রাকৃত ভেদ বিচার করিতে সক্ষম না হইয়া যাঁহারা শ্রীকৃষ্ণ তত্ত্ব সাধনে প্রবৃত্ত হয় তাহারা লম্পট চরিত্র হইয়া নিতান্ত অপকৃষ্টপদ প্রাপ্ত হয়। সংসার হইতে বিরাগী না হইয়াই যদি কেহ পরব্রহ্মের সাধনে প্ৰবৰ্ত্ত হয় সে কেবল বর্ণাশ্রমের ব্যাঘাৎ করিয়া ভক্তি ব্রাহ্ম সংজ্ঞা প্রাপ্ত হয়। কিন্তু প্রকৃত ব্রাহ্মেরা নারায়ণদাস হইতে যদিও স্বভাবত হীন-পদস্থ তথাপি তাঁহারা স্বীয় অধিকারে পূজ্য হন

    দেবতারা এই সমস্ত বিচারের দ্বারা সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন যে বিশুদ্ধ সত্ত্ব নারায়ণবপু যদিও সাক্ষাৎ কৃষ্ণ বপু নহে যেহেতু উহা ঐশ্বর্য্য প্রভৃতির দ্বারা আচ্ছাদিত তথাপি জগদীশ্বরের ক্রমশোন্নতি নিয়মাবলম্বন করার প্রয়োজনে নারায়ণবপুও জগতের পূজ্য যেহেতু উহাতেই অজ্ঞান নিবৰ্ত্তক বিজ্ঞান সাধ্য হয়। ঐ অপূর্ব্ব নারায়ণবপুও পরমেশ্বর কৃষ্ণকে প্রকাশ করে যেহেতু গুণ প্রকাশের দ্বারা জগদীশ্বর অনুভূত হন। নারায়ণ দর্শনে ইহাই প্রতিপন্ন হয় যে নারায়ণ স্বরূপ বিশুদ্ধ সত্ত্বগুণও শ্রীকৃষ্ণের গুণ বই আর কিছুই নহে অথবা শ্রীকৃষ্ণ ঐশ্বর্য্য প্রভৃতি গুণারূঢ় হইয়া নারায়ণরূপে বিলাস করিতেছেন।১০।

Page execution time: 0.0319049358368 sec