কথাসার—এই পরিচ্ছেদে শ্রীচৈতন্যাবতারের হেতু বিচারিত হইয়াছে। কৃষ্ণলীলার অন্তে সেই লীলায় দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, শৃঙ্গাররূপ চারিরসের যে প্রাকট্য, তাহা জগতে আস্বাদনের বিষয় কিরূপে হয়, এই চিন্তা করিয়া শ্রীকৃষ্ণ ঐ প্রেমভক্তিবিষয়ক রসসমূহের আস্বাদন-প্রক্রিয়া জগৎকে দেখাইবার জন্য স্বয়ং ভক্তরূপে অবতীর্ণ হন। নামসঙ্কীৰ্ত্তন কলিযুগের প্রধান ধৰ্ম্ম, তাহা যুগাবতারই প্রকাশ করিতে পারেন, কিন্তু পূর্বোক্ত চারিরসের প্রেমভক্তি সাক্ষাৎ কৃষ্ণচন্দ্র ব্যতীত কোন অংশাদি অবতারেরই দান করিবার ক্ষমতা নাই। এইজন্য সাক্ষাৎ কৃষ্ণচন্দ্র নবদ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন। সাক্ষাৎ কৃষ্ণ যে জন্মগ্রহণ করিবেন, তাহার প্রমাণস্বরূপ ভাগবত-বচনাদি উদ্ধার করিয়াছেন। মহাপুরুষের লক্ষণদ্বারা চৈতন্যের সাক্ষাৎ ভগবত্তা স্থাপন করিয়াছেন। আরও দেখাইয়াছেন যে, কৃষ্ণচৈতন্য অঙ্গোপাঙ্গ অর্থাৎ অদ্বৈত, নিত্যানন্দ ও শ্রীবাসাদি ভক্তবৃন্দের সহিত অবতীর্ণ হইয়া জগতে হরিভক্তি প্রচার করিয়াছেন। চৈতন্যাবতার জগতে সর্ব্বাবতার অপেক্ষা উপাদেয়, অতএব গৃঢ়। তিনি একমাত্র ভক্তিব্যঙ্গ্য অর্থাৎ ভক্ত তাঁহাকে ভক্তিদর্শনে দেখিবার যোগ্য হন। তাঁহার সেই উপাদেয় তত্ত্ব গোপনে রাখিবার জন্য তিনি অনেক যত্ন করেন, কিন্তু পরম ভক্তদিগের নিকট তিনি প্রকাশিত হইয়া পড়েন। বেদ-পুরাণাদি শাস্ত্রে তাঁহাকে গোপন রাখিবার জন্য কেবল ইঙ্গিতবাক্যদ্বারা তাঁহার ভাবী উদয়ের উল্লেখ আছে। তাহাতে তাঁহার ছন্নাবতারের গূঢ়তা ও বিশেষ উপাদেয়তাই স্পষ্টীকৃত হয়। অদ্বৈতাচার্য্য গুরুবর্গের সহিত প্রকট হইয়া দেখিলেন যে,—জগৎ অতিশয় কৃষ্ণভক্তিহীন হইয়াছে, এ অবস্থায় কোন অংশাবতার অবতীর্ণ হইয়া জগন্মঙ্গল সাধন করিতে পারিবেন না, সাক্ষাৎ কৃষ্ণকে অবতীর্ণ করাইতে পারিলে জগতের কল্যাণ হইবে। এই বিচারে জলতুলসী কৃষ্ণপাদপদ্মে দিয়া তিনি নিরুপাধিক কৃষ্ণতত্ত্বকে অবতীর্ণ করাইবার জন্য হুঙ্কার করিতে লাগিলেন। শুদ্ধ সরলভক্তের প্রার্থনায় কৃষ্ণ তাঁহার ধ্যেয় পরমস্বরূপ প্রকট করিয়া থাকেন, সুতরাং শুদ্ধভক্ত অদ্বৈত আচার্য্যের প্রেমহুঙ্কারে জগৎকে প্রেম-দান করিবার জন্য গৌরাঙ্গ অবতীর্ণ হইয়াছেন। (অঃ প্রঃ ভাঃ)