দোষ-চতুষ্টয়-রাহিত্যই মুক্তবাক্যের লক্ষণ ও বিশেষত্ব :—
ভ্রম, প্রমাদ, বিপ্রলিপ্সা, করণাপাটব ৷
আর্ষ-বিজ্ঞবাক্যে নাহি দোষ এইসব ৷৷ ৮৬ ৷৷
৮০-৮৬।“এতে চাংশকলাঃ” শ্লোকে ‘এতে’-শব্দে অবতারগণ তাহার অনুবাদ হইয়াছে । তাঁহারা যে পুরুষাবতারের অংশ, তাহাই পূৰ্ব্ব অপরিজ্ঞাত বিধেয়-সংবাদরূপে পরে বলা হইল । ঐ পদ্যে কৃষ্ণকে অবতারের মধ্যে জানা গেল । কিন্তু কৃষ্ণের বিশেষ জ্ঞান অবিজ্ঞাত থাকায় বিধেয়-সংবাদ উপস্থিত হইল । এইজন্যই কৃষ্ণ-শব্দ আগে অনুবাদ কহিয়া, কৃষ্ণ যে ‘স্বয়ং ভগবান্’ ইহাই তাঁহার বিধেয় । কৃষ্ণ যে স্বয়ং ভগবান্—ইহাই এস্থলের সাধ্য সংবাদ অর্থাৎ বিচারদ্বারা ইহা সাধিত হইবে । সুতরাং ‘কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্’ এই কথায় ‘কৃষ্ণই স্বয়ং ভগবান্’ এই অর্থ বাধ্য হইল অর্থাৎ এই অর্থ ব্যতীত অন্য অর্থ হইতে পারে না । যদি নারায়ণ অংশী এবং কৃষ্ণ অংশ হইতেন, তাহা হইলে সূতবাক্য বিপরীত হইত । অর্থাৎ “স্বয়ং ভগবান্ কৃষ্ণ” এইরূপ বিপরীত অর্থ হইত ; কিন্তু আর্ষ অর্থাৎ ঋষিকৃত বিজ্ঞবাক্যে ভ্রম, প্রমাদ, বিপ্রলিপ্সা ও করণাপাটব—এই চারিটী দোষ না থাকায় ‘কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্’ লিখিয়াছেন । ভ্রম—মিথ্যাজ্ঞান; প্রমাদ—অনবধানতা ; বিপ্রলিপ্সা—চিত্তের অন্যত্র বিক্ষেপ ; করণাপাটব—ইন্দ্রিয়গণের অপটুতা ।
৮৬। ভ্রম—যে বস্তু যাহা নহে, তৎসম্বন্ধে মিথ্যাজ্ঞান ; যথা—রজ্জুতে সর্পভ্রম, শুক্তিতে রজতভ্রম । প্রমাদ—অনবধানতা, এককথা অন্যপ্রকারে উপলব্ধি করা বা শ্রবণ করা বা বলা । বিপ্রলিপ্সা—বঞ্চনেচ্ছা । করণাপাটব—ইন্দ্রিয়ের অপটুতা ; যথা—চক্ষুর দূরদর্শন-রাহিত্য, ক্ষুদ্রবস্তুদর্শন-রাহিত্য, কাম্লাদিরোগে বর্ণ (রূপ)-জ্ঞানের বিপর্য্যয়, (কর্ণের) সুদূরস্থিত শব্দশ্রবণে অক্ষমতা ।