পৃথ্বী যৈছে ঘটকুলের কারণ আশ্রয় ৷
জীবের নিদান তুমি, তুমি সর্ব্বাশ্রয় ৷৷ ৩৭ ৷৷
প্রাকৃত সৃষ্টি মায়া প্রকৃতির অন্তর্গত। “ভূমিরাপোঽনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ । অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।। অপরেয়ং” ইতি—এই গীতা (৭।৪-৫) বাক্যে মন, বুদ্ধি, অহঙ্কাররূপ লিঙ্গজগৎ ভূম্যাদি পঞ্চমহাভূতরূপ সকলই মায়িক অথবা প্রাকৃত । শুদ্ধজীব ও চিজ্জগৎ অপ্রাকৃত । সেই প্রাকৃতাপ্রাকৃত জগদ্দ্বয়ে বদ্ধ ও শুদ্ধ উভয়প্রকার জীবের তুমি আত্মা, অতএব মূলস্বরূপ । ঘটসমূহের পৃথিবী যেমত কারণ ও আশ্রয়, তদ্রূপ জীবের তুমি একমাত্র নিদান অর্থাৎ কারণ এবং আশ্রয় ।
যেরূপ ব্যাপক মৃত্তিকা ব্যাপ্য বিবিধ ঘটের উপাদান-কারণ, তদ্রূপ অদ্বয়জ্ঞান ভগবদ্বস্তু হইতে নিখিল জীবকুল ঘটের ন্যায় নিত্যপ্রকটিত । জীবের কারণরূপে সেই সৰ্ব্বকারণকারণ ভগবান্ সৰ্ব্বদা অধিষ্ঠিত । “নিত্যো নিত্যানাং চেতনশ্চেতনানাং”
—এই শ্রুতি পরতত্ত্বকেই সকল বস্তুর আশ্রয়রূপে নির্দ্দেশ করে ।
বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী বেদান্তপ্রতিপাদ্য-নিরূপণে বলেন যে, যেরূপ সূক্ষ্মদেহ ও স্থূলদেহের দেহী জীব ত্রিবিধ অবস্থানে পরিদৃষ্ট, তদ্রূপ ভগবৎস্বরূপ হইতে স্বতন্ত্রভাবে চিৎ ও অচিৎ জগৎ—দ্বিবিধ অবস্থানে প্রকাশিত হইয়া তাঁহারই অদ্বয়বৈশিষ্ট্য স্থাপন করিতেছ । চিজ্জগৎ ভগবৎপরিকরে পূর্ণ, আর অচিজ্জগৎ ভগবদ্বিমুখ বদ্ধ-জীবের ভোগ্যভূমি । ভগবানের অন্তরঙ্গা শক্তি পরিকরবৈশিষ্ট্যের কারণ ; ভগবানের বহিরঙ্গা শক্তি প্রাকৃতগুণজাত জগৎ সৃষ্টি করিয়াছেন । প্রাকৃত জগৎ ভগবানের স্থূল বাহ্যাঙ্গ, আর জীবজগৎ ভগবানের সূক্ষ্মাঙ্গ । ভগবান্ এই উভয়বিধ অঙ্গের অঙ্গী । গৌড়ীয়-দর্শন স্বরূপশক্তিমত্তত্ত্ব, চিচ্ছক্তি ও অচিচ্ছক্তি-পরিণত জগদ্দ্বয়ের যুগপৎ কারণ-কার্য্যে অচিন্ত্যভেদাভেদ স্থাপন করিয়াছে ।