শ্রীমদ্ভাগবত (১।২।১১)—
বদন্তি তত্তত্ত্ববিদস্তত্ত্বং যজ্জ্ঞানমদ্বয়ম্ ৷
ব্রহ্মেতি পরমাত্মেতি ভগবানিতি শব্দ্যতে ৷৷ ১১ ৷৷
তত্ত্ববিদ্গণ অদ্বয়জ্ঞানকে তত্ত্ব বলেন। সেই অদ্বয়জ্ঞানের প্রথম প্রতীতি—ব্ৰহ্ম, দ্বিতীয় প্রতীতি—পরমাত্মা ও তৃতীয় প্রতীতি—ভগবান্।
শৌনকাদি ঋষিগণ শুকদেবের শিষ্য সূতকে ছয়টী প্রশ্ন করেন। ‘শাস্ত্রের সারতত্ত্ব কি?’ এই দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে এই শ্লোক,—
তত্ত্ববিদঃ (তত্ত্বজ্ঞাঃ) তৎ [এব] তত্ত্বম্ অদ্বয়ং জ্ঞানং (চিদেকরূপং) বদন্তি । যৎ [ অদ্বয়জ্ঞানং ক্বচিৎ ] ব্ৰহ্ম ইতি, [ ক্বচিৎ ] পরমাত্মা ইতি, [ক্বচিৎ] ভগবান্ ইতি চ শব্দ্যতে (অভিধীয়তে ; অয়মর্থঃ—কেবলজ্ঞানবৃত্ত্যা অদ্বয়জ্ঞানরূপং ব্রহ্ম, সচ্চিদ্বৃত্ত্যা অদ্বয়জ্ঞানরূপঃ পরমাত্মা, সচ্চিদানন্দবৃত্ত্যা তদদ্বয়জ্ঞানরূপো ভগবান্)।
ভগবদ্ভক্তগণ ব্রজেন্দ্রনন্দনকেই অদ্বয়জ্ঞানবিগ্রহ জানেন ; কৃষ্ণের নাম, রূপ, গুণ ও লীলায় দ্বিতীয়াভিনিবেশ করেন না । অপ্রাকৃত নাম, রূপ, গুণ ও লীলার সহিত কৃষ্ণে পার্থক্য-বুদ্ধি করিলে বিষ্ণুকলেবরে প্রাকৃত বুদ্ধি হয়, উহাই অদ্বয়জ্ঞানের অভাব । কৃষ্ণেতর অবিষ্ণুবস্তুতে অদ্বয়জ্ঞানের অভাববশতঃ কৃষ্ণেতর বস্তু কৃষ্ণ হইতে অর্থাৎ অদ্বয়জ্ঞান হইতে মায়া বা অজ্ঞানদ্বারা স্বতন্ত্র হইয়া মায়িক বশযোগ্যতা লাভ করায় মায়াবশ বা দ্বৈতজ্ঞানের অধীন। কৃষ্ণবস্তুর যাবতীয় প্রকাশ ও বিলাসমূর্ত্তিসকলে দ্বিতীয়জ্ঞান নাই, সুতরাং তাঁহারা বিষ্ণুতত্ত্ব বলিয়া মায়াধীশ। যোগিগণ অদ্বয়জ্ঞান-বিগ্রহ পরমাত্মার সহিত শুদ্ধাত্মার অবিমিশ্র কেবল যোগকেই দ্বিতীয়জ্ঞানরহিত অবস্থা জানেন। জ্ঞানিগণ স্বগত-সজাতীয়-বিজাতীয়-ভেদহীন নির্ব্বিশেষ জ্ঞানকেই অদ্বয়জ্ঞান ব্ৰহ্ম জানেন । (ভাষ্যকারকৃত ভাগবতের গৌড়ীয়ভাষ্য দ্রষ্টব্য ।)