শ্রীমদনমোহন, শ্রীগোবিন্দদেব ও শ্রীগোপীনাথ—এই তিন ঠাকুর বৃন্দাবনের অধিদেব, গৌড়ীয় ভক্তগণকে নিজ নিজ সেবায় অধিকার দান করিয়া আপনার নিজজন করিয়াছেন।
গৌড়ীয়ের অভীষ্ট আরাধ্য-বিগ্রহত্রয় :—
এই তিন ঠাকুর গৌড়ীয়াকে করিয়াছেন আত্মসাৎ ।
এ তিনের চরণ বন্দোঁ , তিনে মোর নাথ ॥ ১৯ ॥
গৌড়ীয় বৈষ্ণবের সেব্য অষ্টাদশাক্ষরমন্ত্রের নির্দিষ্ট কৃষ্ণই মদনমোহন, গোবিন্দই গোবিন্দ এবং গোপীজনবল্লভই গোপীনাথ। মদনমোহন-কৃষ্ণানুভবই সম্বন্ধ। গোবিন্দসেবাই অভিধেয় এবং গোপীজনবল্লভকর্ত্তৃক আকৃষ্টিই প্রয়োজন । শ্ৰীমন্মহাপ্রভুর উপদিষ্ট সম্বন্ধাভিধেয়-প্রয়োজন-তত্ত্বত্রয়াশ্রয় ভগবদ্বিগ্রহ এই তিন ঠাকুর শ্রীবৃন্দাবনের অধিদেব।‘গৌড়ীয়’-শব্দে গৌড়-দেশীয়। হিমালয়ের দক্ষিণে বিন্ধ্যের উত্তরাংশ ভারতবর্ষকে ‘আর্য্যাবর্ত্ত’ বলে। তথায় পঞ্চ গৌড়দেশ —যথা, সারস্বত, কান্যকুব্জ, (লক্ষ্মণাবতী) মধ্যগৌড়, মৈথিল ও উৎ কল প্রদেশ। বঙ্গদেশকে অনেকে গৌড়দেশ বলেন; বিশেষতঃ বঙ্গদেশের রাজধানীর ‘গৌড়' আখ্যা ছিল। উহাই পূৰ্ব্বে গৌড়পুর, পরে শ্রীমায়াপুর-নামে প্রসিদ্ধ। উৎকলদেশীয় ভক্তগণকে যেমন উড়িয়াভক্ত এবং দ্রাবিড়দেশীয় ভক্তগণকে যেমন দ্রাবিড়ী ভক্ত বলা হয়, তদ্রপ বঙ্গদেশীয়গণও গৌড়ীয়ভক্ত বলিয়া সংজ্ঞিত হন। আবার দাক্ষিণাত্যও পঞ্চদ্রাবিড়-সংজ্ঞায় পরিচিত। সাম্প্রদায়িক বৈষ্ণবাচাৰ্য্যগণ চারিজনেই দ্রাবিড়দেশে জন্মগ্রহণ করেন। শ্রীরামানুজাচার্য্য দক্ষিণান্ধ্রপ্রদেশে মহাভূতপুরীতে, শ্রীমধ্বাচার্য্য ম্যাঙ্গালোর জিলার বিমানগিরি-সমীপে ‘পাজকম’-ক্ষেত্রে, নিম্বাদিত্য দক্ষিণাপথের মুঙ্গেরপত্তন গ্রামে এবং শ্রীবিষ্ণুস্বামী পাণ্ড্যদেশে জন্মগ্রহণ করেন। শ্ৰীমন্মহাপ্রভু যদিও শ্রীমাধ্ব-সম্প্রদায় স্বীকার করিয়াছেন, তথাপি মাধ্বমতস্থ তত্ত্ববাদশাখাবলম্বী বৈষ্ণবাচাৰ্য্যগণ দ্রাবিড়ীয়। তজ্জন্য শ্রীগৌর পদাশ্রিত সম্প্রদায়ের গৌড়ীয় আখ্যা। বিশেষতঃ শ্রীআনন্দতীর্থ পূর্ণপ্রজ্ঞ মধ্বাচার্য্যের অপর নাম শ্রীগৌড়পূৰ্ণানন্দ। তজ্জন্যও শ্রীগৌরভক্তগণ মাধ্ব-গৌড়ীয়-শব্দে সংজ্ঞিত হইতে পারেন।