দেখিয়া তোমার দু:খ শ্রীবৈকুণ্ঠ হইতে।
আবির্ভাব হইলাম তোমার দেহেতে ॥
শ্রীদেবানন্দ পণ্ডিতের টোলবাড়ী তৎকালে কুলিয়ায় অবস্থিত ছিল। কুলিয়া-নবদ্বীপের উপকণ্ঠে গঙ্গার পশ্চিম-তটে অবস্থিত উপনগরী। গঙ্গার পূর্বপারে শ্রীমায়াপুরে তৎকালে শ্রীনবদ্বীপ-নগর অবস্থিত ছিল। বর্তমান সহর নবদ্বীপই—প্রাচীন কুলিয়া। উহার অপরাধভঞ্জনের পাট। কাঁচরাপাড়ার নিকট, চুঁচুড়া-নিবাসী মাধব দত্তের স্থাপিত কুলিয়া-গ্রামকে কেহ কেহ দেবানন্দ পণ্ডিতের কুলিয়া-গ্রাম বলিয়া ভ্রান্ত হন। আমাদ-কোল, কোলের গঞ্জ, কোলের দহ, গদখালির কোল প্রভৃতি প্রাচীন কুলিয়ার নাম-সমূহ আজও বর্তমান সহরের স্থানে স্থানে সেই নিদর্শন রক্ষা করিতেছে। সাতকুলিয়া বা ধোপাদি-গ্রামকে কেহ কেহ কুলিয়া নির্দেশ করিয়া বিষম ভ্রমে পতিত হন। সাতকুলিয়া—গঙ্গার পূর্বপারে অবস্থিত। কিন্তু শ্রীচৈতন্যচন্দ্রোদয় নাটক ও শ্রীচৈতন্যচরিতমহাকাব্য যাঁহারা অধ্যয়ন করিয়াছেন, তাঁহারা সকলেই জানেন, —কুলিয়া-গ্রাম গঙ্গার পশ্চিমতীরে অবস্থিত। সাতকুলিয়ার পূর্বে গঙ্গা ও তাহার পূর্বে শ্রীমায়াপুর অবস্থিত না হওয়ায় সাতকুলিয়াকে ‘কুলিয়া’ বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে না। বর্তমান রামচন্দ্রপুর ক্যাঁকড়ার মাঠের পশ্চিমাংশে গঙ্গানদীর প্রাচীন খাত হওয়া আবশ্যক এবং তাহার পশ্চিমাংশে কুলিয়া-গ্রামের কোন নিদর্শন না থাকায় রামচন্দ্রপুর প্রভৃতি স্থান মোদদ্রুমের অন্তর্গত বলিয়া সুধীগণ বিচার করিয়া থাকেন। ঈর্ষাপরায়ণ ভক্তিদ্বেষী সাহিত্যিককল্প কতিপয় ব্যক্তি পৈশুন্য-মূলে যে প্রাচীন নদীয়ার অবস্থান মীমাংসা করেন, উহার মূল্য অর্ধ কপর্দক ও নহে।