বিষয়মান্ধ সব কিছুই না জানে।
বিদ্যামদে ধনমদে বৈষ্ণব না চিনে ॥
আধ্যাক্ষিক জ্ঞান শ্ৰুতিকথিত বিদ্যা-ভেদ বুঝিতে অসমর্থ। ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব-এই বেদ-চতুষ্টয় বেদানুগ বিবিধ শাস্ত্রসমূহ এবং আয়ুর্বেদ, ধনুর্বেদ ও শিক্ষাদি ষড়ঙ্গ প্রভৃতিকে যাঁহারা লৌকিক ভোগতাৎপর্যে নিযুক্ত করেন, তাঁহারাই অজ্ঞরূঢ়িবৃত্তির আশ্রয়ে অপরা বিদ্যানুশীলনের পক্ষপাতী। আর যাঁহারা অপরা বিদ্যার হস্ত হইতে বিমুক্ত হইয়া শব্দের বিদ্বদ্রূঢ়ি-বৃত্তির অনুগমন করেন, তাঁহারা পরবিদ্যার সেবক-সূত্রে বিদ্যা-মদে আচ্ছন্ন হন না। যাঁহারা অণিমাদি-সিদ্ধি-সমূহের লাভে উৎকণ্ঠিতচিত্ত, সেই অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিগণই ধনমদে ব্যস্ত। ধনাদির বিনিময়ে ইন্দ্রিয়জ সুখ লাভ ঘটে, তাদৃশ ইন্দ্রিয়সমূহ ক্ষণভঙ্গুর ও পূর্ণ বিনিময় গ্রহণে অসমর্থ। তজ্জন্য ভক্তিপথের পথিক বৈষ্ণবগণ বিদ্যা, ধন, রূপ, যশঃ ও কুলমদে অন্ধ হইয়া ঐ সকল বিষয়ানুসন্ধানে আত্ম-নিয়োগ করেন না। কিন্তু মন্দভাগ্য, অভাবগ্রস্ত, ত্রিগুণ-তাড়িত, মায়া-দ্বারা বিক্ষিপ্ত চিত্ত ও আবৃত বদ্ধজীবগণ বাহ্য পরিচয়ে সুনিপুণ অভিমানপূর্বক বিষয়-মদান্ধ হইয়া বৈষ্ণবের অতীব উচ্চ পদবীর মহিমা বুঝিতে পারে না। তাহারা মনে করে যে, বিষ্ণুভক্তগণ যেহেতু তাহাদের ন্যায় বিষয়-মান্ধ নহেন, সুতরাং নির্বোধ; এইরূপ মনে করিয়া তাহারা বৈষ্ণবগণকে সম্মানের পাত্র না জানিয়া নিজাপেক্ষা হীন জ্ঞান করে। তাহাদের নির্মল জীবাত্মা-বৃত্তিতে কোন দোষ-স্পর্শের সম্ভাবনা না থাকিলেও ঔপাধিক অজ্ঞান-মদোন্মত্ততা তাহাদিগকে সকল বিষয়েই দোষী করে। ঐ বেচারাদের দোষ নাই,—দোষ কেবল তাহাদের বুদ্ধির অবিশুদ্ধতার।