যত দেখ বৈষ্ণবের ব্যবহার দুঃখ।
নিশ্চয় জানিহ সেই পরানন্দসুখ ॥
ভজনপরায়ণ ভক্তের বাহিরে ঐশ্বর্যের পরিবর্তে অভাব, স্বাস্থ্যের পরিবর্তে অস্বাস্থ্য, ধনের পরিবর্তে দারিদ্র্য, পাণ্ডিত্যের পরিবর্তে মুর্খতা দেখিয়া, কর্মফলবাদীর ন্যায় বৈষ্ণবও নানাবিধ অভাবপীড়িত এবং ব্যবহারিক কনক-কামিনীপ্রতিষ্ঠাশা-বিশিষ্ট মনে করিয়া যাঁহারা বৈষ্ণবগণকে ‘দুঃখী’ জ্ঞান করেন, তাঁহাদিগকে মতিভ্রষ্ট জানিতে হইবে। কায়স্থকুলাব্জ-ভাস্কর-পরিচয়ে পরিচিত শ্রীদাস গোস্বামী প্রভুও কোন দিনই ব্যবহারিক দুঃখে দুঃখিত হইয়া সৌজন্য পরিত্যাগপূর্বক ব্রহ্মজ্ঞ পণ্ডিতের অসম্মান করেন নাই । দবিরখাস ও সাকরমল্লিক যবনাধিকারীর ভৃত্যকার্য করায় ব্যবহারিক দুঃখে-দুঃখিত না হইয়া শ্রীচৈতন্যচরণ-সেবায় মগ্ন ছিলেন বলিয়া আধ্যক্ষিকগণ তাঁহাদিগকে ‘ব্যবহার-দুঃখ পীড়িত’ বলিয়া মনে করে।
ঠাকুর হরিদাস যবন-কুলোদ্ভূত হওয়ায় এবং ঠাকুর উদ্ধারণ দত্ত সুবর্ণবণিক্-কুলে উদ্ভূত হওয়ায় কোন দিনই ব্যবহারিক দুঃখে দুঃখিত ছিলেন না। তাঁহারা সর্বদাই হরিসেবানন্দে ব্যস্ত থাকায় দুঃখ-ভার পীড়িত জনগণের ন্যায় দুঃখাভিভূত হইবার অবকাশ পান নাই।
যাহা যাহা কর্মকাণ্ডী ও জ্ঞানকাণ্ডিগণের বিচারে দুঃখ বলিয়া অনুমিত হয়, তৎসমস্তে কৃষ্ণের অভিপ্রায়োত্থ সম্বন্ধ বুঝিতে পারিলে উহা পরানন্দসুখের কারণ বলিয়া প্রতিভাত হয়। এই জন্যই শ্রীগৌরসুন্দর “নাহং বিপ্রো ন চ নরপতিঃ” শ্লোকের অবতারণা করিয়া সুখ-দুঃখ-মিশ্রসোপানে অস্মিতা-স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা প্রচার করিয়াছেন। আত্মবিদের অনাত্ম-প্রতীতিজনিত দুঃখের আবাহন-সম্ভাবনা নাই।