চারি প্রহর রাত্রি নিদ্রা নাহি কৃষ্ণনামে।
সর্বরাত্রি ‘হরি’ বলে দীর্ঘল আহ্বানে ॥
শ্রীধর নিশাকালের সকল সময় উচ্চৈঃস্বরে কৃষ্ণনাম উচ্চারণ করিয়া পল্লীবাসিগণের নিদ্রাসুখ-ভোগের ব্যাঘাত করিতেন। বর্তমানকালে শুদ্ধভক্তগণের নামপ্রচারফলে বহির্মুখ সাহিত্যিকম্মন্য জগৎ ভগবদ্ভক্তর শ্রীমুখোচ্চারিত নামকীর্তন শুনিয়া যেরূপ বিরক্ত হয়, অসুবিধার কথা জানাইতে না পারিয়া তদ্রূপ নানাবিধ উপদ্রবও করে। কেহ বা বিষয়-ফল-লাভের উদ্দেশে ইন্দ্রিয় তর্পণ-বাসনায় লোকপ্রতারণা কল্পে ভাগবত পাঠ ও ভগবৎকথা কীর্তনমুখে অর্থোপার্জন, সুর-তাল-মান-লয়-যোগে কীর্তন পারিপাট্যদ্বারা জীবিকা নির্বাহ প্রভৃতি অপকর্ম করিবার যোগ্যতা ও শুদ্ধভক্তগণের সমতা প্রদর্শন করিয়া থাকেন। বুদ্ধিমন্ত জনগণ তাঁহাদের কপটতা ও অসস্টেষ্টারূপ খলতা ধরিয়া ফেলিতে পারেন। ভগবদ্ভক্তগণের কীর্তনের উদ্দেশ্য—কৃষ্ণকে আর্তস্বরে ডাকিয়া নিজ মঙ্গল ও বহির্মুখ জগতের কল্যাণ সাধন, আর কপটগণের উদ্দেশ্য—নামকীর্তন, বক্তৃতা, পাঠ ও রসগান ছলনায় নিজ-জড়েন্দ্রিয়তর্পণ। সুতরাং অধোক্ষজ সেবক ও আধ্যক্ষিক ইন্দ্রিয়-তর্পণকামি-সম্প্রদায়ের আনুষ্ঠানিক ক্রিয়ায় স্বর্গ-নরকের ভেদ বর্তমান।
দীর্ঘল,-—দীর্ঘ + ল (অস্তার্থে) দৈর্ঘ্যযুক্ত, দীর্ঘসাধ্য।