সে অধম সবারে না দিমু প্রেমযোগ ।
নগরিয়া প্রতি দিমু ব্ৰহ্মাদির ভোগ ॥
বিদ্যামদ, ধনমদ, কূলমদ, জ্ঞানমদ, তপোমদগ্রস্ত ব্যক্তিগণের ভগবদ্ভক্তের নিকট অপরাধ থাকে ।ইহারা বৈষ্ণবাপরাধী বলিয়া কৃষ্ণপ্রমের অধীকারী নহে ।ব্রহ্মাদির লভ্য ভগবৎপ্রেম আমি শ্রীমায়াপুর-নবদ্বীপবাসী প্রত্যেক জনকে প্রদান করিব ।মানবগণ অপেক্ষা দেবগণ ভগবানের অধিক প্রিয় ।প্রাপঞ্চিক অধিকারসমূহ দেবগণের স্বরূপগত পরিচয় নহে ।সকল দেবী ভগবদারাধনা করেন এবং তাঁহাদের ভগবদ্বিষয়ে প্রীতির তারতম্যানুসারে বরাবরতা নির্ভর করে ।লক্ষ্মীদেবী হইতে শ্রীসম্প্রদায়,চতুর্মুখ হইতে ব্রহ্-মাধ্ব-সম্প্রদায়, রুদ্রদেব হইতে বিষ্ণুস্বামী-সম্প্রদায় উৎপত্তি লাভ করিয়াছে ।এই সাম্প্রদায়িক আচার্য দেবগণ কেবলমাত্র আধিকারিক পরিচয়ে ভগবদ্ভক্ত নহেন ।আদিগুরুর কার্য করিতে গিয়া তাঁহাদের ভগবদুপসনার কথা প্রমাণিত হইয়াছে ।প্রাপঞ্চিক সম্বন্ধে আধ্যক্ষিকগণের দৃষ্টি অনুসারে তাঁহারা জড়ভোগের সহিত সম্পৃক্ত হইলেও অবিমিশ্র হরিসেবাই তাঁহাদের নিত্যধর্ম ।“জন্মৈশ্বর্যশ্রুতশ্রীভিরেধমানমদঃ পুমান্ ।নৈবার্হত্যভিধাতুং বৈ ত্বামকিঞ্চনগচরোম্ ॥”—শ্রীকুন্তীদেবীর এই বাক্য হইতে জানা যায় যে, ‘জন্ম’-শব্দে ধন ‘শ্রুত’-শব্দে জ্ঞান, বিদ্যা তপস্যা-মদ উদ্দিষ্ট হইয়াছে ।শ্রীহরিকীর্তন-প্রভাবে প্রেমভক্তি লভ্য হয় ।সুতরাং যাঁহাদের জন্ম ঐশ্বর্য,শ্রুত ও শ্রী-মদ প্রবল, তাঁহারা ভগবান্কে ভগবানের আশ্রয়গ্রহণোদ্দেশে ডাকাতি রুচিবিশিষ্ট না হওয়ায় তাঁহাদের প্রেমভক্তি লভ্য হয় না, পরন্তু নিষ্কিঞ্চন বৈষ্ণবের মদ-রিপুর বশবর্তিতা অভাবে কৃষ্ণকীর্তনে স্বাভাবিক রুচি ।বিদ্যাদি-মদগ্রস্থ জনের বৈষ্ণবের চরণে স্বাভাবিক অপরাধ নৈসর্গিক ধর্মে লক্ষিত হয় ।ব্রহ্মাদির ভোগিই—প্রেমযোগ।