জীবহিংসা ও বৈষ্ণব-নিন্দায় পার্থক্য:—
যত পাপ হয় প্রজা-জনেরে হিংসিলে ।
তার শতগুণ হয় বৈষ্ণব নিন্দিলে ॥
মানব-মাত্রের হৃদয়ে ভগবান্ বিষ্ণুর অধিষ্ঠান আছে, আবার বৈষ্ণব সাধারণ মানবের ন্যায় পরিদৃষ্ট হইলেও তাঁহার হৃদয়ে যে বিষ্ণুর অধিষ্ঠান আছে, তাহাতে সেবোন্মুখ হইয়া বৈষ্ণব সর্বদা বাস করেন ।একজন বিষ্ণু-সেবা-নিবৃত্ত হইয়া রজস্তমোগুণে অবস্থিত, অপর বৈষ্ণব সত্ত্বগুণবিভাবিত হইয়া সর্বক্ষণ বিষ্ণুসেবায় প্রবৃত্ত ।সুতরাং ইঁহাদের মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য আছে, সেই বিচিত্রতার বিচার করিলে জানা যায় যে, বিষ্ণুসেবাপরায়ণ বৈষ্ণবের হিংসা করিলে সাধারণজনের হিংসা অপেক্ষা শতগুণ পাপ বা অপরাধ উপস্থিত হয়। “নাশ্চর্যমেতদ্যসৎসু সর্বদা মহদ্বিনিন্দা কুণপাত্মবাদি্ষু ।শের্ষ্যং মহাপুরুষপাদপাংশুভির্নিরস্ততেজঃসু তদেব শোভনম্ ॥’’ ( —ভাঃ ৪/৪/১৩) অর্থাৎ যাহারা জড়দেহকেই ‘আত্মা’ বলিয়া জ্ঞান করে, তাদৃশ অসৎ পুরুষ যে নিরন্তর মহদ্ব্যক্তিগণের নিন্দা করিবে, ইহাতে আর আশ্চর্য কি? যদিও মহাপুরুষগণ স্বীয় নিন্দা সহ্য করেন, তথাপি তাঁহাদের পদরেণুসমূহ মহতের নিন্দা সহ্য করিতে পারে না, উহারা নিন্দকের তেজোনাশ করিয়া থাকে ।অতএব অসতের মহদ্বিনিন্দাই শোভনীয় ।কারণ, তাদ্দ্বারা উহাদের সমুচিত প্রতিফলই লভ্য হইয়া থাকে ।“যো হি ভাগবতং লোকমুপহাসং নৃপোত্তম ।করোতি তস্য নশ্যন্তি অর্থ-ধর্ম-যশ-সুতাঃ॥নিন্দাং কুর্বন্তি যে মূঢ়া বৈষ্ণবানাং মহাত্মনাম্ ।পতন্তি পিতৃভিঃ সার্ধং মহারৌরবসংজ্ঞিতে ॥হন্তি নিন্দন্তি বৈ দ্বেষ্টি বৈষ্ণবান্নাভিনন্দতি ।ক্রুধ্যতে যাতি নো হর্ষং দর্শনে পতনানি ষট্ ॥পূর্বং কৃত্বা তু সম্মানমবজ্ঞাং কুরুতে তু যঃ ।বৈষ্ণবানাং মহীপাল সান্বয়ো যাতি সংক্ষয়ম্ ॥”(—স্কান্দে)। “জন্ম প্রভৃতি যৎকিঞ্চিৎ সুকৃতং সমুপা র্জিতম্ ।নাশায়াতি তৎ সর্বং পীড়য়েদ্যদি বৈষ্ণবান্ ॥” (—অমৃতসারোদ্ধারে) ।“করপত্ৰৈশ্চ ফাল্যন্তে সুতীব্রৈর্যমশাসনৈঃ ।নিন্দাং কুর্বন্তি যে পাপা বৈষ্ণবানাং মহাত্মনাম্ ॥পূজিতো ভগবান্ বিষ্ণুজন্মান্তরশতৈরপি ।প্রসীদতি ন বিশ্বাত্মা বৈষ্ণবে চাপমানিতে॥’’ (দ্বারকা মাহাত্ম্যে)। “যে নিন্দন্তি হৃষীকেশং তদ্ভক্তং পুণ্যরূপিণম্ ।শতজন্মার্জিতং পুণ্যং তেষাং নশ্যতি নিশ্চিতম্ ॥তে পতন্তি মহাঘোরে কুম্ভীপাকে ভয়ানকে ।ভক্ষিতা কীটসঙেঘন যাবচ্চন্দ্রদিবাকরৌ ।তস্য দর্শনমাত্রেণ পুণ্যং নশ্যতি নিশ্চিতম্ ।গঙ্গাং স্নাত্বা রবিং দৃষ্টা তদা বিদ্বান্ বিশুদ্ধ্যতি॥’’ (ব্রঃ বৈঃ কৃষজন্মখণ্ডে)।