কম্পিত মুরারি কহে করিয়া মিনতি।
“তুমি সে জানহ প্রভু! তোমার যে স্তুতি ॥
ভগবানের বরাহ-মূর্তি ও তাঁহার অনুষ্ঠান দেখিয়া মুরারি গুপ্ত ভয়ে কম্পিতকলেবর হইয়া বলিতে লাগিলেন,—‘আমি তোমার অনুরূপ স্তব করিতে অসমর্থ, তুমিই তোমার স্তব করিতে সমর্থ।’ মুরারি স্তব করিতে ইতস্ততঃ করিলে, বিশেষতঃ ভীষণ বরাহমূর্তি দেখিয়া শঙ্কিত হওয়ায় প্রভু বলিয়াছিলেন যে, তোমার ভয় করিবার আবশ্যকতা নাই, তুমি এতদিন জানিতে পার নাই, আমি কে? প্রকৃত প্রস্তাবে আমিই বিষ্ণুর অবতারসমূহের একমাত্র মালিক। ভগবানের এই সকল লীলা-প্রদর্শনের কথা প্রচারিত হইলে জগতের সকলেই শ্রীগৌরসুন্দরকে ভগবান্ বলিয়া জানিতে পারিয়াছিলেন। যদিও ভগবান্ তাঁহার এই সকল লীলা পার্ষদ ভক্তগণেরই দৃষ্টিপথে প্রপঞ্চে আনয়ন করিয়াছিলেন, তথাপি তাঁহাদের প্রতি দৃঢ়শ্রদ্ধ সকলেই এই সকল কথায় তাঁহার কৃষ্ণত্ব ও অবতারিত্ব জানিতে পারিয়াছিলেন এবং অম্মদ্দৃশ অধস্তনগণের মঙ্গলের জন্য তাঁহার লীলা-কথা লিপিবদ্ধ করিয়াছিলেন। সেবোন্মুখ বৈষ্ণব সেব্যবস্তুর কথা সুষ্ঠুভাবে বর্ণন করিতে পারেন। জড়ভোগপর কবি, সাহিত্যিক, লেখক,—ইহারা কোন প্রকারেই ভগবানের চরিত্র যথাযথ বৰ্ণন করিতে কখনই সমর্থ হয় না। জড় দার্শনিকগণের ত্রিগুণান্তর্গত আধ্যক্ষিক বিচার কখনই শ্রীগৌরসুন্দরের লোকাতীত বিষ্ণু-বিক্রমসমূহ বুঝিতে সমর্থ হইবে না। তাহারা স্বাভাবিক অপরাধ বশে সেবা-বিমুখ বলিয়া সাধুর প্রকৃষ্ট সঙ্গভাবে স্ব-স্ব দম্ভ ও মূঢ়তা প্রকাশ করিতে গিয়া শ্রীচৈতন্য-চরণে অপরাধমাত্র লাভ করিবে। কিন্তু সৌভাগ্যবান্ সেবা-পরায়ণ ভক্তগণ ভগবানের লোকাতীত বিক্রম অবগত হইয়া মায়িক বিচারের হস্ত হইতে পরিত্রাণ লাভ করিতে সমর্থ। অপরাধ-ক্রমে তাহাদিগের বিচার-প্রণালীতে অধোক্ষজ শব্দের অর্থ স্ফুর্তিপ্রাপ্ত হয় না। তাহারা অর্ধোক্ষজ শ্রীচৈতন্যদেবকে অচিদ্বিলাস-বিশিষ্ট বদ্ধজীববিশেষ বলিয়া মনে করে, তজ্জন্য শ্রীচৈতন্যপ্রিয়তম শ্রীগুরুদেবকে মর্ত্যবুদ্ধি করিয়া বসে এবং বৈষ্ণবগণের প্রতি অসূয়া-প্রদর্শনের নিমিত্ত মতভেদ উপস্থাপিত করে।