নিত্যানন্দপ্রভুর গৃহত্যাগ ও তীর্থ ভ্রমণ:—
হেন মতে গৃহ ছাড়ি’ নিত্যানন্দ-রায়।
স্বানুভাবানন্দে তীর্থ ভ্রমিয়া বেড়ায় ॥
যেরূপ কপিলদেবের পিতা স্বধাম গমন করিলে জননী দেবহূতি কাতরা মাতাকে পরিত্যাগ করিয়া চলিয়া গিয়া নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করিয়াছিলেন, যেরূপ শুকদেব স্বীয় জনক মহাত্মা ব্যাসকে পরিত্যাগ করিয়া তাঁহার পুনঃ পুনঃ আহ্বান-সত্ত্বেও ফিরিয়া না চাহিয়া নিরপেক্ষতা দেখাইয়াছিলেন, যেরূপ শচীনন্দন সহায়রহিতা জননীকে একাকিনী অবস্থায় পরিত্যাগ করিয়া নিরপেক্ষতার উদ্দেশে সন্ন্যাস গ্রহণ করিতেছিলেন সেইরূপ জীবোদ্ধার-কল্পে মূলসঙ্কর্ষণ অভিন্ন-বলদেব শ্রীনিত্যানন্দপ্রভু নিজানুভব চিন্ময় আনন্দে তীর্থ দর্শন করিয়া বেড়াইবার অভিনয় করিয়াছিলেন। সাধারণ লোকে পরমার্থোদ্দেশে এই ত্যাগের মহত্ত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সহসা বুঝিতে পারে না। পরমার্থের প্রযোজনীয়তা সর্বোপরি জীবের নিত্যা বৃত্তি—কৃষ্ণানুসন্ধান, তাহার তুলনায় ত্যাগাদি কঠোর ভাবসমূহে গুরুত্ব-উৎপাদন করিতে অসমর্থ। যাঁহারা পরমার্থে অগ্রসর হইয়াছেন, তাঁহারাই বুঝিতে পারেন যে, শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুর এতাদৃশ বৎসল মাতাপিতার সঙ্গ ত্যাগ করিয়া অন্য বিশেষ কারণ-মূলে চলিয়া যাওয়া সম্পূর্ণ সঙ্গত ও প্রয়োজনীয়। রামচন্দ্রের বনবাসে পিতার পুত্র-বিরহ জন্য বিলাপ, এমন কি যবন-হৃদয়কেও অত্যন্ত ব্যাকুল করিতে সমর্থ হয়। অতি-কঠিন সংসার-প্রমত্ত জনগণেরও এই সকল কথা শ্রবণ করিয়া হৃদয় অলৌকিক রস সিক্ত হয়।