এই সংক্ৰমণ-উত্তরায়ণ-দিবসে।
নিশ্চয় চলিব আমি করিতে সন্ন্যাসে।
জ্যোতিশ্চক্রে গ্রহগণের ভ্রমণ লক্ষিত হয়। সেই জ্যোতিশ্চক্রা দ্বাদশ সমভাগে বিভক্ত। প্রত্যেক ভাগে বৃত্তের দ্বাদশাংশ; তাহাই ত্রিশ অংশে বিভক্ত। সেই দ্বাদশাংশ মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ ও মীন-নামে পরিচিত। পৃথিবীস্থ দর্শক সূর্যকে জ্যোতিশ্চক্রে ভ্রমণ করিতে দেখেন। সূর্যের রাশি-প্রারম্ভে গমনকে ‘রবি-সংক্রমণ’ বলে। কর্কট -রাশিতে প্রবেশের নাম—দক্ষিণায়ন; আর মকর -রাশিতে রবিপ্রবেশের নাম—উত্তরায়ণ। প্রতি সৌরবর্ষেই একদিন দক্ষিণায়ন সংক্রমণ ও অপর দিন ‘উত্তরায়ণ সংক্রমণ’ হইয়া থাকে। ‘মকর সংক্রমণ’ অর্থাৎ ধনু-রাশি হইতে মকর-রাশিতে সংক্রমণ দিবসকেই ‘উত্তরায়ণ-সংক্রমণ’ বলে। স্থির-রাশিচক্র নক্ষত্র হইতে গণিত হয়। চলরাশিচক্রের সংক্রমণ-দিবস ও স্থির রাশিচক্রে রবি-সংক্রমণ—অয়নাংশ পরিমিত দিবসসংখ্যায় ব্যবহিত। রাঢ়ীয় শ্রীনিবাসের গণনপ্রথার পূর্বে ভগবান্ গৌরসুন্দরের আবির্ভাব কাল। ১৪৫৫ শব্দাব্দে তাঁহার অপ্রকটের কথা লিখিত আছে। আর শ্রীনিবাস ১৪৮৯ শকাব্দ হইতে গণনপ্রথা প্রচলিত করেন; উহা বঙ্গদেশীয় ‘স্মার্ত শ্রীরঘুনন্দন তাঁহার পরবর্তি-সময়ে ‘গণনা-বিধি’ বলিয়া লিপিবদ্ধ করিয়াছে। পরবর্তি সময়ে ১৫১৩ ও ১৫২১ শকাব্দ হইতে শ্রীরাঘবানন্দ ‘সিদ্ধান্তরহস্য’ ও ‘দিনচন্দ্রিকা’ গ্রন্থ প্রকাশ করেন। ‘দিনচন্দ্রিকা’ ও পরবর্তিকালে ‘দিন কৌমুদী’ প্রভৃতি সারিণী হইতে বর্তমানকালে বঙ্গদেশে পঞ্জিকা গণিত হয়। নিরয়নপথ-গণিত-বিচারই শ্ৰীমন্মহাপ্রভুর সময়ে বঙ্গদেশের প্রচলিত পন্থা ছিল। তজ্জন্য ‘নিরয়ণ-মকর-সংক্রান্তি’ই এস্থলে লক্ষিত হইয়াছে।