বল কৃষ্ণ, ভজ কৃষ্ণ, গাও কৃষ্ণ-নাম।
কৃষ্ণ বিনু কেহ কিছু না ভাবিহ আন।
‘কৃষ্ণ’ শব্দ বলিলে ইতর শব্দ কথনের যোগ্যতা থাকে না ‘কৃষ্ণনাম’ গান করিলে নিজের ও অপর সকলের নিত্যানন্দ বৃদ্ধিলাভ করে। কৃষ্ণনাম ভজনে নামি-কৃষ্ণের ভজন হয়। ‘কৃষ্ণ’ ব্যতীত অধিক বস্তু (?) আবৃত কৃষ্ণদর্শনে ‘কৃষ্ণ’ হইতে পৃথক্, সুতরাং ‘কৃষ্ণ’ শব্দই বলিতে হইবে, ‘কৃষ্ণ’ শব্দই বর্ণন করিতে হইবে এবং ‘কৃষ্ণ’ শব্দই ভজন করিতে হইবে। ‘কৃষ্ণ’ ব্যতীত অন্য কোন শব্দ বা নাম স্মরণ করিতে হইবে না; যেহেতু উহা ‘কৃষ্ণ’ হইতে ন্যূনাধিক-ইতর-রূপ লক্ষিত হওয়ায়। কৃষ্ণলাভের অভাবে জীবের পূর্ণমঙ্গল-লাভের সম্ভাবনা নাই। কৃষ্ণের অধিক বিচার—কৃষ্ণের আবৃত দর্শন এবং কৃষ্ণকে কৃষ্ণের অখিল-রস হইতে বঞ্চিত করা মাত্র। কৃষ্ণেতর-রসের সংযোগ ছলনায় কৃষ্ণের অখিল রসের পূর্ণতা বৃদ্ধি করিতে গেলে রস মিশ্রভাবে বিপর্যস্ত হয়। ভগবৎপ্রকাশ -সমূহের পূর্ণ স্বয়ংরূপ অবতারী কৃষ্ণ; সুতরাংকৃষ্ণ স্মরণ ব্যতীত অপূর্ণতা, অশুদ্ধতা, অনিত্যতা, শৃঙ্খলাবদ্ধতা প্রভৃতি কোন না কোন একটি দোষ হইয়া পড়ে। সচ্চিদানন্দবিগ্রহ হইতে পৃথক্ করিয়া তাঁহার অনাদিত্ব ও আদিত্ব হইতে তাঁহাকে বঞ্চিত করিতে গেলে তাঁহার অভাবে ভোগ-বিচার আক্রমণ করে। ‘কৃষ্’ ধাতুর, ‘ভূবাচক’ অর্থে পূর্ণ নিত্যাসত্ত্বা পর্ণ নিত্যজ্ঞানময় সত্তা বুঝায় এবং ‘ণ’ দ্বারা আনন্দ বুঝায়। ইতর বস্তুর সমানাধিকরণ্যে হেতু ও হেতুমৎএর ভেদ সম্ভব কিন্তু ‘কৃষ’ ও ‘ণ’—এই উভয়ের আকর্ষ ও আকৃষ্টি-বশতঃ সমানাধিকরণ্যে যুগপৎ হেতু ও হেতুমত্তার অসম্ভাবনা-হেতু ব্যাপার ও প্রতিপাদ্যের সহিত অভেদ-রূপই বৈশিষ্ট্য। নিবিশিষ্ট বিচার জড়জগতের আপেক্ষিকধর্মেসংশ্লিষ্ট। অপ্রাকৃত অতীন্দ্রিয় অধোক্ষজ বস্তুর অসামান্য বিচার ‘কৃষ্ণ’-শব্দের যোগরূঢ়ি বৃত্তিতে অবস্থিত। রূঢ়িবৃত্তিতে তাঁহার স্বয়ং নামিত্ব, স্বয়ংরূপতা, স্বয়ংগুণিত্ব স্বয়ংলীলত্ব বাধাপ্রাপ্ত হয় না।