আমা’ দেখি’ কোথা পাইবেক বন্ধনাশ।
এক গুণ বদ্ধ ছিল—হৈল কোটি-পাশ।
শ্রীগৌরসুন্দর শ্রীনিত্যানন্দকে বলিলেন,—“আমি নবদ্বীপবাসিগণের মঙ্গলবিধানের জন্য হরির ও হরিজনের কীর্তন আরম্ভ করিলাম। কিন্তু তাহাতে বিপরীত ফল হইল—তাহারা উত্তরোত্তর অধিকতর অপরাধে নিমগ্ন হইল। শুদ্ধ ভক্তির অনুষ্ঠান বুঝিতে না পারিয়া ভগবদ্ভক্তিকে বিপরীত ব্যাপার জানিয়া তাহারা আত্মবিনাশ করিল,—জড়জগতের বন্ধন-রজ্জুকে আরও দৃঢ়তর করিল! ভগবদ্বিদ্বেষ-ফলে ও ভগবদ্ভক্তের সেবা-বোধের অভাব হেতুই তাহাদের এরূপ দুর্গতি ঘটিল। শ্রীগৌরসুন্দরের অভিপ্রায়মত শ্রীবিশ্ববৈষ্ণব-রাজ-সভার অনুষ্ঠান-নিপুণ ভক্তগণ যে কালে শুদ্ধা-ভক্তিপ্রচারে ব্যস্ত হইলেন, তখন কাল্নাবাসী জনৈক উদ্ধত কর্মীর যোগে তথাকথিত প্রাকৃত-সাহজিক সম্প্রদায় কত না দৌরাত্ম্য করিয়াছিল। তথাকথিত বিষ্ণু ভক্তি-প্রচারক সাময়িক পত্রাদিতেও নানা তীব্রকটুবাক্যের আশ্রয়ে শুদ্ধভক্তির বিরোধ-কল্পে কতই না যত্ন করিয়াছিল! দুরাচার-ব্যাভিচারাদি, কৃষ্ণও তদ্ভক্ত-বিদ্বেষরূপ অভক্তি এবং যোষিৎসঙ্গাদিকেই শ্রীগৌরসুন্দরের প্রচারিত শুদ্ধভক্তির আদর্শ জানিয়া কত প্রকারই না তাহারা আত্মসংহারার্থ কল্মষকূপে নিমগ্ন হইয়াছিল! কেহ বা বর্ণাশ্রমধর্মপালনের ছলনায় দৈববর্ণাশ্রমের বিরুদ্ধে কটাক্ষপাত, কেহ বা ভক্তির ধারা বুঝিতে না পারিয়া ভোগপ্রবৃত্তিকে সংরক্ষণ-পূর্বক গুম্ফরক্ষার নিমিত্ত প্রবৃত্ত হইয়াছিল। নির্বোধ প্রাকৃতসহজিয়াগণ ভগবদ্ভক্তের উদ্দেশ্য কিছুই বুঝিতে পারে না। সুতরাং গৌরসুন্দরের অলৌকিক চেষ্টা ও মুদ্রা কিরূপে বুঝিবে? পরমপবিত্র গৌরলীলার চরম উদ্দেশ্য—কৃষ্ণপ্রেমদানকেও তাহারা নীতিবিরোধী জনগণের চিত্তবিকৃতি বলিয়া নব্যসাহিত্য উদ্ভাবন করিতে ত্রুটী করে নাই। যুগে যুগে “কালেন নষ্টা প্রলয়ে বাণীয়ং বেদসংজ্ঞিতা” বাক্যের যথার্থ দৃষ্ট হয়। তথাপি ধর্মের গ্লানি-নিরাকরণ কল্পে ভগবান্ তদীয় জনগণ চিরদিনই যত্ন করিয়া থাকেন। অনুদঘাটিত রহস্য গ্রহণ করিবার যোগ্যতা পাপচিত্র জনগণের পক্ষে সম্ভব নহে।