প্রভুর বৈষ্ণবাভিমান প্রদর্শনপূর্বক অহংগ্রহোপাসনা-নিরাশ—
ক্ষণে বলে—“মুঞি সেই মদন-গোপাল।”
ক্ষণে বলে,—“মুঞি কৃষ্ণ-দাস সর্ব-কাল॥”
বৈকুণ্ঠ-নামের কীর্তন-প্রভাবে মায়িক জীবগণের কিরূপ সৌভাগ্যের উদয় হয়, তাহার আদর্শ প্রদর্শন করিবার জন্য শ্রীগৌরসুন্দরের অবতার। জীব যখন ব্রাহ্মী, সান্কী ও খরৌষ্টী প্রভৃতি ভাব-গত যাবতীয় শব্দের কৃষ্ণসেবা-বিমুখ ভোগময় অর্থের উপলব্ধি হইতে অবসর-লাভ করেন, সেই সময়েই জীবের বৈকুণ্ঠনাম-প্রভাবে আত্মার নিত্যা বৃত্তি উদিত হয়। তখন বাহিরের বস্তুসমুহের আকর্ষণে সন্তুষ্ট না হইয়া অনির্বচনীয়চেষ্টাযুক্ত হন। সেই সময়েই জীবের নিত্যস্বরূপের উপলব্ধি ঘটে শ্রীগৌরসুন্দরও সকল সময়ে ভগবানের নিত্যসেবকের পঞ্চবিধ অভিব্যক্ত ভাবে আপনাকে প্রকট করিয়াছিলেন। তিনি স্বয়ং ব্রজেন্দ্র নন্দন বলিয়া কোন কোন সময়ে আত্মগোপনে সমর্থ হন নাই। জীব যাহাতে ভগবৎস্বরূপ উপলব্ধি করিতে পারে এবং শচীসূনুকে নন্দীশ্বর-পতিসুত বলিয়া জানিতে পারে, তাহা হইতে বদ্ধ জীবগণের দৃষ্টিকে আবরণ করেন নাই; তাই বলিয়া নিত্য চৈতন্যদাস জীব স্বীয় স্বরূপগত চিদ্ধর্ম হারাইয়া আপনাকে অহংগ্রহোপাসক ‘মায়াবাদী বাউল’ বা মদনগোপাল’ মনে না করেন। এবং ভক্তিপথ হইতে বিচ্যুত না হন, তজ্জন্য সকল সময়ে তিনি স্বয়ং বৈষ্ণবাভিমান প্রদর্শন করিতেন|