আপনে সবারে প্রভু করে উপদেশে।
“কৃষ্ণ-নাম মহামন্ত্র শুনহ হরিষে॥
বদ্ধজীবসমূহ কৃষ্ণভক্তিহীন হইয়া নিজেন্দ্রিয়তোষণ করিতে উদ্গ্রীব থাকে। শ্রীগৌরসুন্দর এই সকল জীবের মঙ্গলের জন্য কৃষ্ণনাম-মহামন্ত্র কীর্তন করিয়া সহর্ষে শ্রবণ করিবার উপদেশ দিলেন। যে সকল ব্যক্তি বাধ্য হইয়া শ্রীনাম শ্রবণ করেন, তাঁহাদের তত উৎসাহ লক্ষিত হয় না। তজ্জন্য উৎসাহবিশিষ্ট হইয়া প্রসন্নচিত্তে প্রদত্ত বা কীর্তিত কৃষ্ণনাম মহামন্ত্র গ্রহণ বা শ্রবণ করিবার উপদেশ। সেবা-বিমুখ জীব সর্বদা অসৎপরামর্শ-ক্রমে অসৎসঙ্গদোষে জর্জরিত থাকায় ভগবৎকথা-শ্রবণে স্বভাবতঃ বিরত থাকে।
জড়ভোগচিন্তা হইতে বিরত হইবার প্রক্রিয়াকে ‘মন্ত্র’ বলে। শব্দমুখে উপদেশই ভোগ বা ত্যাগের চিন্তা হইতে রক্ষা পাইবার একমাত্র উপায়। উচ্চারিত শব্দ হৃদয়ে ধারণ করিয়া বিষয়াসক্ত মনকে নিয়ন্ত্রিত করিলেই মন্ত্রসিদ্ধি হয়। ব্যক্তিবিশেষের মন অপরের মন হইতে পৃথক্; সেজন্য মনন-ক্রিয়া এক ব্যক্তি দ্বারাই সম্পাদ্য। সুতরাং ব্যক্তিবিশেষ যে ‘হরি’ শব্দ কীর্তন করেন, তাহাকে “মন্ত্র” বলে।
মহামন্ত্র সাধনে বহুব্যক্তি একযোগে সাধন করিতে পারেন। সাধনোপযোগী অনুকুল পরামর্শ-সমূহ অনেকেই দিতে পারেন; এজন্য শিক্ষা-গুরুর বহুত্ব স্বীকৃত ও মন্ত্রদীক্ষাগুরুর একত্ব সিদ্ধ। মহামন্ত্র ও মন্ত্রের দ্বারা চিত্ত শুদ্ধ হয়। চিত্ত-শুদ্ধিফলে সকল ইন্দ্রিয় নশ্বর-বিষয়-প্রবৃত্তি হইতে বিমুক্ত হইয়া অজ্ঞত্বাভাবে নিত্যত্বের উপলব্ধি করে। তখন আর তাহার হেয় বা অনুপাদেয় বিচার প্রবল হইতে পারে না। যিনি এই সকল কথা সানন্দে গ্রহণ করিতে অসমর্থ, তাঁহার পক্ষে নিরানন্দে অবস্থান করাই যোগ্যতা।