তপস্বী, সন্ন্যাসী, জ্ঞানী, যোগী, যে-যে জন।
সংহারিমু যদি সব না করে কীর্তন॥
সঙ্কীর্তন-প্রবর্তক মহাপ্রভু কীর্তনবিরোধী নির্জনতাপ্রিয় ধ্যানিদিগকে ‘পাপী’ জানিয়া সংহার করিবেন, বলিলেন। সকল প্রকার পাপ-পরায়ণ জীব যদি কীর্তন করে, তাহা হইলে তাহারাও ভগবৎস্মৃতিপথে আসিবে। কীর্তনবিরোধী তপস্যা নিরত ত্যক্তভোগ যদি মুমুক্ষু জ্ঞানী, ভগবৎসান্নিধ্য লাভেচ্ছু যোগী—যদিও জনসমাজে ‘ধার্মিক সাধু’ বলিয়া খ্যাত,—কিন্তু তাহারা যদি ভগবৎ কীর্তন উচ্চৈঃস্বরে না করে, তাহা হইলে মহাপ্রভু তাহাদিগকেও বিনাশ করিতে প্রস্তুত হইলেন। শ্রীজীব গোস্বামী প্রভু সপ্তমস্কন্ধের (৫/২৩) প্রহ্লাদোক্তির টীকায় লিখিয়াছেন,—“যদ্যপ্যন্যা ভক্তিঃ কলৌ কর্তব্যা তদা কীর্তনাখ্যা ভক্তিসংযোগেনৈব কর্তব্য।’’ কীর্তন বাদ দিয়া অন্য কোন ভক্তি হইতে পারে না।
বর্তমান কালে আমরা যে বিশ্বে বাস করি, তথায় হরিকথার কোন কীর্তন নাই, তজ্জন্য লোক-হিতৈষী বিশ্বম্ভর হরিকীর্তন মুখেই সর্ববিধ ভগবৎ সেবা-বিধানের উপদেশ দিয়াছেন। নামকীর্তনের দ্বারা বৈকুণ্ঠনাম-সেবা ব্যতীত যে সকল অনুষ্ঠান দেখা যায়, তাহা ভগবদ্বৈমুখ্যেরই পরিণতি মাত্র, উহাতে ভক্তিলাভের সম্ভাবনা নাই। অন্যাভিলাষ, কর্ম ও জ্ঞানাদির উদ্দেশ্যে যাবতীয় অভিধেয় কখনও ‘কেবলা ভক্তি’-শব্দ-বাচ্য নহে। কীর্তনাখ্যা ভক্তির অবিরোধে যে সকল সাধনের কথা হইতে পারে, সেই সমস্তই কীর্তনের অনুগামী হওয়া উচিত।