প্রেম-ভক্তি বৃষ্টি আজি করিব বিশাল।
পাষণ্ডিগণের সে হইব আজি ‘কাল’॥
শ্রীগৌরসুন্দর অসীম ধৈর্য-ধারণের উপদেশ দিয়াছেন। আবার তিনি নিজে ক্রোধে রুদ্রমূর্তি হইয়া কীর্তন বিদ্বেষীর গৃহদ্বার ধ্বংস করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। সুতরাং এই পরস্পর বিবদমান ধর্মের সামঞ্জস্য কি?—অনেকের নিকট প্রশ্নের বিষয় হইতে পারে। কৃষ্ণসেবার অনুকূল সকল কার্য করাই শ্রীনাম-ভজনের প্রধান অঙ্গ। কৃষ্ণসেবার প্রতিকূল বিষয়ে মুখ্য বা গৌণভাবে যোগদান করা বা সাহায্য -করাই ভগবৎ-সেবার প্রতিকূল্য সুতরাং অনুকূল অনুশীলনের জন্যই ‘তৃণাদপি সুনীচ’ ও ‘তরুর অপেক্ষা সহ্য গুণসম্পন্ন’ হইবার উপদেশ। প্রতিকূলতার সাহায্যের জন্য যে ধৈর্য ও নিরুপাধিকতা, তাহা নাম-ভজনের সম্পূর্ণ বিরোধিনী চেষ্টা নামাপরাধের সাহায্য করিবার জন্য যাহাদের ঐকান্তিক চেষ্টা, তাহারাই তৃণাদপি-সুনীচ ও তরুর অপেক্ষা সহ্যগুণম্পন্ন হইবার উপদেশের অপব্যবহার করে। এই অপব্যবহার যে প্রতিকূল অনুশীলন-জাতীয়, তাহা বুঝাইবার জন্য, সর্বতোভাবে কৃষ্ণানুশীলনের জন্য শ্রীগৌরসুন্দর ‘তৃণাদপি ‘সুনীচ’ ও ‘তরু অপেক্ষা সহ্যগুণসম্পন্ন’ হইবার উপদেশ দিয়াছেন। যদিও বাহিরে প্রতিকূল অনুশীলনের প্রতি উদাসীন থাকিবার ব্যবস্থা অনুকূল বলিয়া মনে হয়, তথাপি সেরূপ-কার্যে চেতনের বৃত্তি আবৃত করিবার দুষ্টবুদ্ধি বা অজ্ঞতাই জ্ঞাপিত হয়। শ্রীমদ্ভাগবতের ৪র্থ স্কন্ধোল্লিখিত “কর্ণৌ পিধায় নিরিয়াৎ” শ্লোক এতৎপ্রসঙ্গে বিশেষভাবে অনুধাবন করা আবশ্যক; নতুবা ভক্তিবর্জিত হইয়া অপরাধ সঞ্চয় করা হয় মাত্র। শ্রীগৌরসুন্দর ক্রোধও প্রতিশোধাকাঙ্ক্ষা-প্রদর্শনের সঙ্গে সঙ্গেই বলিতেছেন,—‘অদ্যই বিশালপ্রেমভক্তিবৃষ্টি করাইব, ইহাই পাষণ্ডিগণের যমসদৃশ হইবে’’। “মল্লানামশনির্নৃণাং’’ ইত্যাদি শ্লোকোক্ত অসংখ্য-বিভিন্ন প্রতীতি সমূহ একাধারে তাহাতেই সম্ভব।