ভক্ত, ভগবান্ ও ভাগবতে ভেদ-দর্শী নিজ অমঙ্গল আবাহনকারী—
মুঞি, মোর দাস, আর গ্রন্থ-ভাগবতে।
যার ভেদ আছে, তার নাশ ভালমতে॥”
ভগবান্ ও ভক্তে যাঁহারা ভেদবুদ্ধি করিয়া বিষ্ণু-বৈষ্ণবতত্ত্ব অবগত হন না, তাঁহারা সর্বতোভাবে নিজের অমঙ্গল আবাহন করেন। লীলাপ্রবিষ্ট না হইলে ভগবানের সকল কথা সুষ্ঠুভাবে বলা যায় না। ভগবাময় ভাগবত শুকদেবই জানেন। অন্যে জানে না। একটা কিম্বদন্তী আছে যে, শ্রীমহাদেব এক সময় বলিয়াছিলেন—আমি ভাগবত জানি, শুকদেব ভাগবত জানেন, লেখক শ্রীব্যাসদেব গুরুপদাশ্রয় করিয়া বিশুদ্ধ গুরুসেবার অভাবে কিছুদিন ধৰ্মার্থ-কাম-মোক্ষের সেবকগণের উপকারার্থে। শাস্ত্রগ্রন্থাদি প্রণয়ন করিয়াছিলেন; কিন্তু সচ্ছাস্ত্র সমূহের একমাত্র তাৎপর্য শ্রীমদ্ভাগবত-রচনাকালে ধর্মার্থ কামমোক্ষ-ধিক্কারী বুদ্ধি আশ্রয় করিয়া কৃষ্ণলীলা বর্ণন করিয়াছেন, তাহাতেও শ্রীবার্ষভানবীদেবীর কথার প্রাধান্য না দেওয়ায় এবং সাধারণের যোগ্যতার অভাব-হেতু বর্ণন-বিষয়ে যে সাবহিতচিত্ততা প্রকাশ করিয়াছেন, তাহাতে তিনি কতক অবগত এবং কিছু পরিমাণে অনবগত প্রভৃতির পরিচয় দিয়াছেন;কিন্তু শ্রীনৃসিংহের উপাসক ত্রিদণ্ডিস্বামী শ্রীধর ভগবৎকৃপাক্রমে সেবোন্মুখ হওয়ায় ভাগবতের তাৎপর্য সুষ্ঠুভাবে জানিয়া গোপীজনবল্লভের সেবার কথা বুঝিতে পারিয়াছেন; ভক্ত্যেকরক্ষক শ্রীধর ও তৎসহোদর ভ্রাতা লহ্মীধর নামভজনপ্রভাবে ‘ভগবদ্রূপ-গুণ-পরিকরবৈশিষ্ট্য ও লীলায় যে অধিকার দেখাইয়াছেন, তাহা শ্রীধর-বিরোধী শ্রীধর টীকাপাঠকারী বুভুক্ষু ও মুমুক্ষু-সম্প্রদায় অভক্ত হওয়ায় সেই কৃপা-লাভ হইতে চিরতরে বঞ্চিত আছে। কনিষ্ঠাধিকারগত চেষ্টায় ভগবানের কিছু পরিচয়ের কথা থাকিলেও ভক্তের অমর্যাদা করিলে ভগবৎসেবায় কনিষ্ঠাধিকার হইতেও বঞ্চিত হইতে হয়। সুতরাং পরিকরবৈশিষ্ট্য ও বিষয়াশ্রয়বিচারে যাহাদের ভেদজ্ঞানজনিত অমঙ্গল প্রবেশ করিয়াছে তাহারা প্রেমভক্তিকে সর্বতোভাবে প্রয়োজনোন্মুখ বলিয়া জানে না; অতএব তাহারা মানবজীবন লাভ করিয়াও আত্মঘাতী মাত্র।