ভক্তিযোগের মহিমা ব্যাখ্যাত না হওয়ায় দেবানন্দের ব্যাখ্যায় প্রভুর অননুমোদন—
সর্বভূত-হৃদয়—জানয়ে সর্ব-তত্ত্ব।
না শুনয়ে ব্যাখ্যা ভক্তিযোগের মহত্ত্ব॥
শ্ৰীযামুনাচার্য লিখিয়াছেন, ভগবান্ ও ভগবদ্ভক্তের প্রতি অভক্তগণের স্বাভাবিক অপরাধ থাকে। নামাপরাধের বিচারেও দেখা যায় যে, সাধু-বৈষ্ণবগণের নিকট অপরাধী হইলে বদ্ধজীব ভগবানের ও নিজের স্বরূপ বুঝিতে অসমর্থ হয়। অপরাধ বশে জীবের অজ্ঞান আসিয়া উপস্থিত হয়, তজ্জন্য জীব দায়ী না হইলেও তাহার অজ্ঞানই সে বিষয়ে দায়ী হইয়া পড়ে। অনেক অর্বাচীন জন কৃষ্ণ ও তল্লীলাকে প্রকাশ না জানিয়া তাহাদের কাল্পনিক নশ্বর বুদ্ধিকেই ‘প্রামাণিক’ জ্ঞান করে। যখন তাহারা অপরাধ-মুক্ত হয়, তখন কৃষ্ণকেই একমাত্র ‘প্রমাণ’ জানিয়া জড়-জ্ঞানের প্রত্যক্ষ ও অনুমান হইতে পরিত্রাণ লাভ করে। “নৈষাং মতিস্তাবদুরুক্ৰমাঙিঘ্রং”—এই ভাগবতোক্ত শ্লোক এতৎপ্রসঙ্গে আলোচ্য।
ভগবান্ শ্রীগৌরহরি সর্বভূতের হৃদয়ে প্রবিষ্ট হইয়া সকল কথাই অবগত আছেন। কর্মযোগ, হঠযোগ, জ্ঞানযোগ, রাজযোগ প্রভৃতির সঙ্কীর্ণতা ভগবান্ গৌরসুন্দর সর্বতোভাবে জ্ঞাত আছেন এবং ভক্তিযোগের মহিমা জগতে বিস্তার করিবার জন্যই জীবের চরম- কল্যাণের উদ্দেশ্যে সেই সকল কথা প্রকাশ করিয়াছেন। সুতরাং যেখানে ভক্তিযোগরে মহিমা ব্যাখ্যাত না হয়, সেই কথার তিনি কখনই অনুমোদন করেন না।