‘সন্ন্যাসী প্রকাশানন্দ বসয়ে কাশীতে।
মোরে খণ্ড খণ্ড বেটা করে ভাল মতে॥
কাশীবাসী মায়াবাদী সন্ন্যাসিগণ “জগৎ মিথ্যা, বৈকুণ্ঠে বৈচিত্র্য নাই, যাহা কিছু জাগতিক বিচিত্রতা, তাহা সকলই মিথ্যামাত্র, জীবের নিত্যস্বরূপ নাই, ভ্রান্তিবশে ব্রহ্মই আপনাকে জীবরূপে কল্পনা করেন। অজ্ঞান তিরোহিত হইলে নির্বিশেষ ব্রহ্মেরই অবস্থিতি থাক শ্রীভগবানের চিন্ময় রূপ নাই, তাহার হেতু প্রদর্শনকল্পে রূপমানেই অচিজ্জগতে অবস্থিত হওয়ায় ভ্রান্তিমাত্র। রূপরহিত অবস্থাই নির্বিশেষ ব্রহ্মার নিত্য-স্থিতি। ভগবানের নাম-রূপ-গুণ পরিকরবৈশিষ্ট্য ও লীলা প্রাপঞ্চিক বিচারোত্থ (ইংরাজী ভাষায় যাহাকে anthropomorphism বলে) বিবর্তাশ্রিত বিচারেরই অন্তর্গত। ভগবদ্বিগ্রহ বলিয়া কোন সেব্য পুরুষোত্তম নাই। সেব্য-সেবনধর্ম পার্থিব বিচারে প্রতিষ্ঠিত মাত্র। সবিশেষ সচ্চিদানন্দ ভগবান্ নির্বিশেষ ব্রহ্ম হইতে পৃথক্ বিবর্তোত্থ বিচার-মাত্র। উপাসনা—অনিত্য। পুরুষোত্তমবাদের নির্বৈশিষ্ট্য বিচারই অজ্ঞানরাহিত্য ।’’——প্রভৃতি কেবলাদ্বৈতবাদিগণের বিচার। কাশীবাসী সন্ন্যাসীগণ পরমার্থ-বঞ্চিত হইয়া ভগবানের চিন্ময় অঙ্গের ‘অস্তিত্ব খণ্ড খণ্ড করিয়া নষ্ট করিবার চেষ্টা করেন। এইরূপ সন্ন্যাসিগণের অগ্রণী প্রকাশানন্দ নামক জনৈক মায়াবাদী সন্ন্যাসী মহাপ্রভুর সমকালে সকল যতির মধ্যে প্রাধান্য লাভ করিয়াছিলেন। ইহজগতে হিংসা-বৃত্তির প্রাবল্য হেতু নিত্য-সবিশেষবাদকে আক্রমণ করা নির্বিশেষবাদের প্রধান প্রচেষ্টা। শ্রীগৌরসুন্দরের ইহা অভিপ্রেত নহে।