ধন্য মোর জীবন—তোমরা বল ভাল।
তোমরা বাখানিলে গ্রাসিতে নারে কাল॥
বাখানিলে,— কৃষ্ণকীর্তন বা কৃষ্ণগুণানুবাদ করিলে॥
গ্রাসিতে,—গ্রাস বা আক্রমণ করিতে।
কাল,—দোষপূর্ণ কলি-কাল; যম, মৃত্যু বা সংসার।
কৃষ্ণকীর্তনের (১) কালভয়-নিবারকত্ব,—(ভাঃ ৩।২৫। ৩৮ শ্লোকে মাতা দেবহূতি প্রতি ভগবান্ কপিলদেবের উক্তি—)
“ন কর্হিচিন্মৎপরাঃ শান্তরূপে নঙক্ষান্তি নো মেহনিমিষো লেঢ়ি হেতিঃ।
যেষামহং প্রিয় আত্মা সুতশ্চ সখা গুরুঃ সুহৃদো দৈবমিষ্টম॥’’
অর্থাৎ ‘হে শান্তরূপে! আমি যাঁহাদের প্রিয়, আত্মা পুত্র, সখা, গুরু, সুহৃদ্ ও দেবতুল্য পূজ্য, সেই মৎপরায়ণ ভক্তগণ কখনও সুখভোগহীন অর্থাৎ নিজ ভক্তিপথ হইতে কখনও ভ্রষ্ট হন না, সুতরাং আমার অনিমিষ কালচক্র তাঁহাদিগকে কখনও লেহন, স্পর্শ বা গ্রাস করিতে সমর্থ নহে।
(২) মৃত্যু বা সংসারভয়-নিবারকত্ব—(ভাঃ ১।১।১৪ শ্লোকে শ্রীসূতের প্রতি শৌনকাদি ঋষির উক্তি—) “আপন্নঃ সংসৃতিং ঘোরাং যন্নাম বিবশো গৃণন্। ততঃ সদ্যো বিমুচ্যেত যদ্বিভেতি স্বয়ং ভয়ম্॥’’
অর্থাৎ “ঘোর-সংসারে পতিত ব্যক্তি বিবশ হইয়াও যাঁহার নাম উচ্চারণ করিলে সদ্যঃ মুক্তিপ্রাপ্ত হয় এবং সাক্ষাৎ ভয় বা মৃত্যু যাঁহা হইতে ভয় পায়, সেই ভগবানের লীলাসকল পুণ্যশ্লোক লোকগণ সতত স্তব করিয়া থাকেন; শুদ্ধিকাম কোন্ ব্যক্তি কলিকলুষাপহ তাঁহার যশঃ শ্রবণ না করিবে?)”
(কাশীখণ্ডে অগ্নিবিন্দুস্তবে—) “নারায়ণেতি নরকার্ণবতারণেতি দামওদরেতি মধুহেতি চতুর্ভুজেতি। বিশ্বম্ভরেতি বিরজেতি জনার্দনেতি ক্বাস্তীহ জন্ম জপতাং ক্ব কৃতান্তভীতিঃ॥’’
অর্থাৎ ‘হে নারায়ণ, হে নরকার্ণবতারণ, হে দামোদর, হে মধুদৈত্যঘাতিন্, হে চতুর্ভূজ, হে বিশ্বম্ভর, হে বিরজ, হে জনার্দন —ইত্যাদি নামে যাঁহারা সতত আমাকে আহ্বান করেন, তাঁহাদের জন্ম বা কিরূপে সম্ভবে?’।