তথাপি অদ্বৈত-তত্ত্ব বুঝন না যায়।
সেইক্ষণে প্রকাশিয়া তখনে লুকায়॥
(চৈঃ চঃ আদি ৬ষ্ঠ পঃ ২৫-২৯, ৩২-৩৬, ৪১-৪২, ১১১-১১৩) “মহাবিষ্ণুর অংশ—অদ্বৈত গুণধাম। ঈশ্বরে অভেদ, তেঞি ‘অদ্বৈত’ পূর্ণনাম॥ পূর্বে যৈছে কৈলা সর্ববিশ্বের সৃজন। অবতরি’ কৈলা এবে ভক্তি প্রবর্তন॥ জীব নিস্তারিলা কৃষ্ণভক্তি করি’ দান। গীতা-ভাগবতে কৈলা ভক্তির ব্যাখ্যান। ভক্তি-উপদেশ বিনু তাঁর নাহি কার্য। অতএব নাম হৈল ‘অদ্বৈত-আচার্য’ ॥ বৈষ্ণবের গুরু তেঁহো জগতের আর্য। দুইনাম-মিলনে হৈলা ‘অদ্ধৈত-আচার্য’ ৷৷ * * অদ্বৈত-আচার্য—ঈশ্বরের অংশবর্য। তাঁর ‘তত্ত্ব-নাম-গুণ, সকলি আশ্চর্য॥ যাঁহার তুলসীজলে, যাঁহার হুঙ্কারে। স্বগণ-সহিত চৈতন্যের অবতারে॥ যাঁর দ্বারা কৈলা প্রভু কীর্তনপ্রচার। যাঁর দ্বারা কৈলা প্রভু জগৎ নিস্তার॥ আচার্য গোসাঞির গুণ-মহিমা অপার। জীবকীট কোথায় পাইবেক তার পার? আচার্য-গোসাঞি---চৈতন্যের মুখ্য-অঙ্গ। আর এক অঙ্গ তাঁর—প্রভু নিত্যানন্দ॥* * চৈতন্যগোসাঞিকে আচার্য করে ‘প্রভু’-জ্ঞান। আপনাকে করেন তাঁর ‘দাস’-অভিমান॥ সেই অভিমান-সুখে আপনা’ পাসরে। কৃষ্ণদাস হও’---জীবে উপদেশ করে॥ *** অদ্বৈত আচার্য গোসাঞির মহিমা অপার। যাঁহার হুঙ্কারে হৈলা চৈতন্যাবর॥ সঙ্কীর্তন প্রচারিয়া সর্ব জগৎ তারিল। অদ্বৈতপ্রসাদে লোক প্রেমধন পাইল॥ অদ্বৈত-মহিমা অনন্ত, কে পারে কহিতে ? সেই লিখি, যেই শুনি মহাজন হৈতে।
গৌড়ীয়-ভাষ্য
শ্রীঅদ্বৈতপ্রভুর তত্ত্ব ও ক্রিয়া-মুদ্রা সাধারণ প্রাকৃত জীবের বোধগম্য নহে। যদৃচ্ছাক্রমে কখনও কৃপা-বশে তিনি তাঁহার স্বীয় অপ্রাকৃত তত্ত্ব-মহিমা প্রকাশ করেন, আবার কখনও বা নিজের অপ্রাকৃত তত্ত্ব-মহিমা সংগোপন করেন।
(আলবন্দারু যামুনাচার্য-কৃত স্তোত্ররত্নে ১৮শ শ্লোকে) “উল্লংঘিতত্রিবিধসীমসমাতিশায়িসম্ভাবনং তব পরিব্রঢ়িমস্বভাবম্ । মায়াবলেন ভবতাপি নিগুহ্যমানং পশ্যন্তি কেচিদনিশং ত্বদনন্যভাবাঃ॥’’
অর্থাৎ ‘হে ভগবন্ ! দেশ, কাল চিন্তা—এই তিনটি সীমা-দ্বারা সমস্ত বস্তুই আবদ্ধ, কিন্তু তোমার গুঢ়ভাব সম ও অতিশয় শুন্য-হওয়ায় উক্ত ত্রিবিধ সীমাকে অতিক্রম করিয়া বর্তমান আছে। মায়াবলের দ্বারা তুমি ঐ স্বভাবকেআচ্ছাদন কর, কিন্তু তোমার অনন্যভক্তগণ সর্বদা তোমাকে দর্শন করিতে যোগ্য হন।‘