ভক্তের কৃষ্ণসেবা ও কৃষ্ণের
ভক্তসেবা—
কৃষ্ণের করয়ে সেবা—ভক্তের স্বভাব।
ভক্ত লাগি’ কৃষ্ণের সকল-অনুভাব॥
নিখিল চিদচিদ্জগতের একমাত্র সর্বোত্তম পালক শ্রীকৃষ্ণকে সকল-শাস্ত্রই সকলের পরম-আশ্রয় সর্বভূতহিতকারি-রূপে নির্ণয় করিয়াছেন। এজন্য কেহই কৃষ্ণের বিদ্বেষ বা উপেক্ষার যোগ্য হইতে পারে না। সকলেই স্বরূপতঃ শ্রীকৃষ্ণের নিত্য-সেবক হওয়ায় কৃপা বা অনুগ্রহের পাত্র।
সকল-সুহৃৎ সর্বশুভঙ্কর-‘‘সর্বেষাং হিতকারী যঃ স স্যাৎ সর্বশুভঙ্করঃ ॥’’
কৃষ্ণের কেহ দ্বেষ্যোপেক্ষ্য নহে,—(ভাঃ ১০। ৩৮ |২২ শ্লোকে পরীক্ষিতের নিকট শ্ৰীশুক-কর্তৃক গোকুলাভিমুখে প্রস্থিত অক্ররের মনে-মনে বিচার-বর্ণন—)
“ন তস্য কশ্চিদ্দয়িতঃ সুহৃত্তমো ন চাপ্রিয়ো দ্বেষ্য উপেক্ষ্য এব বা।
তথাপি ভক্তান্ ভজতে যথা তথা সুরদ্রুমো যদ্বদুপাশ্রিতোহর্থদঃ॥’’
অর্থাৎ ‘যদিও তাঁহার প্রিয় বা অপ্রিয়, সুহৃদ্ বা অসুহৃদ হিত বা অহিত এবং দ্বেষ্য অথবা উপেক্ষ্য কেহ নাই, সত্য, তথাপি যে ব্যক্তি যে-প্রকারে আশ্রিত হয়, কল্পবৃক্ষ যেরূপ তাহাকে সেইপ্রকার ফল দেয়, তদ্রূপ যে-ভক্ত যেরূপে তাঁহাকে ভজন করে, তিনিও তাহাকে তদ্রূপই অভীষ্ট প্রদান করিয়া থাকেন।’
(ভঃ রঃ সিঃ দঃ বিঃ ১ম লঃ—)
“কৃতা কৃতার্থা মুনয়ো বিনোদৈঃ খলক্ষয়েণাখিলধার্মিকাশ্চ।
বপুর্বিমর্দেন খলাশ্চ যুদ্ধে ন কস্য পথ্যং হরিণা বাধায়ি॥’’
অর্থাৎ (শ্রীকৃষ্ণের স্বধামগমনানন্তর উদ্ধব কহিলেন,—)যিনি খলগণকে ক্ষয় করিয়া আত্মারাম মুনিগণকে ও ধার্মিক জনগণকে তাঁহাদের দ্বারা স্বীয় গুণরাশির প্রচারমুখে, এবং সমরে বিনাশ সাধন-পূর্বক খলদিগকেও কৃতকৃতার্থ করিয়াছেন, সেই =শ্রীহরি- কর্তৃক কাহার না হিত সাধিত হইয়াছে? ৫০॥
ঐকান্তিক ভক্তের স্বাভাবিকী সর্ববিধা নিত্য-চেষ্টা কৃষ্ণেতর অন্য কোন- বস্তুর তর্পণোদ্দেশে বিহিত নহে, পরন্তু সর্বক্ষণ কেবল কৃষ্ণসেবার্থই বিহিতা, আর কৃষ্ণেরও যাবতীয় চেষ্টা বা লীলা সকল সময়ে কেবলমাত্র ভক্তের সন্তোষবিধানাথই প্রকটিত হয়।