Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 48

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • নিজপ্রিয় ভক্তের নিমিত্ত কৃষ্ণের স্বধর্ম পর্যন্ত ত্যাগ

    কোন্ কর্ম সেবকের প্রভু নাহি করে’ ?
    সেবকের লাগি’ নিজ-ধর্ম পরিহরে॥

    প্রভু সেব্য-তত্ত্বহইয়াও নিজের সর্বসেবনীয়- ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া সেবকগণের সুখবিদানের উদ্দেশে তাঁহাদের তৃপ্তিকর কার্য করিতে লাগিলেন। যদিও নিজের সেবকের সেবা প্রভুর ধর্ম নহে, তথাপি তাঁহার এমন কোন কার্য নাই—যাহা তিনি সেবকের প্রীতির নিমিত্ত না করিতে পারেন এবং এ-ক্ষেত্রে তিনি ভক্তগণের বিবিধ সেবাকার্য সম্পাদনও করিলেন।

    (ভাঃ ১।৯।৩৭ শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে লক্ষ্য করিয়া ভীষ্মের উক্তি—)

    “স্বনিগমমপহায় মৎপ্রতিজ্ঞামৃতমধিকর্তুমবপ্লতো রথস্থঃ॥
    ধৃতরথ-চরণোহভ্যয়াচ্চলদ্রর্হরিরিব হন্তুমিভং গতোত্তরীয়ঃ॥’’

    অর্থাৎ, ইনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন, কুরুপাণ্ডবদিগের যুদ্ধে কোন পক্ষে অস্ত্র গ্রহণ না করিয়া সাহায্য মাত্র করিবেনৃ; আমারও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ছিল, —ইঁহাকে অস্ত্র গ্রহণ করাইব; কিন্তু ইনি এমনই ভক্তবৎসল যে, আপনার প্রতিজ্ঞা পরিত্যাগ করিয়া আমার প্রতিজ্ঞাকেই অধিক সত্য করিবার নিমিত্ত রথ হইতে অবতরণ-পূর্বক আপনার পরমাস্ত্র চক্র ধারণ করিলেন এবং হস্তিবধার্থ যেমন সিংহ ধাবমান হয়, তাহার ন্যায় আমার অভিমুখে ধাবিত হইয়াছিলেন। তৎকালে ইঁহার অতিশয় ক্রোধোদয় হওয়ায় মনুষ্যনাট্য বিস্মৃত হইয়াছিলেন; একারণে উদরস্থ সকল-ভুবনের ভার-বশতঃ ইঁহার প্রত্যেক পদে পৃথিবী কম্পিতা হইয়াছিল এবং ক্রোধভরে ইঁহার উত্তরীয়-বসন পথে পড়িয়া গিয়াছিল।’

    (ভাঃ ১০।৯।১৪, ১৯ ও ২০ শ্লোকে শ্ৰীশুকোক্তি—)

                                              ‘তং মত্বাত্মজমব্যক্তং মর্ত্যলিঙ্গমধোক্ষজম্‌।
                                             গোপীকোলুখলে দাম্না  ববন্ধ প্রাকৃতং যথা॥

    ** এবং সন্দর্শিতা হ্যঙ্গ হরিণা ভৃত্যবশ্যতা। স্ববশেনাপি কৃষ্ণেন যস্যেদং সেশ্বরং বশে॥ নেমং বিরিঞ্চো ন ভবো ন শ্রীরপ্যঙ্গসংশ্রয়া। প্রসাদং লেভিরে গোপী যত্তং প্রাপ বিমুক্তিদাৎ॥’’

    অর্থাৎ ‘মানবলীলাকারী সেই অব্যক্ত অধোক্ষজকে আত্মজ জ্ঞান করিয়া ঐ গোপী যশোদা প্রাকৃত-বালকের তুল্য রজ্জু দিয়া উদূখলে বন্ধন করিলেন। * * হে রাজন্‌! ভগবান্‌ শ্রীকৃষ্ণ স্বতন্ত্র, ঈশ্বর-সহিত এই সমগ্র বিশ্ব তাঁহার বশবর্তী, তথাপি তিনি ঐপ্রকার ভক্তবশ্যতা দেখাইয়াছিলেন। হে মহারাজ! ভগবানের প্রসাদ অন্য ব্যক্তিগণ প্রাপ্ত হয় সত্য, কিন্তু মুক্তিপ্রদ ভগবান্ মুকুন্দ হইতে যশোদাগোপী যাহা প্রাপ্ত হইলেন, তাহা কি ব্রহ্মা, কি শিব, কি অঙ্গাশ্রিতা লক্ষ্মী, কাহারও কখনও লভ্য হয় নাই।’

    (ভা ৯ |৪ |৬৩-৬৬, ৬৮ শ্লোকে শ্রীভগবানের উক্তি—)

    “অহং ভক্তপরাধীনো হ্যস্বতন্ত্র ইব দ্বিজ।
    সাধুভির্গ্রস্তহৃদয়ো ভক্তৈর্ভক্তজনপ্রিয়ঃ ||

    নাহমাত্মানমাশাসে মদ্ভক্তৈঃ সাধুভিৰ্বিনা।
    শ্রিয়ঞ্চাত্যন্তিকীং ব্রহ্মন্ যেষাং গতিরহং পরা॥

    যে দারাগারপুত্রাপ্ত-প্রাণান্ বিওমিমং পরম। হিত্বা মাং শরণং যাতাঃ কথং তাংস্ত্যক্তুমুৎসহে॥ ময়ি নির্বদ্ধহৃদয়াঃ সাধবঃ সমদর্শনাঃ। বশে কুর্বন্তি মাং ভক্ত্যা সৎস্ত্রিয়ঃ সৎপতিং যথা॥ সাধবো হৃদয়ং মহ্যং সাধূনাং হৃদয়স্ত্বহম্। মদন্যত্তে ন জানান্তি নাহং তেভ্যো মনাগপি॥

    অর্থাৎ “হে বিপ্র ! আমি অস্বতন্ত্রের সদৃশ; কেন না, আমি ভক্তের অধীন। ভক্তই আমার একমাত্র প্রিয়; এই হেতু সাধু- ভক্তগণ- কর্তৃকই মদীয় হৃদয় অধিকৃত হইয়াছে। হে তাপসপ্রবর! আমিই যাঁহাদের পরমা গতি, সেই সাধুগণ ব্যতীত স্বীয় আত্মা বা অত্যন্তিকী শ্ৰীও আমার প্রিয় নহে। বস্তুতঃ যাঁহারা পুত্র, ভার্যা, দেহ, স্বজন, ধন, প্রাণ, ইহলোক, পরলোক, সমস্তই বিসর্জনপূর্বক আমারই শরণ গ্রহণ করিয়াছেন, আমি কিরূপে তাঁহাদিগকে পরিত্যাগ করি? অহো! সতী নারী যেমন সৎপতিকে বশীভূত করে তদ্রূপ সর্বত্র সমদর্শী সাধুগণ মৎপ্রতি নিজ-নিজহৃদয় হৃদয় বন্ধনপূর্বক আমাকে বশীভূত করিয়াছেন। যাঁহারা আমাতে নিজ নিজ হৃদয় সমর্পণ করেন, আমি তাঁহাদিগের হৃদয় জানি। আমাকে ভিন্ন তাঁহারা যেরূপ অপরকাহাকেও জানেন না এবং আমিও তদ্রূপ তাঁহাদিগকে ভিন্ন অন্য কাহাকেও জানি না।’

    (ভাঃ ৯।৫।১৫-১৬ শ্লোকে শ্রীভগবানের প্রতি দুর্বাসার উক্তি—)

    “দুষ্করঃ কো নু সাধুনাং দুস্ত্যজো বা মহাত্মনাম্।
    যৈঃ সংগৃহীতো ভগবান্ সাত্বতামৃষভো হরিঃ॥
    যন্নামশ্রুতিমাত্রেণ পুমান্‌ ভবতি নির্মলঃ।
    তস্য তীর্থপদঃ কিংবা দাসানামবশিষ্যতে॥’’

    অর্থাৎ যাঁহারা সাত্বতনাথ ভগবান্ মাধবের ধারণকারী সেই সমস্ত মহাত্মা সাধুগণের দুষ্কর এবং দুঃসাধ্য কি আছে? যাঁহার নাম-শ্রবণ-মাত্র মানব নির্মলতা প্রাপ্ত হয়, তীর্থপাদ সেই প্রভুর কিঙ্করগণের সম্বন্ধে কোন্ কার্য অবশিষ্ট থাকিতে পারে?’ ।

Page execution time: 0.0397357940674 sec