Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 42

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • তোমরা যে আমারে শিখাও বিষ্ণুধর্ম॥
    তেঞি বুঝি,—আমার উত্তম আছে কর্ম॥

    আমার প্রচুর প্রাক্তন সৌভাগ্য বর্তমান থাকায় তোমরা আমাকে ভগবদ্ধর্ম শিক্ষা দিতেছ। ইহামুত্রফলভোগকামাত্মক কর্মই আগমাপায়ী, অসদ্ধর্ম, স্মার্তধর্ম বা অভক্তিপর অবৈষ্ণব শাক্তেয়-ধর্ম। উহা ইন্দ্রিয়তর্পণপর ভাগ্যহীন অহঙ্কার- বিমূঢ় কর্মকর্তৃগণকে প্রথমতঃ স্বর্গসুখাদি অনিত্য আপাত সংসারসুখ, পরে ত্রিতাপ-দুঃখ প্রদান করে। সাধারণ স্মার্তধর্মে যে সকল ভক্তিহীন সুনীতি, জ্ঞান ও বৈরাগ্যের কথা আছে, তাহা আপাত-প্রেয়ঃ বলিয়া বোধ হইলেও শ্রেয়ঃপথ নহে; উহার ফল-অনিত্য ও পরিণামে মন্দ প্রসব করে; কিন্তু ভগবদ্ধর্মানুশীলন-ফলে জীবের নিত্য-অমিশ্র-কল্যাণের উদয় হয়।

    বিষ্ণুধর্ম—পরধর্ম, সদ্ধর্ম, ভগবদ্ধৰ্ম, আত্মধর্ম। যথা-(হঃ ভঃ বিঃ ১০ম বিঃ ) “তথা বৈষ্ণবধর্মাংশ্চ ক্রিয়মাণানপি। স্বয়ম্। সংপৃচ্ছেত্তদ্বিদঃ সাধূনন্যোহন্যপ্রীতিবৃদ্ধয়ে। শ্রদ্ধয়া ভগবদ্ধৰ্মান্ বৈষ্ণবায়ানুপৃচ্ছতে। অবশ্যং কথয়েদ্‌বিদ্বানন্যথা দোষভাগ্‌, ভবেৎ॥’’

    অর্থাৎ ‘স্বয়ং বৈষ্ণবধর্মের অনুষ্ঠান করিলেও পরস্পর প্রীতিবর্ধনার্থ তদ্ধর্মবিৎ সাধুগণের নিকট প্রশ্ন করিবে। শ্রদ্ধাযুক্ত ব্যক্তিকর্তৃক বৈষ্ণবধর্ম-সম্বন্ধে পুনঃ পুনঃ প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হইলে সেই ভক্ত-সকাশে ভগবদ্ধর্ম -কীর্তন সুধী-ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য, নতুবা দোষভাগী হইতে হয়।’

    “নাখ্যাতি বৈষ্ণবং ধর্মং বিষ্ণুভক্তস্য পৃচ্ছতঃ। কলৌ ভাগবতো ভূত্বা পুণ্যং যাতি শতাব্দিকম্॥’’

    অর্থাৎ ‘এই বিষয় আরও উক্ত আছে যে, হরিভক্ত- কর্তৃক বৈষ্ণবধর্ম-বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হইয়া কলিকালে তৎসকাশে ঐ ধর্ম কীর্তন না করিলে ভগবদ্ভক্তের শতবর্ষার্জিত পুণ্য ধ্বংস হয়।’

    (কাশীখণ্ডে দ্বারকা-মাহাত্ম্যে চন্দ্ৰশর্মার উক্তি—) “একাদশ্যাং ন ভোক্তব্যং কর্তব্যে জাগরঃ সদা। মহোৎসবঃ প্রকৰ্তব্যঃ প্রত্যহং পূজনং তব। পলার্ধেনাপি বিদ্ধন্তু ভোক্তব্যং বাসরং তব। ত্বৎপ্রীত্যাহষ্টৌ ময়া কার্ষা দ্বাদশ্যো ব্রতসংযুতাঃ । ভক্তিৰ্ভাগবতী কার্ষা প্রাণৈরপি ধনৈরপি। নিত্যং নামসহস্ৰন্তু পঠনীয়ং তব প্রিয়ম্‌ । পূজা তু তুলসীপত্রৈর্ময়া কার্যা সদৈব হি। তুলসী-কাষ্ঠসংভূতা মালা ধার্যা সদা ময়া। নৃত্যগীতং প্রকর্তব্যং সংপ্রাপ্তে জাগরে তব। তুলসীকাষ্ঠসম্ভূত-চন্দনেন বিলেপনম্‌ | করিষ্যামি তবাগ্রে চ গুণানাং তব কীর্তনম্‌। মথরায়াং প্রকর্তব্যং  প্রত্যব্দং গমনং ময়া । ত্বৎকথা-শ্রবণং কার্যং প্রযত্নতঃ । নৈবেদ্য-ভক্ষণঞ্চাপি করিষ্যামি যতব্রতঃ। নির্মাল্যং শিরসা ধার্যং ত্বদীয়ং সাদরং ময়া। তব দত্ত্বা যদিষ্টন্তু ভক্ষণীয়ং মুদা ময়া। তথা তথা প্রকর্তব্য তব তুষ্টিঃ প্রজায়তে। সত্যমেতন্ময়া কৃষ্ণ তবাগ্রে পরিকীর্তিতম্‌॥’’

    অর্থাৎ ‘একাদশী দিনে আহার করিব না, নিরন্তর জাগরণ করিব; প্রতিদিন মহোৎসব সহকারে তোমার অর্চন করিব; একাদশী-জন্মাষ্টম্যাদি ত্বদীয়-দিন যদি অর্ধপল দ্বারাও বিদ্ধ হয়, তাহা হইলেও তত্তদ্দিনে আহার করিব; ত্বৎপ্রীত্যর্থ ব্রতসমন্বিত অষ্ট মহাদ্বাদশী রক্ষা করিব; ধনদ্বারা ও প্রাণপণ করিয়াও ভাগবতী ভক্তির অনুষ্ঠান করিব; প্রত্যহ ত্বৎপ্রিয় সহস্র নাম অধ্যয়ন করিব; নিরন্তর তুলসীর দ্বারা তোমারই অর্চন করিব; তুলসীকাষ্ঠময়ী মালা ধারণ করিব; একাদশী প্রভৃতিতে দিবারাত্রি জাগরণ করিয়া নৃত্য-গীতানুষ্ঠান করিব; অঙ্গে তুলসীকাষ্ঠ-জাত চন্দন লেপন করিব, ত্বৎপুরোভাগে ত্বদীয় গুণরাশি কীর্তন করিব; বর্ষে বর্ষে মথুরাপুরে গমন এবং ত্বৎকথা-শ্রবণ ও ত্বৎসম্বন্ধি পুস্তক অধ্যয়ন করিব; প্রতিদিন সযত্নে ত্বদীয় চরণোদক শিরোদেশে ধারণ করিব; যথা-নিয়মে ত্বদীয় নৈবেদ্য সেবন করিব; সাদরে মস্তকে তোমার নির্মাল্য ধারণ করিব এবং তোমাকে অগ্রে নিবেদনপুর্বক প্রিয়-দ্রব্য ভোজন করিব। হে কৃষ্ণ! আমি তোমার সম্মুখে সত্য করিয়া কহিতেছি যে, যে-কার্যে তোমার প্রীতি সাধন হয়, যথাবিধি তাহারই আনুষ্ঠান করিব।’

    (ভাঃ ৭।৭।৩০-৩২ শ্লোকে—) “গুরুশ্রূষয়া ভক্ত্যা সর্বলাভার্পণে চ ।সঙ্গেন সাধুভক্তানামীশ্বরারাধনেন চ ॥           শ্রদ্ধয়া তৎকথায়াঞ্চ কীর্তনৈর্গুণকর্মণাম্‌। তৎপাদাম্বুরুহধ্যানাৎ তল্লিঙ্গেক্ষার্হণাদিভিঃ॥ হরিঃ সর্বেষু ভূতেষু ভগবানাস্ত ঈশ্বরঃ। ইতি ভূতানি মনসা কামৈস্তৈঃ সাধু মানয়েৎ॥’’

    অর্থাৎ “গুরু-সেবা, গুরুভক্তি, গুরুকে প্রাপ্তদ্রব্য দান, সাধু ও ভাগবত সংসর্গ, ঈশ্বরোপাসনা, ভগবৎকথায় শ্রদ্ধা, ভগবানের গুণ-লীলা- কীর্তন, তৎপাদপদ্ম-চিন্তন, তন্মুর্তিসমূহদর্শন ও পূজাদি, সর্বভূতে ভগবান্‌ হরির অধিষ্ঠান-চিন্তনপূর্বক সর্বভূতকে অভীষ্ট সমূহ দ্বারা সম্যক সম্মানন করিব।’

    (ভাঃ ১১। ২। ৩৩ শ্লোকে বিদেহরাজ নিমির প্রতি নবযোগেন্দ্রের অন্যতম কবি-মুনির উক্তি—)

    “যে বৈ ভগবতা প্ৰোক্তা উপায়া হ্যাত্মলব্ধয়ে।
    অঞ্জঃ পুংসামবিদুষাং বিদ্ধি ভাগবতান হি তান্॥’’

    অর্থাৎ “হে রাজন্‌! ভগবান্ মূঢ়বুদ্ধি-ব্যক্তিগণের অনায়াসে আত্মলাভের জন্য যে-সমস্ত উপায় উপদেশ দিয়াছেন, তাহা ভাগবত-ধর্ম বলিয়া জানিবে।

    (১১।২।৩-৩০ শ্লোকে বিদেহরাজ নিমির প্রতি নবযোগেন্দ্রের অন্যতম প্রবুদ্ধ-মুনির উক্তি—“সর্বতো মনসোহসঙ্গমাদৌ সঙ্গঞ্চ সাধুষু। দয়াং মৈত্রীং প্রশ্রয়ঞ্চ ভূতেষ্বদ্ধা। যথোচিতম্ ॥ শৌচং তপস্তিতিক্ষাঞ্চ মৌনং স্বাধ্যায়মার্জবম্‌। ব্রহ্মচর্যমহিংসাং চ সমত্বং দ্বন্দ্বসংজ্ঞয়োঃ ॥ সর্বত্রাত্মেশ্বরান্বীক্ষাং কেবল্যমনিকেততাম্‌ । বিবিক্তচীরবসনং সন্তোষং যেন কেনচিৎ ॥ শ্রদ্ধাং ভাগবতে শাস্ত্রেহনিন্দামন্যত্র চাপি হি। মনোবাক্বর্মদণ্ডঞ্চ সত্যং শমদমাবপি॥ শ্রবণং কীর্তনং ধ্যানং হরেরদ্ভুতকর্মণঃ । জন্ম-কর্ম-গুণানাঞ্চ তদর্থেহখিলচেষ্টিতম্॥ ইষ্টং দত্তং তপ জপ্তং বৃত্তং যচ্চাত্মনঃ প্রিয়ম্। দারান্‌ সুতান্‌ গৃহান্ প্রাণান্ যৎ পরস্মৈ নিবেদনম্‌॥ এবং কৃষ্ণাত্মনাথেষু মনুষ্যেষু চ সৌহৃদম্। পরিচর্যাং চোভয়ত্ৰ মহৎসু নৃষু সাধুষু॥ পরস্পরানুকথনং পাবনং ভগবদ্‌যশঃ। মিথো রতির্মিথ স্তষ্টির্নিবৃত্তির্মিথ আত্মনঃ॥’’

    অর্থাৎ ‘হে নৃপ! অগ্রে সর্ব-বিষয় হইতে চিত্তের অনুরাগ বিসর্জনপূর্বক সাধুসঙ্গ করিতে হইবে; তদনন্তর ক্রমে-ক্রমে সর্বজীবে দয়া, সজাতীয়াসয়স্নিগ্ধ সমশীল ঈশ্বরভক্তের সহিত সৌহার্দ, আপনা হইতে শ্রেষ্ঠ-বৈষ্ণবের প্রতি সম্মান-শিক্ষা, বাহ্যাভ্যন্তর শৌচ, তপ (স্বধর্মানুষ্ঠান) তিতিক্ষা (ক্ষমা), মৌন (বৃথা-বাক্য-ত্যাগ), স্বাধ্যায়, আর্জব (সরলতা) ব্রহ্মচর্য, অহিংসা, শীত-উষ্ণ- সুখ-দুঃখাদি-সহনে শিক্ষা, সর্বত্রসচ্চিদ্‌রূপ আত্মার দর্শন, ঈশ্বরকে নিয়ন্তৃরূপে দর্শন, দুর্জন-শূন্য স্থানে স্থিতি, গৃহপ্রভূতিতে নিরভিমান, নির্জন-পতিত পবিত্র বল্কল-ধারণ এবং যে কোনরূপে হউক, সন্তোষ শিক্ষা করিবে। ভাগবত-শাস্ত্রে শ্রদ্ধা, শাস্ত্রান্তরে অনিন্দা, হরিতওষণরূপ ভজনদ্বারা মনের, বাক্যের ও দেহের দণ্ড বিধানরূপ ত্ৰিদণ্ডধারণ ও দম (বাহ্যেন্দ্রিয়-নিগ্রহ), সত্যকথন, শম (অন্তরিন্দ্রিয়-নিগ্রহ) শিক্ষা করিবে। বিচিত্র-লীলাময় শ্রীহরির জন্ম, লীলা ও গুণসমূহ শ্রবণ, কীর্তন ও চিন্তন করিবে এবং শ্রীহরির প্রীতি বা সুখবিধানরূপ সুষ্ঠু তোষণওদ্দেশেই নিখিল-ক্রিয়ার অনুষ্ঠান করিবে। একমাত্র পরমেশ্বরের উদ্দেশেই ইষ্ট, দান, জপ, তপ, সদাচার, প্রিয়দ্রব্য, ভার্যা, সন্ততি, গৃহ ও প্রাণ নিবেদন করিবে। এইপ্রকার হরিভক্ত -ব্যক্তির সহিত সৌহার্দ স্থাপন করিবে, বিষ্ণুদাস-জ্ঞানে স্থাবর জঙ্গমের সহিত ব্যবহার করিবে। অধিকন্তু মানবগণের মধ্যে ধার্মিকের প্রতি এবং ধার্মিকের মধ্যে আবার সাধুর প্রতি সেবার অনুষ্ঠান অভ্যাস করিবে। তৎপরে, পরস্পর ভগবান্‌ বিষ্ণুর অপ্রাকৃত যশোরাশির কথোপকথন, পরস্পর প্রীতি, তুষ্টি ও হরিবৈমুখ্য-দুঃখনিবারণ অভ্যাস করিবে।’

    (ভাঃ ১১।১১।৩৪-৪১, ১১।১৯২০-২৩ ও ১১।২৯।৯ শ্লোকে ভগবানের উক্তি—) “মল্লিঙ্গ-মদ্ভক্তজন-দর্শনস্প র্শর্র্চনন। পরিচর্যা স্তুতিঃ প্রহ্বঅগুণকর্মানুকীর্তনম্॥ মৎকথা-শ্রবণে শ্রদ্ধা মদনুধ্যানমুদ্ধব। সৰ্বলাভোপহরণং দাস্যেনাত্মনিবেদনম ॥ মজ্জন্মকর্মকথনং মম পর্বানুমোদনম্‌। গীত-তাণ্ডব-বাদিত্রগোষ্ঠীভির্মদ্‌গৃহোৎসবঃ ॥যাত্রা বলিবিধানঞ্চ সর্ববার্ষিকপর্বসু। বৈদিকী। তান্ত্রিকী দীক্ষা মদীয়ব্রতধারণম্॥ মমার্চাস্থাপনে শ্রদ্ধা স্বতঃ সংহত্য চোদ্যমঃ। উদ্যানোপবনাক্ৰীড় পুরমন্দিরকর্মণি॥ সন্মার্জনোপলেপাভ্যাং সেবকমণ্ডলবর্তনৈঃ সবকলবতন ৷ গৃহশু শ্রূষণং মহ্যং দাসবদ্‌যদমায়য়া ॥ অমানিত্বমদম্ভিত্বং কৃতস্যাপরিকীর্তনম্‌। অপি দীপাবলোকং মে নোপযু ঞ্জ্যান্নিবেদিতম্॥ যদযদিষ্টতমং লোকে যচ্চাতিপ্রিয়মাত্মনঃ। তত্তন্নিবেদয়েন্মহ্যং তদানন্ত্যায় কল্পতে॥ন’’ * * শ্রদ্ধামৃতকথায়াং মে শশ্বন্মদনুকীর্তনম্‌ । পরিনিষ্ঠা চ পূজায়াংস্তুতিভিঃ স্তবনং মম॥ আদরং পরিচর্যায়াং সর্বাঙ্গৈরভিবন্দনম্‌। মদ্ভক্তপূজাভ্যধিকা সর্বভূতেষু মন্মতিঃ । মদর্থেষ্বঙ্গচেষ্টা চ বচসা মদ্‌গুণেরণম্। ময্যর্পণঞ্চ মনসঃ সর্বকামবিবর্জনম্ ॥ মদর্থেহর্থপরিত্যাগো ভোগস্য চ সুখস্য চ। ইষ্টং দত্তং হুতং জপ্তং মদর্থং যদ্‌ব্রতং তপঃ॥’’ ** কু্র্যাৎ সর্বাণি কর্মাণি মদর্থং শনকৈঃ স্মরন্। ময্যর্পিতমনশ্চিত্তো মদ্ধর্মাত্মমনোরতিঃ ॥ দেশান্ পুণ্যানাশ্রয়েত মদ্ভক্তৈঃ সাধুভিঃ শ্রিতান্। দেবাসুরমনুষ্যেযু মদ্ভক্তচরিতানি চ। পৃথক্‌ সত্ৰেণ বা মহ্যং প র্বযাত্রামহোৎসবান্। কারয়েন্‌নৃত্যাগীতাদ্যৈর্মহারাজবিভূতিভিঃ ॥ মামেব সর্বভূতেষু বহিরন্তরপাবৃতম্‌ । ঈক্ষেতাত্মনি চাত্মানং যথা খমমলাশয়ঃ॥’’

    অর্থাৎ “হে উদ্ধব! আমার শ্রীমূর্তির অথবা মদীয়-ভক্তের দর্শন, অর্চন, সেবা, স্তব, প্রণাম ও গুণানুবাদ করিবে, আমার কথা শ্রবণে শ্রদ্ধা, আমার অনুধ্যান, আমাকে প্রাপ্তদ্রব্যপ্রদান, দাস্যভাবে আত্মার্পণ, আমার জন্ম-লীলা-কীর্তন, জন্মাষ্টম্যাদি মদীয় পর্বাহের অনুমোদন, ‘আমার নিকেতনে নৃত্যগীতবাদ্য ও সপরিবারে মন্দিরে উৎসবাদি কার্য করিবে। সাংবাৎসরিক যাবতীয় পর্বদিবসে মদীয় যাত্রা, বলি-বিধান (পুষ্পদি উপহার -প্রদান), বৈদিকী ও তান্ত্রিকী দীক্ষা মদ্‌ব্রত-ধাবণ, আমার শ্রীমূর্তি-প্রতিষ্ঠায় শ্রদ্ধা, নিজে বা অন্যান্য ব্যক্তির সহিত সমবেত হইয়া উদ্যান, উপবন, ক্রীড়া-গৃহ, পূর ও মন্দির নির্মাণাদি মৎপ্রসাদ-সাধন-কার্যে উদ্যম, সম্মার্জন, গোময়-লেপন, সলিল-সেচন, সর্বত্র ভদ্র-মণ্ডলাদি-বিরচন, ভৃত্যবৎ নিষ্কপটভাবে আমার মন্দিরের সেবা, মানশূন্যত্ব, অদাম্ভিকত্ব, অনুষ্ঠিত সতকার্যের শ্লাঘা-শূন্যতা প্রভৃতি অনুষ্ঠান করিবে এবং আমার উদ্দেশে যে দীপ প্রদত্ত হইবে, তাহার আলোকে অন্য কোন ক্রিয়ার অনুষ্ঠান করিবে না। যাহা যাহা সর্বজনবাঞ্ছিত এবং যে যে দ্রব্য নিজের প্রিয়তম, তত্তৎসমস্তই আমাকে নিবেদন করিবে। * * নিরন্তর সুধাময়ী আমার কথায় রতি, সতত আমার নাম কীর্তন, আমার পূজায় নিষ্ঠা, অবিরত আমার স্তুতিবাদ, আমার সেবায় আদর, সর্বাঙ্গদ্বারা আমার অভিবন্দন, সর্বশ্রেষ্ঠজ্ঞানে মদ্ভক্তপূজা, সর্বভূতে আমার অধিষ্ঠান বুদ্ধি, আমার উদ্দেশে অঙ্গ-চেষ্টা (ভক্তি-কাৰ্যানুষ্ঠান), বাক্যদ্বারা আমার গুণ-বর্ণন, আমাতে চিত্ত-নিবেশ, সর্বকাম-বিসর্জন, আমার প্রত্যর্থে ধন, ভোগ ও সুখ বর্জন, আমার নিমিত্ত ইষ্টাপূর্ত, দান, হোম, জপ, ব্রত ও তপ প্রভৃতি অনুষ্ঠান কর্তব্য। ** আমাতে চিত্ত সমর্পণ ও আমাকে স্মরণপূর্বক ধর্মবুদ্ধি হইয়া আমার প্রীতির নিমিত্ত শনৈঃ শনৈঃ যাবতীয়-কর্মের অনুষ্ঠান করিবে। যেদেশে মদীয় ভক্ত সাধু অবস্থান করেন, সেই পবিত্র দেশের আশ্রিত হইবে এবং দেব, দৈত্য ও মানবগণের মধ্যে মদীয় ভক্ত যেরূপ আচরণ করেন, তদনুরূপ অনুষ্ঠান করিবে। পরস্পর সমবেত হইয়া হউক, অথবা পৃথরূপেই হউক, নৃত্যগীতাদি ও মহারাজ-বিভূতি দ্বারা আমার প্রীতির নিমিত্ত যাত্রা-মহোৎসবাদি সম্পাদন করিবে। বিমলমতি সাধুব্যক্তি সর্বভূতের অন্তর্বাহ্যে। ও আত্মাতে গগনবৎ অনাবৃতভাবে নিরীক্ষণ করিবেন।’

    (ভাঃ ১১।২।১২ শ্লোকে বসুদেবের প্রতি শ্রীনারদের উক্তি) “শ্রূতোহনুপঠিতো ধ্যাত আদৃতো বানুমোদিতঃ । অদ্যঃ পুনাতি সদ্ধর্মো দেববিশ্বদ্রুতোহপি॥’’

    অর্থাৎ, “হে সাত্বতশ্রেষ্ঠ! ভাগবতধর্মের মহিমা পরমাদ্ভূত; উহা শ্রবণ, ‘অধ্যয়ন, চিন্তন, সাদরে গ্রহণ, স্তবন অথবা অনুমোদন করিলে দেব-জগদ্-দ্রোহী ব্যক্তিও সদ্য পবিত্রতা লাভ করে।’

    (ভাঃ ১১।২।৩৫ শ্লোকে বিদেহ-রাজ নিমির প্রতি নবযোগেন্দ্রের অন্যতম শ্রীকবি মুনির উক্তি—)

    “যানাস্থায় নরো রাজন্‌ প্রমাদ্যেত কৰ্হিচিৎ
    ধাবন্নিমীল্য বা নেত্রে ন স্খলেন্ন পতেদিহ॥’’

    অর্থাৎ, হে রাজন! ভাগবত-ধর্মের আশ্রিত হইয়া নেত্র নিমীলন-পূর্বক ধাবিত হইলেও কদাচ কোনরূপ বিঘ্ননিবন্ধন সেই ব্যক্তিকে স্খলিত বা পতিত হইতে হয় না।’

    (ভাঃ ১১।৩।৩৩ শ্লোকে বিদেহ-রাজ নিমির প্রতি নবযোগেন্দ্রের অন্যতম শ্রীপ্রবুদ্ধ-মুনির উক্তি—)

    “ইতি ভাগবতান্‌ ধর্মান্ শিক্ষন্ ভক্ত্যা তদুখয়া।
    নারায়ণপরো মায়ামঞ্জস্তরতি দুস্তরাম্॥’’

    অর্থাৎ, ‘এই প্রকারে ভাগবত-ধর্মে শিক্ষিত হইয়া তাহা হইতে প্রেমভক্তি সঞ্চার-নিবন্ধন হরিপরায়ণ ব্যক্তি দুষ্পারা মায়াকে অতিক্রম করেন।‘

    (ভাঃ ১১।২৯।২০ শ্লোকে উদ্ধবের প্রতি কৃষ্ণের উক্তি—)

    “ন হ্যাঙ্গোপক্রমে ধ্বংসো মদ্বর্মস্যোদ্ধবাণ্বপি।
    ময়া ব্যবসিতঃ সমাঙ্‌নির্গুণত্বাদনাশিষঃ॥’’

    অর্থাৎ, ‘হে প্রিয় উদ্ধব! এই মদীয় নিষ্কাম-ধর্মের প্রারম্ভে বৈগুণ্যোৎপত্তি হইলেও তদ্বারা আমার ধর্মের ধ্বংসের কিছুমাত্র সম্ভাবনা নাই; কারণ আমার নির্গুণতা-নিবন্ধন মৎকর্তৃকই এই ধর্ম সম্পূর্ণরূপে স্থিরীকৃত, অথবা মোক্ষের নৈষ্কর্ম্য কেবল ফলভোগরাহিত্যহেতু; তদপেক্ষাও আমার এই ধর্ম যে সমীচীন,—ইহা নিশ্চিত।’

    উত্তম কর্ম,—প্রচুর প্রাক্তন সুকৃত বা সৌভাগ্য।

Page execution time: 0.0490911006927 sec