স্বয়ং প্রভু হইয়াও দাসাভিমানে প্রভুর স্বভক্তস্তুতি-দ্বারা
বৈষ্ণব-মাহাত্মা জ্ঞাপন—
তোমরা সে পার’ কৃষ্ণভজন দিবারে।
দাসেরে সেবিলে কৃষ্ণ অনুগ্রহ করে॥
দাসে ...করে, এবং তোমা ....পাই,( ইতিহাস-সমুচ্চয়ে লোমশ-বাক্য) “তস্মাদ্বিষ্ণুপ্ৰসাদায় বৈষ্ণবান্ পরিতোষয়েৎ। প্রসাদসুমুখো বিষ্ণুস্তেনৈব স্যান্ন সংশয়ঃ॥’’
অর্থাৎ ‘এই হেতু শ্রীহরির অনুগ্রহ-লাভাৰ্থ বৈষ্ণবগণের তুষ্টিবিধান করিবে, তাহা হইলেই নিঃসন্দেহে শ্রীহরি প্রসন্নমুখ হইবেন’।
(ঐ ইতিহাস সমুচ্চয়ে শ্রীভচদ্বাক্য)
“ন মে প্রিয়শ্চতুর্বেদী মদ্ভুক্তঃ শ্বপচঃ প্রিয়ঃ ।
তস্মৈ দেয়ং ততো গ্রাহ্যং স চ পূজ্যো যথা হ্যহম্॥’’
অর্থাৎ ভগবানের উক্তি আছে যে,—মদ্ভক্তিপরায়ণ না হইলে চতুর্বেদবিৎ স্বাধ্যায়-রত ব্যক্তিও মৎপ্রিয় হইতে পারে না; ভক্তিমান্ হইলে শ্বপচব্যক্তিও আমার প্রিয় হয়; তদ্রপ শ্বপচকুলোদ্ভূত হইলেও ভক্তকেই দান করিবে, তৎসকাশ হইতে উচ্ছিষ্ট গ্রহণ করিবে, সেই ভক্ত—মতসদৃশ পূজনীয়॥”
(আদিপুরাণে——) “যে যে ভক্তজনাঃ পাৰ্থন মে ভক্তাশ্চ তে জনাঃ। মদ্ভক্তানাঞ্চ যে ভক্তাস্তে মে ভক্ততমা মতাঃ॥’’
অর্থাৎ ‘হে অর্জুন! যাঁহারা আমার ভক্ত, তাঁহারা প্রকৃত ভক্ত বলিয়া গণনীয় নহেন; মদীয় ভক্তগণের ভক্তেরাই মদীয় সর্বোত্তম ভক্ত বলিয়া পরিকীর্তিত।
(বৃহন্নারদীয়ে যজ্ঞমাল্যুপাখ্যানাস্তে)
‘হরিভক্তিরতান্ যস্তু হরিবুদ্ধ্যা প্রপুজায়েৎ |
তস্য তুষ্যন্তি বিপ্রেন্দ্রা ব্রহ্মবিষ্ণুশিবাদয়ঃ ॥
অর্থাৎ ‘হে দ্বিজসত্তম ! বিষ্ণুভক্তিনিষ্ঠ বৈষ্ণবদিগকে শ্রীহরির অভিন্ন অঙ্গ-জ্ঞানে অর্চন করিলে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও হর প্রভৃতি সকলেরই প্রীতি সাধিত হয়।
(পাদ্মোত্তরখণ্ডে শ্রীশিবোমাসংবাদে-) “অৰ্চয়িত্বা তু গোবিন্দং তদীয়ান্নার্চয়েত্তু যঃ। ন স ভাগবতো জ্ঞেয়ঃ কেবলং দাম্ভিক স্মৃতঃ ॥ তস্মাৎ সর্ব প্রযত্নেন বৈষ্ণবান্ পূজয়েৎ সদা॥’’
অর্থাৎ ‘বৈষ্ণব পূজা পরিত্যাগপূর্বক গোবিন্দের অর্চন করিলেও তাহাকে ভগবদ্ভক্ত বলা যায় না, সে দাম্ভিক বলিয়া বিদিত; সুতরাং সর্বদা যত্নসহকারে বৈষ্ণবের অর্চন করিবে।’
(ভাঃ ১১।২৬। ৩৪ শ্লোকে উদ্ধবের প্রতি শ্রীকৃষ্ণোক্তি—)
“সন্তো দিশন্তি চক্ষুংষি বহিরৰ্কঃ সমুথিতঃ।
দেবতা বান্ধবাঃ সন্তঃ সন্ত আত্মাহমেব চ।’’
অর্থাৎ ‘সাধুগণ অন্তর্হৃদয়ে চক্ষু দান করেন। সূর্য সমুথিত হইয়া বাহিরের আলোক দিয়া থাকেন। সাধুগণই দেবতা, বান্ধব, আত্মা এবং আমার নিজন।’
(ভাঃ ৭।৫।৩২ শ্লোকে হিরণ্যকশিপুপ্রতি প্রহ্লাদোক্তি—)
“নৈষাং মতিস্তাবদুরুক্রমাঙ্ঘ্রিং স্পৃশত্যনৰ্থাপগমো যদৰ্থঃ ॥
মহীয়সাং পাদরজোহভিষেকং নিষ্কিঞ্চনানাং ন বৃণীত যাবৎ॥’’
অর্থাৎ ‘যে কাল পর্যন্ত গৃহব্রত মানবগণের মতি নিষ্কিঞ্চন ভগবদ্ভক্তগণের পদরজে অভিষেক স্বীকার না করে, সেকাল পর্যন্ত উহা কখনই উরুক্ৰম কৃষ্ণের পাদপদ্ম স্পর্শ করিতে পারে না; যেহেতু কৃষ্ণপাদপদ্মস্পর্শই জীবের সমস্ত অনর্থনাশের একমাত্র হেতু ।’
ভাঃ ৯।৪।৬৩, ৬৬, ৬৮ শ্লোকে দুর্বাসার প্রতি ভগবদুক্তি—)
“অহং ভক্তপরাধীনো হ্যস্বতন্ত্র ইব দ্বিজ।
সাধুভির্গ্রস্তহৃদয়ো ভক্তর্ভক্তজনপ্রিয়ঃ ॥
ময়ি নির্বদ্ধহৃদয়াঃ সাধবঃ সমদর্শনাঃ ॥
বশে কুর্বন্তি মাং ভক্ত্যা সৎস্রিয়ঃ সৎপতিং যথা॥
সাধবো হৃদয়ং মহ্যং সাধুনাং হৃদয়ন্ত্বহম্॥
মদন্যত্তে ন জানন্তি নাহং তেভ্যো মনাগপি॥’’
অর্থাৎ ‘হে দ্বিজ! আমি ভক্তপরাধীন, আমি স্বাধীন নই, পরস্তু ভক্তপরতন্ত্র; পরম-সাধু ভক্তগণকর্তৃক আমার হৃদয় সর্বদা বশীভূত; আমি—ভক্তজনপ্রিয়। * * সতী স্ত্রী যেমন সাধুপতিকে বশ করে, সেইরূপ আমাতে আবদ্ধ হৃদয় সমদর্শী সাধুগণ। আমাকে প্রেমভক্তিদ্বারা বশ করেন। ** সাধুগণই আমার হৃদয়, আমিও সাধুগণের হৃদয়; আমা ব্যতীত তাঁহারা আর কিছু জানেন না এব আমিও তাঁহাদিগকে ছাড়িয়া আর কিছুই জানি না।’
(ভাঃ ১০। ৫১। ৫৩ শ্লোকে কৃষ্ণের প্রতি মুচুকুন্দের উক্তি—)
“ভর্বাপবর্গো ভ্রমতো যদা ভাবেজ্জনস্য ত র্হ্যচ্যুত সৎসমাগমঃ।
সৎসঙ্গমা যর্হি তদৈব সদগতৌ পরাবরেশে ত্বয়ি জায়তে মতিঃ॥।
অর্থাৎ জীব নানাযোনি ভ্রমণ করিতে করিতে কোন সৌভাগ্যক্রমে যখনই তাহার ভবক্ষয়োন্মুখ হয়, তখনই হে অচ্যুত! তাহার ভাগ্যে সাধুসঙ্গ-লাভ ঘটে। সাধুসঙ্গ হইলেই পরাবরেশ সদগতিস্বরূপ তোমাতে তাহার রতি জন্মে।