প্রভু বলে,—গোসাঞি এ নহে আশীর্ব্বাদ।”
হেন বল,-“তরে হউ কৃষ্ণের প্রসাদ॥
আধুনিক ঘর-পাগ্লা গৃহী গৌরাঙ্গ-পূজক মৃত নন্দীর দল দারী সন্ন্যাসীর মত পোষণ করিয়া করিয়া থাকেন ।দারী সন্ন্যাসিগণের চিত্তবৃত্তিতে ‘আশীর্বাদ’ বলিলেই মনোরমা ভার্যা লাভ, দরিদ্রের উপর আধিপত্য করিবার জন্য ধন, আভিজাত্যহীন জনগণের ব্রহ্মণাদি-বংশমর্যাদাসংরক্ষণ-পিপাসা, জড়বিদ্যালাভ প্রভৃতি সর্বতোভাবে প্রদর্শিত হয় ।শ্রীগৌরসুন্দর এই ঘর-পাগ্লা ‘বাওয়া ঠাকুর’ দলের অনুমোদন না করিয়া দারী সন্ন্যাসীর আশীর্বাদ-বিচারে দোষ প্রদর্শন করিলেন ।কামজীবিসম্প্রদায় নিষ্কাম পরমহংস বৈষ্ণবদিগের চিত্ত-বৃত্তি বুঝিতে পারে না বলিয়া বৈষ্ণবকে উহাদেরই ন্যায় মনে করে ।দারী সন্ন্যাসিগণ ক্রমশঃ জাতি গোস্বামীবাদের আবাহন করিয়াছেন ।শ্ৰীমন্মহাপ্রভু জাতিগোস্বামিবাদের আদৌ আদর করেন নাই, পরন্তু দারী গোস্বামিকে শিক্ষা দিবার উদ্দেশ্যে কৃষ্ণের প্রসাদকেই সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ আশীর্বাদ জানাইয়াছেন ।প্রাকৃত আশীর্বাদভিক্ষু জনগণ বিষ্ণুভক্তি-রহিত কাম-দগ্ধ অকিঞ্চিৎকর ব্যাপারকেই বহুমানন করে ।তৎকালে নিষ্কাম পারমহংস্য ভাগবত-ধর্ম বুঝিতে পারে না, স্মার্তানুগৃহীত অবৈষ্ণবতাকেই বৈষ্ণবতা জ্ঞান করে ।লৌকিক বিচার-মতে জাতিগোস্বামী বা দারী সন্ন্যাসিগণ জগতের নিকট ‘গোসাঁই’ খেতাব পাইবার জন্য ব্যস্ত হন ।মহাপ্রভুও সন্ন্যাসীকে সম্মান দিবার ছলনায় ‘গোসাঁই’ বলিয়া সম্বোধন করিলেন ।কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁহারা কখনও গোস্বামী হইতে পারেন না ।শ্রীমদ্ভাগবতে “অদান্তগোভির্বিশতাং তমিশ্রং” এবং রূপগোস্বামীর “বাচো বেগং মনসঃ ক্রোধবেগং” প্রভৃতি শ্লোকে শ্রীচৈতন্যদেবের মনোভাব পূর্বেই অভিব্যক্ত হইয়াছে।