আধ্যাক্ষিক জ্ঞানে ভক্তনিন্দা দ্বারা ভগবৎ কর্তৃক সংহার-প্রাপ্তি—
যে আমার দাসের সকৃৎ নিন্দা করে।
মোর নাম কল্পতরু সংহারে তাহারে॥
প্রপঞ্চে বিষ্ণুমায়া অনভিজ্ঞ জনের কর্তৃত্ব-ভোক্তৃত্বে ইন্ধন প্রদানপূর্বক ভগবদিচ্ছাক্রমে তাহাদিগকে প্রতারণা করিয়া থাকেন ।লোভী জীব স্বীয় স্বতন্ত্রতার অপব্যবহার-ফলে কখনও আপনাকে ‘মায়াবাদী’, কখনও অহঙ্কার-বিমূঢ়-ভাবে ত্রিগুণতাড়িত আপনাকে ‘দেবতা’ মনে করেন ।কৃষ্ণের আকর্ষণ হইতে আকৃষ্টের বিচ্ছিন্ন হইবার প্রয়াসের নামই ‘ভোগ’, আর কৃষ্ণে সেবোন্মুখ হইবার যত্নের নামই ‘ভক্তি’ ।যাহারা এহেন আশ্রিতের ভেদাংশকে নিরাশ্রিত জ্ঞানে ত্রিগুণ-তাড়িত কর্তৃত্বাভিমান মাত্র আরোপ করে, সেই অনভিজ্ঞ দ্বিপাদ পশু বহির্জগতে ভোগ নিরত হয় মাত্র এবং কৃষ্ণ ও তদ্ভক্তগণকে আদর করে না ।যখন তাহারা পশুবৃত্তিরূপ কর্তৃত্ব-সঙ্কোচ-মানসে ভগবানের সেবা করে ভক্তের সেবা-লাভে বঞ্চিত হয়, তখন তাহাদের ভক্তবিদ্বেষকেই ভগবদ্ভক্তি বলিয়া প্রকাশ করিবার ইচ্ছা ঘটে ।তজ্জন্য গৌরসুন্দর বলিতেছেন,—‘আমার প্রকাশের অবতার-সমূহের ও অন্তরঙ্গ ভক্তের এবং মদাশ্রিত ব্যক্তিবিশেষের আশ্রয়-বিগ্রহ শ্রীগুরুদেবের সহিত আমার ভেদ করিয়া যে ব্যক্তি আমার পূজার ছলনা করে, আমি তাহাদিগকে সংহার করিয়াই আমার দয়ার প্রকৃষ্ট পরিচয় দিয়া থাকি।’ ভগবদ্ভক্ত নিখিল সদ্গুণ বর্তমান ।মুক্তি তাঁহার দাসী,ভুক্তি তাঁহার আজ্ঞাবহ ।সুতরাং আধ্যক্ষিক দর্শনে প্রাকৃত বিচারে প্রত্যক্ষবাদী যে ভক্তের গর্হণ করেন—নিন্দা পরিবাদাদি করেন, সেরূপ দাম্ভিকতা করিলে ভগবান্ তাঁহাকে সংহারকরেন।