কৃষ্ণভক্তকে লঙ্ঘনপূর্বক বিষ্ণুপূজা-বিষ্ণু-অঙ্গে আঘাত করা মাত্র—
“মোর এই সত্য সবে শুন মন দিয়া।
যে আমারে পূজে মোর সেবক লঙ্ঘিয়া॥
শ্রীগৌরসুন্দর অদ্বৈতের অচিন্ত্যভেদাভেদ-তত্ত্ব শুনিয়া তাঁহার সকল নিজজনকে উহা মনোযোগের সহিত আলোচনা করিতে বলিলেন ।অদ্বৈতের উক্তি সমর্থনপূর্বক সেব্যের আসনে অধিষ্ঠিত হইয়া গৌরসুন্দর বলিলেন,—“সেব্য সেবকের মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্বন্ধ বর্তমান ।সুতরাং অর্চয়িত্বা তু গোবিন্দং তদীয়ান্নাৰ্চয়েত্তু যঃ ।ন স ভাগবতো জ্ঞেয়ঃ কেবলং দাম্ভিকঃ স্মৃতঃ॥’ভগবত্তত্বকে একটী প্রাকৃত জগতের খণ্ডিত অংশ জ্ঞান করিলে ভগবৎশরীরকে খণ্ড খণ্ড করিয়া কীর্তন করা হয় ।সেই সকল ধর্মের নামে হিংসা-প্রবৃত্তিমূলে খণ্ডিত বিচারভেদসমূহ নানাবিধ ধর্মমত সৃষ্টি করিয়া বাস্তবসত্য হইতে দূরে নিক্ষিপ্ত হইতেছে ।আমি পুরুষোত্তম, সেব্য-বিষয়-বিগ্রহ; আশ্রয়সমন্বিত না হইলে, আমার বিচিত্র বিলাস না থাকিলে, আমাকে নির্বিশিষ্ট বিচারকারাগারে আবদ্ধ করিলে এবং আমার অঙ্গ-প্রতঙ্গসমূহকে অঙ্গী হইতে বিচ্ছিন্ন করিলে যে প্রকার ধার্মিকতা-সাধন-সিদ্ধির ও প্রজল্পের বিড়ম্বনা জগতে দেখা যায়, ঐ প্রকার পূজা ও ধর্মানুশীলন পুরুষোত্তম আমার অঙ্গে অগ্নি নিক্ষেপ করিয়া পোড়াইবার প্রয়াস মাত্র।’’ বিষ্ণুভক্তি রহিত জনগণের মৎসরতা ও হিংসা প্রবৃত্তি—অদ্বয়জ্ঞান বিষ্ণুকে জড়জগতের হেয়তা আরোপ করিয়া খণ্ডিত করিবার প্রয়াস মাত্র; অথবা নিত্য-বিলাস-বিচিত্ৰতাতে বাধা দিয়া জড় ভোগের সহিত সমজ্ঞান-সেই পূর্ণ বিলাসের হানি করা মাত্র ।জাগতিক অনুভূতিতে যে দ্বাদশ প্রকার নশ্বর রস-বৈষম্য ‘রস’ নামে লক্ষিত হয়’ অচিন্ত্যভেদাভেদ-বিচার-সস্পন্ন আত্মা ঐগুলিকে ব্যতিরেক বিচারে কুণ্ঠিত করেন না ।মায়িক বিচার-রহিত হইয়া বৈকুণ্ঠ দর্শনই বিষ্ণুসেবার উন্মুখতা।