যজ্ঞাদি সর্বমূল গৌরসুন্দরের উপেক্ষাকারীর পূজা অদ্বৈতের অগ্রাহ্য—
বেদ, বিপ্র, যজ্ঞ, ধর্ম-সর্বমূল তুমি।
যে তোমা না ভজে, তা’র পূজ্য নহি আমি॥”
শ্রীচৈতন্যদেবের উপদিষ্ট সদুর্লভ কৃষ্ণপ্রেমে যাঁহাদের রুচি নাই এবং কৃষ্ণপ্রেমপ্রদাতা শ্রীচৈতন্যচরণে যাঁহারা সর্বতোভাবে আত্মসমর্পণ করিতে পারেন নাই, তাঁহারা অদ্বৈতপ্রভুর পূজা করিতে আসিলে অদ্বৈতপ্রভু কখনই তাঁহাদের সেবা গ্রহণ করেন না ।কতিপয় অনভিজ্ঞ জন বেদের একদেশ কর্মকাণ্ডে প্রতারিত হইয়া যে বৈতানিক যজ্ঞধর্মের আবাহন করেন, বেদের তাৎপর্য বোধের অভাবে চৈতন্যসেবাবঞ্চিত হইলে তাহাদের বাহ্যপ্রতীতি উহাদিগকে ন্যূনাধিক বৌদ্ধদিগের প্রতিযোগী করিয়া তুলিবে—অসুরগণের সহিত সংগ্রামে নিযুক্ত করত নিজ নিজ যাজ্ঞিকানুষ্ঠানের প্রশংসামাত্র করিয়া মূলতাৎপর্য ভগবৎপ্রতীতিকে বিস্মৃত করাইবে ।দৃশ্যাদৃশ্য জগতের বৈষ্ণব-প্রতীতিকে সাধ্য-জ্ঞান না করিয়া নিজ নিজ অনর্থময় অবস্থায় ত্রিগণতাড়িত হইয়া যে কর্তৃত্বাভিমান, তাহাতে সকল বস্তুর মূল আকর ও অধিষ্ঠান এবং সকল নশ্বর বস্তুর বহিঃপ্রতীতি লোকের কারণ যে তুমি, তোমাকে বাদ দিয়া যে প্রকার দাম্ভিকানুষ্ঠান ভগবদ্বিমুখ-সমাজে প্রবল আছে, তাহাদিগকে আমি কখনই আমার নিজ জন জানিব না, যেহেতু তাহারা বিষ্ণু বৈষ্ণব-অপরাধী ।গৌরসুন্দর অদ্বৈতপ্রভুর অবিবদমান অদ্বয়জ্ঞান শ্রবণ করিয়া সুখী হইলেন, “বদন্তি তত্তত্ববিদঃ” শ্লোকের অদ্বয়জ্ঞান-তাৎপর্য অদ্বৈতপ্রভুর মুখে শুনিয়া চৈতন্যদেব অচিন্ত্যভেদাভেদ-তত্ত্বের আচার্যরূপে মহাবিষ্ণু অদ্বৈতপ্রভুকে সমাদর করিলেন।