প্রভুর দৃশ্যকাব্যের বিধানে নৃত্যেচ্ছা ও কাব্যসজ্জাৰ্থ আদেশ—
একদিন প্রভু বলিলেন সবা-স্থানে।
আজি নৃত্য করিবাঙ অঙ্কের বিধানে॥
অঙ্ক—দশবিধ দৃশ্যকাব্যের অন্যতম।নাটকের পরিচ্ছেদ বিশেষকে অঙ্ক বলা হয়।উক্ত অঙ্কে মুখ্য বা গৌণভাবে নায়কের চরিত্র উল্লিখিত থাকিবে।উহাতে রসভাব প্রভৃতি স্ফুটরূপে প্রতীত হইবে।অঙ্ক নিবদ্ধ শব্দসমূহ অনায়াসবোধ্য হইবে এবং গদ্যসমূহ বহুসমাসাদি-যুক্ত হইবে না, উহাতে ক্ষুদ্র চূর্ণক থাকিবে।অবান্তর যে কোন একটা বিষয় অঙ্কে পরিসমাপ্ত হইবে।অবান্তর বিষয়ের পরিসমাপ্তি হইলেও মূলঘটনার সম্বন্ধরক্ষক একটী অংশ অঙ্কে নিবদ্ধ হইবে।পরন্তু ইহা অন্তিম অঙ্ক ব্যতীত অন্য অঙ্কেই জানিবে; কারণ, অন্তিম অঙ্কে বিষয়ের একান্তভাবে পরিসমাপ্তি হইয়া যায়, তাহাতে আর ভবিষ্যৎ কোন ঘটনার সম্বন্ধ থাকে না।এক অঙ্কে বহু প্রধান উদ্দেশ্য বর্ণিত হইবে না।বীজের উপসংহার অঙ্কে থাকিবে না।এই নিয়মও অন্তিম অঙ্ক ব্যতীত অন্য এই জ্ঞাতব্য।অঙ্কে বহু বৃত্তান্ত প্রকাশিত থাকিবে।গদ্যাংশ অধিক বিন্যস্ত থাকিবে, পরন্তু পদ্যাংশ অধিক থাকিবে না।নায়কাদির কর্তব্য সন্ধ্যাবন্দনাদি-নিত্যকর্মের বিরোধী কোনও বিষয় অঙ্কে সন্নিবেশিত হইবে না।যে বৃত্তান্ত বহুকালনিষ্পদ্য, তাহা অঙ্কে বর্ণনীয় নহে, পরন্তু যাহা অল্পকালনিষ্পদ্য তাহাই ধারাক্রমে রসবিচ্ছেদনিরাসার্শ অঙ্কে নিবদ্ধ হইবে।সকল অঙ্কে নায়ক উপস্থিত না থাকিলেও ঘটনাদ্বারা প্রত্যেক অঙ্কেই তাহার সম্বন্ধ রাখিতে হইবে।তিন-চারিজন পাত্ৰদ্বারাই সাধারণতঃ অঙ্কের নির্বাহ করিতে হয়।নাটকের অঙ্কে কতিপয় বিষয় বর্ণিত হইবে না, যথা—অতিদূর হইতে আহ্বান, বধ, যুদ্ধ, রাজ্য-দেশ প্রভৃতির বিপ্লব, বিবাহ, ভোজন, শাপপ্রদান, মাল্যোৎসর্গ, মৃত্যু, সুরতক্রীড়া, কামপ্রযুক্ত অধরদংশন, স্তনাদিতে নখাঘাত এবং অন্যান্য লজ্জাজনক কার্য, শয়ন, অধরপানাদি, নগরাদির অবরোধ, স্নান এবং অনুলেপন।অঙ্ক অত্যন্ত দীর্ঘ হইবে না। অঙ্কের অভ্যন্তরে মহিষী, পরিজনাদি, অমাত্য এবং বণিক্ প্রভৃতির বিচিত্র বৃত্তান্ত স্পষ্টরূপে প্রতীত থাকিবে এবং উক্ত চরিত্র গুলি রস ও ভাবের উদ্ভব করিবে।অঙ্কের শেষে কোন পাত্রই রঙ্গস্থলে উপস্থিত থাকিবে না, পরন্তু সকলেই নেপথ্যস্থানে চলিয়া যাইবে।(—সাহিত্যদর্পণ ৬ষ্ঠপঃ ৭ম শ্লোক) অঙ্কের বিধানে—‘অঙ্ক’ নামক দৃশ্যকাব্যের বিধি অনুসারে।