দেব-দ্রোহ করিলে কৃষ্ণের বড় দুঃখ।
গণসহ কৃষ্ণপূজা করিলে সে সুখ॥
দেবগণ প্রপঞ্চে স্ব-স্ব-অধিকারানুরূপ ভোগকার্যে বদ্ধজীবের আদর্শ হইয়া থাকেন।সকলেই কৃষ্ণাজ্ঞাপরিচালন-জন্য ত্রিদিব ক্ষেত্রে ও মরলোকে বিচরণ করেন।তাঁহারা কৃষ্ণপূজার চলচ্চিত্র।সপরিকর কৃষ্ণ-সেবা করিলে কৃষ্ণের বিশেষ সুখোৎপত্তি হয়।সাত্ত্বিক অহঙ্কারযুক্ত দৃশ্য দেবাদি-নায়ক-সমূহে বিদ্বেষ বুদ্ধি করিলে তাঁহাদিগকে বিষ্ণুভক্তিপরায়ণ বলিয়া স্বীকার করা হয় না।বহির্জগতের কামনা বিদূরিত হইয়া যখন দেবাদি সকল প্রাণীর নিকট কৃষ্ণসেবা যাচ্ঞা করা হয়, তখন তাঁহাদিগের স্বরূপগত প্রার্থনায় বাসনার তাড়না পরিলক্ষিত হয় না।আধ্যক্ষিকজ্ঞান-বিমুক্ত জীবগণ পরিকরবৈশিষ্ট্যের বিচার অনুসরণ করিয়া প্রাপঞ্চিক দর্শন হইতে বিমুক্ত হন।সেইরূপ মহাভাগবতই কৃষ্ণের সুখবিধানে সর্বতোভাবে সমর্থ।
এই কবিতা পাঠ করিয়া যদি কেহ প্রাপঞ্চিক ইন্দ্রিয়তর্পণে ব্যস্ত হইয়া দেবাদি প্রাণিগণের নিকট স্ব-স্ব-ইন্দ্রিয়পরিতৃপ্তির উপাদান সংগ্রহ করিতে সমর্থ হন, তাহাতে কৃষ্ণের সুখোদয় হয় না।প্রপঞ্চভোগোন্মত্ত জনগণ যে দেবমনুষ্যদিগকে ভোগ করিবার উদ্দেশে আপনাকে ভোগিসজ্জায় সজ্জিত করেন, তাহাতে-কৃষ্ণসেবা বৈমুখ্যহেতু কৃষ্ণের বড়ই দুঃখ হয় এবং তাদৃশ দেবপূজা কপটতা বা দেববিরোধ-মাত্র জানিয়া কৃষ্ণ সন্তুষ্ট হইতে পারেন না। ভগবদ্ভক্তের লক্ষণে—শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রদ্ধা এবং ইতর ব্যাপারে অনিন্দাই বিহিত হইয়াছে। অনিন্দার বিধান দেখিয়া তাহাতে প্রমত্ত হইবার বিধি ভক্তি শাস্ত্রে নাই, পরন্তু ঐ সকল
কথায় প্রমত্ত হইয়া তাহার সংবর্ধন-কামনা দ্রোহিতাচরণেরই অন্তর্গত।সর্বভূতে ভগবদ্ভাব দর্শন এবং নির্মুক্ত বিচারে তাহার ঐ দেবগণকে ভগবৎপরিকর-জ্ঞান অবশ্য বিহিত।“যে তু তত্র শ্রীভগবৎপীঠাবরণপূজায়াং গণেশদুর্গাদ্যা বর্তন্তে, তে হি বিষ্বক্সেনাদিবৎ ভগবতো নিত্যবৈকুণ্ঠসেবকাঃ।ততশ্চ তে গণেশদুর্গাদ্যা যেঽপরে মায়াশ্যাত্মকা গণেশ-দুর্গাদ্যাস্তে তু ন ভবন্তি।‘ন যত্র মায়া কিমুতা পরে’ ইতি।ততো ভগবৎস্বরূপভূতশক্ত্যাত্মকা এব তে।* * * সা হি মায়াংশরূপা তদধীনে প্রাকৃতেহস্মিন্ লোকে মন্ত্ররক্ষালক্ষণসেবার্থং নিযুক্তা চিচ্ছজ্যাত্মকদুর্গায়া দাসীয়তে, ন তু সেবাধিষ্ঠাত্রী।’’শ্রীমজ্জীবগোস্বামী প্রভু-বিলিখিত এই শ্রীভক্তিসন্দর্ভ বিচার এবং ভাঃ ১১/২৭/২৮-২৯ শ্লোক আলোচনা করিলে আর কোন সংশয থাকে না।