বৈদিক নৈবেদ্য-দানবিধি অতিক্রমপূর্বক মহাপ্রভুর শুক্লাম্বর তণ্ডুল-গ্রহণের তাৎপর্য-অর্চন-পথাপেক্ষা অনুরাগপথের মহিমা প্রদর্শন ও কৃষ্ণভক্তির সর্বশ্রেষ্ঠত্ব-স্থাপন—
মুদ্রার সহিত নৈবেদ্যের যত বিধি।
বেদরূপে আপনে বলেন গুণনিধি॥
নৈবেদ্য-দানবিধি—“অস্ত্রায় ফট” মন্ত্র দ্বারা জপ্ত জলযোগে নৈবেদ্য প্রোক্ষণপূর্বক চক্রমুদ্রা ভ্রমণদ্বারা রক্ষণ করিবে। পরে বায়ুবীজ (‘যং’) দশধা জলে জপ করতঃ সেই জল নৈবেদ্যে সেচন করিতে হইবে। উহাদ্বারা নৈবেদ্যদ্রব্যের শুষ্কত্ব-দোষের বিশুদ্ধি করিয়া দক্ষিণ করে বহ্নিবীজ (রং) ভাবনা করিবে এবং দক্ষিণ হস্ততলের পৃষ্টভাগে বামকরলগ্ন করতঃ প্রদর্শন করিবে। তদুত্থ বহ্নিদ্বারা নৈবেদ্য-দ্রব্যের শুষ্কত্ব-দোষ মনে মনে দহন করিতে হইবে। তৎপরে বামকরে অমৃতবীজ (ঠং) চিন্তা করিবে।অনন্তর দক্ষিণ হস্তের তলদেশ বামকরের পৃষ্ঠভাগে লগ্ন করিয়া দেখাইবে এবং উক্ত মুদ্রা হইতে জাত সুধাধারা দ্বারা সেই নৈবেদ্য-দ্রব্য সেচন করিবে। পরে মূলমন্ত্রযোগে অভিমন্ত্রিত জলদ্বারা ঐ নৈবেদ্য প্রোক্ষণ করত তৎসমস্ত সুধাময় চিন্তা করিবে। তদনন্তর উহা দক্ষিণ-করদ্বারা স্পর্শপূর্বৰ্ক অষ্টধা মূলমন্ত্র জপ করিবে। তৎপরে ধেনুমুদ্রাযোগে উক্ত নৈবেদ্যকে পরিপূর্ণ জ্ঞান করত গন্ধ-জলাদি দ্বারা উহার এবং শ্রীহরির অর্চনা করিবে। অনন্তর কুসুমাঞ্জলি লইয়া শ্রীহরি এই বলিয়া অর্চন করিবে—‘হে ভগবন্ !নৈবেদ্য গ্রহণার্থ তদীয় শ্রীবদনপদ্ম হইতে তেজ বহির্গত হউক।‘ এই প্রকারে পূজা করিয়া, যেন প্রভুর বদন হইতে তেজ বিনির্গত হইয়া নৈবেদ্য মিলিত হইতেছে, এইরূপ চিন্তা করিবে। তৎপরে বামকরে নৈবেদ্যপাত্র স্পর্শ করিয়া দক্ষিণ করে গন্ধপুষ্প-সহ জল লইবে এবং স্বাহাস্ত মূলমন্ত্র পাঠ করত “শ্রীকৃষ্ণায় ইদং নৈবেদ্যং কল্পয়ামি” বলিয়া গন্ধপুষ্পাদি-সহ দক্ষিণ করস্থ তজ্জল ভূতলে পরিত্যাগ করিবে।তৎপরে তুলসীদল সহ নৈবেদ্য প্রদানের মন্ত্র দ্বারা প্রভুকে নিবেদন করিয়া দিবে। নিবেদনের মন্ত্র যথা,—“নিবেদয়ামি ভবেতে জুষাণেদং হবির্হরে। পরে “অমৃতোপস্তরণমসি স্বাহা’’ মন্ত্র পাঠ করত বাম কর দ্বারা যথা বিধানে প্রভুকে বারিগণ্ডুষ প্রদান করিবে এবং বিকসিত-কমলসদৃশ গ্রাসমুদ্ৰা দেখাইবে। ফলতঃ প্রথমে প্রণববিশিষ্ট এবং শেষে চতুর্থী বিভক্তি ও স্বাহাযুক্ত প্রাণাদি-মন্ত্ৰদ্বারা দক্ষিণ করে প্রাণাদি পঞ্চমুদ্রা প্রদর্শন কর্তব্য।তৎপরে করদ্বয়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠযুগল দ্বারা স্ব স্ব অনামাযুগল স্পর্শ করত নৈবেদ্য-দ্রব্যের মন্ত্র জপপূর্বক নিবেদ্য-মুদ্রা দেখাইবে। নিবেদ্যমুদ্রার মন্ত্র
যথা,—“ঠোঁ নমঃ পরয় অবাত্মনেঽনিরুদ্ধায় নিবেদ্যং কল্পয়ামি।’’ ভগবদ্ভক্তিপরায়ণেরা নিজ অভীষ্ট মন্ত্র নিবেদ্য পদার্থের মন্ত্ররূপে জপ করেন এবং গ্রাসমুদ্ৰা দেখাইয়া থাকেন। হরিমুখপদ্ম হইতে যে তেজঃ বিনিষ্ক্রান্ত হয়, তাঁহারা তদ্রূপ চিন্তা করেন না; ফলকথা, শিষ্টাচারানুসারে প্রফুল্লমনে শ্রীহরিকে ভোজন করাইয়া থাকেন।(হঃ ভঃ বিঃ ৮ম বিলাস দ্রষ্টব্য)।