ঐকান্তিক ভক্ত শুক্লাম্বরের মাধুকরী বলপূর্বক গ্রহণ-দ্বারা গৌরসুন্দরের স্বয়ং ভিক্ষুধর্মের আবাহন—
দশ ঘরে মাগিয়া তণ্ডুল বিপ্র পায়।
লক্ষ্মীপতি গৌরচন্দ্র তাহা কাড়ি’ খায়॥
অনন্ত ঐশ্বর্যের অধিপতি শ্রীগৌরসুন্দরের ঐকান্তিক ভক্ত শুক্লাম্ভর ব্রহ্মচারী নানাস্থান হইতে মাধুকরী সংগ্রহপূর্বক যে ভৈক্ষ্যদ্রব্য দ্বারা নিজেচ্ছায় হরিসেবা করিতেন, শ্ৰীমন্মহাপ্রভু তাহার সুযোগ না দিয়া, স্বয়ং স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া সেই ভৈক্ষ্যদ্রব্য গ্রহণরূপ ভিক্ষুধর্মের আবাহন করিলেন। তাহাতে শ্রীচৈতন্যাশ্রিত জনগণ জানলেন যে, শ্রীচৈতন্যদেব ত্রিদণ্ডিভিক্ষুগণের একমাত্র সেব্য। ত্রিদণ্ডিভিক্ষুগণ নিজের উদর-পূর্তি বা ইন্দ্রিয়তর্পণের উদ্দেশে কোন মাধুকরী সংগ্রহ করেন না;পরন্তু তদ্বারা কৃষ্ণসেবাই করিয়া থাকেন। ব্রহ্মসন্ন্যাসিগণ বিষয় হইতে বিনিবৃত্ত হইয়া ভিক্ষা মাত্র অবলম্বন পূর্বক যাবন্নির্বাহ-প্রতিগ্রহ বিচারমাত্র করিয়া থাকেন। বৈষ্ণব-সন্ন্যাসিগণ মাধুকরী লব্ধ ভৈক্ষ্য দ্বারা ভগবৎসেবাই করিয়া থাকেন।ত্যাগী বৈষ্ণব-সন্ন্যাসীর রূপ-রসাদি যাবতীয় বিষয় গ্রহণ—-নিজেন্দ্রিয় প্রতিবাঞ্ছা নহে, পরন্তু তাঁহারা তদ্দ্বারা কৃষ্ণ ও বৈষ্ণবের সেবা-তাৎপর্য ব্যতীত অন্য কোন কুযোগী বৈভবে আবদ্ধ থাকেন না।শ্রীচৈতন্যমঠে দীক্ষিত বা দিব্যজ্ঞানলব্ধ জনগণ শ্রীগৌড়ীয় মঠে বাস করিয়া শুক্লাম্বরের ব্রহ্মচর্যের অনুসরণ মাত্র করিয়া থাকেন। শ্রীচৈতন্যদেব মঠবাসিগণের যাবতীয় ভৈক্ষ্যদ্রব্য কাড়িয়া খান বলিয়াই তাঁহারা গৌরহরির অপহরণ-কার্যের সহায়তা করিতে সমর্থ হন। সর্বস্ব শ্রীগৌরসুন্দরের সেবায় নিযুক্ত করাই ভক্তিমঠবাসিগণের একান্ত কর্তব্য।ঐ বৃত্তিই ‘প্রেম’ –শব্দবাচ্য। প্রেমার অনুসরণ করিতে হইলে মঠবাসীর পবিত্র চরিত্র দর্শন করাই সুকৃতিমন্ত জীবগণের একমাত্র বিধেয়। চারি আশ্রমে থাকিয়া, চারিবর্ণে প্রতিষ্ঠিত হইয়া পঞ্চম আশ্রম বা পঞ্চম বর্ণের অনুপযোগিতা দর্শনে কৃতকার্য লইয়া যে সমদর্শন, তাহা ভক্তিমঠবাসিগণের চিন্ময় চরিত্রে প্রতিভাত হয়। সুতরাং ভক্তিমঠবাসী পরম সুচতুর রসজ্ঞ মহাভাগ-সকলই এই সকল কথা বুঝিতে পারিয়া জগতের সকল কার্য পরিত্যাগ পূর্বক প্রতিগৃহে নাম-প্রেম-প্রচার কার্যদ্বারা ভাগ্যবন্ত গৃহস্থগণের সেবা করিতে সর্বদা উদ্গ্রীব।