‘ভিখারী’ করিয়া জ্ঞান, লোকে নাহি চিনে।
দরিদ্রের অবধি করয়ে ভিক্ষাটনে॥
মূঢ় ব্যক্তিগণ আপাতদর্শনে বঞ্চিত হইয়া শুক্লাম্বর ব্রহ্মচারীকে সাধারণ ইন্দ্রিয়তর্পণাকাঙ্ক্ষ ভিক্ষু বলিয়াই জানে। দরিদ্রতা বা অভাবের পূর্ণাদর্শ ভিক্ষুকের বেশে কৃষ্ণভক্তের চেষ্টা ত্রিবিধাহঙ্কার-মত্ত জনগণ বুঝিয়া উঠিতে পারে না। মায়াবিমূঢ় অহঙ্কারগর্বিত জনগণ ভগবদ্ভক্তকে অভাবগ্রস্ত কর্মফলাধীন জ্ঞান করে, কিন্তু সুজন বৈষ্ণবের দরিদ্রতা, অভাব বা প্রাপঞ্চিক বস্তুতে অকিঞ্চনাধিকার বুঝিবার সামর্থ্য তাহাদের নাই। তাঁহারা জীবের অজ্ঞাতসুকৃতির জন্য মহৎ হইয়াও দীনচেতা গৃহীর নিবাসে গমন করিয়া থাকেন। “মহান্তের স্বভাব এই তারিতে পামর। নিজকার্য নাহি, তবু যান পর-ঘর॥’’ উহাতে দাতার অজ্ঞাত-সুকৃতি জন্ম লাভ করে। এই আত্মবৃত্তি যাঁহারা বুঝিতে পারেন, তাহারাই ভক্তিমঠে ভিক্ষুকের বেষ ধারণ করিয়া হরিভজন করেন ও মূঢ় জড়াসক্তজনগণের সুকৃতির উদয় করান। ভক্তিমঠের ভিক্ষুকগণ বিশুদ্ধ ব্রাহ্মণাচার গ্রহণ করিয়া ভোগপর ব্রাহ্মণাচারে অবস্থানপূর্বক আত্মবঞ্চনা করেন না, পরন্তু ভৈক্ষ্যদ্রব্য-সমূহ কৃষ্ণসেবায় নিযুক্ত করেন। কর্মফলভোগী কৃষ্ণবিমুখ-ব্রাহ্মণতায় যেরূপ আত্মেন্দ্রিয় তুর্পণের ব্যবস্থা, সেইরূপ ব্রাহ্মণব্রুবতা বৈষ্ণবের না থাকায় তাঁহারা কৃষ্ণার্থে অখিল-চেষ্টাসম্পন্ন হইয়া নির্বোধ সংসারকে আত্মস্বভাব ও নিজের উন্নত পদবীর কথা জানিতে দেন না।