Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 42

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • নাচয়ে চতুরানন,             ভক্তি যাঁর প্রাণধন,
    লইয়া সকল পরিবার
    কশ্যপ, কর্দম, দক্ষ,                    মনু, ভৃগু মহা-মুখ্য,
    পাছে নাচে সকল ব্রহ্মার

    কশ্যপ—(কশ্যং সোমরসাদিজনিতং মদ্যং পিবতীতি) ব্রহ্মার মানসপুত্র মরীচির ঔরসে ও কর্দমদুহিতা কলার গর্ভে ইঁহার জন্ম। শুক্ল যজুর্বেদ প্রভৃতি বৈদিক সংহিতামতে ইনি হিরণ্যবর্ণ ব্রহ্মা হইতে জন্মগ্রহণ করেন। “হিরণ্যবর্ণাঃ শুচয়ঃ যাবকা যাসু জাতঃ কশ্যপো যাস্বিন্দ্ৰঃ’’—তৈত্তিরিয় সংহিতা ৫/৬/১/১)। ইনি একজন প্রজাপতি। সাম, যজু ও অথর্ব-সংহিতার মতে ইনি চন্দ্র প্রভৃতি দেবগণের জনক। শ্রীমদ্ভাগবত-মতে ইনি দক্ষের ১৭টী কন্যাকে বিবাহ করিয়াছিলেন। তাঁহাদিগের গর্ভে ১৭টী জাতি উৎপন্ন হইয়াছিল—১)অদিতিগর্ভে দেবগণ, (২)দিতি-গর্ভে দৈত্যগণ,(৩)দনুর গর্ভে দানব,(৪০ কাষ্ঠা-গর্ভে অশ্বাদি,(৫)অরিষ্টা-গর্ভে গন্ধর্বগণ,(৬) সুরসা-গর্ভে রাক্ষস,(৭) ইলা-গর্ভে বৃক্ষ,(৮) মুনি-গর্ভে অপ্সরোগণ,(৯)ক্রোধবশার গর্ভে সর্প,(১০)তাম্ৰার গর্ভে শ্যেন, গৃধ্র প্রভৃতি,(১১) সুরভি-গর্ভে গো-মহিষাদি,(১২) সরমা-গর্ভে শ্বাপদ,(১৩) তিমি-গর্ভে জলজন্তু,(১৪) বিনতা-গর্ভে গরুড় ঐ অরুণ,(১৫) রুদ্র-গর্ভে নাগ,(১৬) পতঙ্গী -গর্ভে পতঙ্গ এবং(১৭) যামিনী-শার্ভে শলভ। কিন্তু মহাভারত ও অন্যান্য পুরাণাদিতে কশ্যপের ত্রয়োদশ ভার্যার উল্লেখ আছে;যথা,—(১) অদিতি (২) দিতি, (৩) দনু (৪) বিনতা, (৫) যসা, (৬) কদ্রু, (৭) মুনি, (৮) ক্রোধা, (৯) অরিষ্টা, (১০) ইরা, (১১) তাম্রা, (১২) ইলা এবং (১৩) প্রধা।

    কর্দম—স্বায়ম্ভুর-মন্বন্তরের প্রজাপতিবিশেষ, ব্রহ্মার পুত্র। ব্রহ্মার আদেশে সৃষ্টি করণার্থ ইতি সরস্বতী-তীরে বিন্দুসর-তীর্থে। দশ হজার বৎসর তপস্যা করেন। পরে স্বায়ম্ভুব মনুর কন্যার পাণিগ্রহণ পূর্বক কলা প্রভৃতি নয়টী কন্যা উৎপাদন করিলে ভগবান্ কপিলদেব ইহার ঔরসে আবির্ভূত হন।

    দক্ষ—ইনি একজন প্রজাপতি। মহাভারত-পুরাণাদির মতে ব্রহ্মার দক্ষিণাঙ্গুষ্ঠ হইতে ইঁহার জন্ম। ইহার পূর্বে মানস-সৃষ্টি হইত। দক্ষ যখন দেখিলেন, মানস সৃষ্টিদ্বারা প্রজা বৃদ্ধি হয় না, তখন তিনি প্রথমে মৈথুন দ্বারা প্রজা সৃষ্টি করেন। তদবধি মনুষ্য, পশু, পক্ষী, প্রভৃতি মৈথুন দ্বারা সৃষ্টি হয়।

    শ্রীমদ্ভাগবত-মতে—স্বায়ম্ভুব মনুর কন্যা প্রসূতির সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। প্রসূতির গর্ভে ১৬টী কন্যা জন্মে। তন্মধ্যে ১৩টী ধর্মকে, একটী অগ্নিকে, একটী পিতৃগণকে ও একটী মহাদেবকে সম্প্রদান করেন। কোন সময়ে বিশ্বাস্রষ্ঠৃগণের যজ্ঞে সকল দেবগণ উপবিষ্ট ছিলেন। তৎকালে দক্ষ সমাগত হইলে ব্রহ্মা ও শিব ব্যতীত সকলেই উত্থিত হইলেন;কিন্তু মহাদেব কোনরূপ সম্মান প্রদর্শন না করায় দক্ষ ক্রোধোন্মত্ত হইয়া শিবনিন্দা করিতে থাকেন এবং তাঁহাকে যজ্ঞভাগ হইতে বঞ্চিত করেন। পরে স্বয়ং বৃহস্পতি-সব আরম্ভ করিয়া শিব ব্যতীত ত্রিলোকের সকল অধিবাসিকেই নিমন্ত্রণ করেন। সতী পিতৃযজ্ঞে গমনেচ্ছা প্রকাশ করায় মহাদেব তাঁহাকে অনুমতি প্রদান করেন নাই;সতী বিনানুমতিতেই যজ্ঞস্থলে গমন করিয়া শিবনিন্দা-শ্রবণে দেহ ত্যাগ করেন। মহাদেব নারদমুখে সতীর প্রাণত্যাগের সংবাদ অবগত হইয়া ক্রোধবশে ভূমিতে জটা নিক্ষেপ পূর্বক বীরভদ্রের উৎপাদন করেন। বীরভদ্র যজ্ঞস্থলে গমন পূর্বক যজ্ঞধ্বংস এবং পশুমারণ-যন্ত্রে দক্ষের বিনাশ সাধন করেন। পরে ব্রহ্মার স্তবে প্রীত মহাদেবের কৃপায় ছাগমুণ্ড হইয়া দক্ষ পুনর্জীবন লাভ করেন। সতীও হিমালয়ের ক্ষেত্রে মেনকার গর্ভে পুনরায় জন্ম গ্রহণ করিয়া শিবকে প্রাপ্ত হন। ইহার অসিক্লী নাম্নী ভার্যার গর্ভে ৬০টী কন্যা জন্মে। তন্মধ্যে ১০টী ধর্মকে, ১৭টী কশ্যপকে, ২৭টী চন্দ্রকে এবং দুইটী করিয়া ভূত, অঙ্গিরা ও কৃশাশ্বকে প্রদান করেন।

    দক্ষ পঞ্চজনী নাম্নী পত্নীর গর্ভে অযুত সংখ্যক পুত্র উৎপাদন পূর্বক তাহাদিগকে প্রজাসৃষ্টি করিতে আদেশ করিলে ‘হর্যশ্ব’ সংজ্ঞক অযুত পুত্রই নারদোপদেশে পারমহংস্য-ধর্মে অনুরক্ত হন। দক্ষ পুত্রগণের জন্য শোক প্রকাশ করিয়া পুনর্বার ‘সবলাশ্ব’ নামক সহস্র পুত্র উৎপাদন করিয়া তাঁহাদিগকে প্রজাসৃষ্টির আদেশ প্রদান করিলে তাঁহারাও দেবর্ষি নারদের উপদেশে হর্যশ্বগণের গতি লাভ করেন। তাহাতে ক্রুদ্ধ হইয়া দক্ষ নারদকে এই অভিসম্পাত করেন যে, নারদকে সর্বলোকে ভ্রমণ করিতে হইবে, তাঁহার কোথাও স্থান হইবে না।

    ভৃণ্ড—বিষ্ণুপুরাণ-মতে ইনি ব্রহ্মার মানসপুত্র ও দশজন প্রজাপতির অন্যতম। দক্ষকন্যা খ্যাতির সহিত ইঁহার বিবাহ হয়। খ্যাতির গর্ভে বিষ্ণুপত্নী লক্ষ্মী এবং ‘ধাতা’ ও ‘বিধাতা’ নামে দুই পুত্র-জন্মে। মহাত্মা মেরুর আয়তি ও নিয়তি নাম্নী কন্যাদ্বয়ের সহিত ঐ দুইজনের বিবাহ হয়, ক্রমে ইঁহাদের বংশ বিস্তৃত হইয়া ‘ভার্গব’ নামে বিখ্যাত হয়।

    মহাভারতের মতে—বহির্যজ্ঞে দীক্ষিত ব্রহ্মা হুতাশনে আহুতি-প্রদানকালে দেবকন্যাগণকে দর্শন করায় রেতঃ স্খলিত হয়। তখন সূর্যদেব কর দ্বারা উহা গ্রহণ পূর্বক অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলে অগ্নিশিখা হইতে ভৃণ্ডর উৎপত্তি হয় । ইনি সপ্তর্ষিগণের অন্যতম।

    শ্রীমদ্ভাগবতে উক্ত হইয়াছে, —ব্রহ্মাপুত্র ভৃগু ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর—এই তিন জনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ, তদ্বিষয়ের পরীক্ষার্থ ঋষিগণ কর্তৃক প্রেরিত হইয়া ব্রহ্মার সভায় উপস্থিত হন। ব্রহ্মার মহত্ত্ব পরীক্ষার নিমিত্ত ভৃগু তাঁহাকে প্রণামাদি না করায় ব্রহ্মা কুপিত হইলে তিনি রুদ্রসমীপে গমন করেন।  মহাদেব তাঁহাকে আলিঙ্গন করিতে উদ্যত হইলে ভৃগু মহাদেবকে ‘উন্মার্গগামী’ বলিয়া তিরস্কার করেন। তাহাতে রুদ্র ক্রুদ্ধ হইয়া ত্রিশূল উত্তোলন পূর্বক ভূগুকে বিনাশ করিতে প্রবৃত্ত হইলে তিনি বৈকুণ্ঠে গমন করেন এবং লক্ষ্মীক্রোড়ে শয়ান নারায়ণের বক্ষঃস্থলে পদাঘাত করেন। তদনন্তর শ্রীহরি লক্ষ্মীর সহিত গাত্রোত্থান। করিয়া ভৃগুকে বন্দনা করেন এবং তাঁহার আগমন কারণ না জানায় তাঁহার যথোচিৎ সৎকার-করণে অক্ষমতার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও স্তব করেন। তখন ভৃগু মুনিগণসমীপে উপস্থিত হইয়া সম্যক্‌ জ্ঞাপন করিলে সকলে বিষ্ণুরই শ্রেষ্ঠত্ব নির্ণয় করেন।

    মনু—ব্রহ্মার একদিনে চতুর্দশ মনু হইয়া থাকেন। তাঁহাদের নাম——স্বায়ম্ভুব, স্বারোচিষ, উত্তম, তামস, রৈবত, চাক্ষুষ, বৈবস্বত, সাবর্ণি, দক্ষসাবর্ণি, ব্রহ্মসাবর্ণি, ধর্মসাবর্ণি, রুদ্রসাবর্ণি, দেবসাবর্ণি ও ইন্দ্রসাবর্ণি। বর্তমান মনু-বৈবস্বত। ইহাদের প্রত্যেকের ভোগকাল—৭১ চতুর্যুগ, মহাযুগ বা দিব্যযুগ। শ্রীমদ্ভাগবতে মনুগণের বংশবিস্তার বর্ণিত আছে।

Page execution time: 0.0529730319977 sec