Normal view
Book Lang.: বাংলা
English
संस्कृता वाक्
Translation

শ্লোক 9

Language: বাংলা
Language: English Translation
  • প্রতি ঘরে ঘরে গিয়া কর এই ভিক্ষা।
    বল কৃষ্ণ
    , ভজ কৃষ্ণ, কর কৃষ্ণ শিক্ষা

    ভিক্ষুক—দাতার মুখাপেক্ষী, অতএব উচ্চস্তরে অবস্থিত। দাতা ভিক্ষুককে নিম্নস্তরে অবস্থিত জানিয়া তাহার প্রতি দয়াপরবশ হন। অনুগ্রহ-প্রার্থনার নামই—‘ভিক্ষা’। অনুগ্রহকারী উচ্চ হইতে অবতরণ করিয়া অভাবগ্রস্ত ভিক্ষুককে মধ্যপথে উন্নীত করে। ভিক্ষুর বেশে যখন চতুর্দশভুবনপতি প্রভু নিত্যানন্দ এবং সর্বলোক-পিতামহ শুদ্ধভক্তরাজ নামাচার্য ঠাকুর হরিদাস ভিক্ষা করিতে যাইবেন, তখন তাহাদিগের ভিক্ষা-যোগ্য বস্তু কিঞ্চন-সম্প্রদায়ের প্রদেয় নহে জানিয়া গৌরসুন্দর তাঁহাদিগকে এক অলৌকিক রাজ্যে উপনীত হইবার জন্য ভিক্ষা করিতে নিযুক্ত করিলেন।

    ‘বল কৃষ্ণ’,—কৃষ্ণেতর শব্দ ন্যূনাধিক অবিদ্বদ্‌রূঢ়ি-বৃত্তিতে অবস্থিত। শব্দের বিদ্বদ্‌রূঢ়িত্ব উপলব্ধ হইলে উহা কৃষ্ণকেই লক্ষ্য করে এবং তাদৃশ বৃত্তি সম্পৎ কৃষ্ণ হইতে অভিন্ন। যিনি কৃষ্ণের কীর্তন করেন, তিনি শ্রবণকারীর মঙ্গল বিধান করেন এবং আত্মমঙ্গল সাধন করিয়া ভগবৎস্মরণজনিত আনন্দ-সমূদ্রে অবস্থিত হন। শব্দসমূহ যখন কৃষ্ণেতর বস্তুর নির্দেশক হয়, সে সময় বদ্ধজীব আত্মস্বরূপ বিস্মৃত হইয়া আপনাকে ভোক্তৃপদে বরণ করেন। সেইকালে তাঁহার ইন্দ্রিয়সমূহ হৃষীকেশের সেবা-বিমুখ হইয়া অপস্বার্থবশে হৃষীকেশের বহিরঙ্গা শক্তির উপর প্রভুত্ব করিতে থাকে। ‘শ্রীকৃষ্ণ’-শব্দ কীর্তন কর, —শ্রীভগবানের এই আজ্ঞা—মহাবদান্যতার প্রকৃষ্ট পরিচয়। ‘কৃষ্ণ’ শব্দই—অভিন্ন কৃষ্ণ—একথা কৃষ্ণই গুরুরূপে শিক্ষা দিতে পারেন। সেই শিক্ষায় দীক্ষিত হইয়া তাদৃশী শিক্ষার প্রচারপরতাই শ্রীচৈতন্যদাস—ইহা বুঝাইবার জন্যই শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভু ও শ্রীনামাচার্য হরিদাস ভগবদাজ্ঞা পালন করিয়াছিলেন। যিনি শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভুকে শ্রীগুরু-তত্ত্বের আকর জানিয়া এবং সংসারবন্ধন হইতে মুক্ত হইয়া, শ্রীনামাচার্য হরিদাসের মুখে সম্বোধনের পদরূপে অবতীর্ণ ‘কৃষ্ণ’ শব্দ উচ্চারণ করিবেন, তিনিই প্রাপঞ্চিক সকল বাধা হইতে উন্মুক্ত হইয়া জীবের স্বরূপ-প্রয়োজন কৃষ্ণপ্রেমা লাভ করিতে পারিবেন। শ্রীগৌরসুন্দর শ্রীনিত্যানন্দ-প্রভু দ্বারা মানবমাত্রকেই কৃষ্ণকীর্তন করিবার অধিকার প্রদান করিয়াছেন। যিনি এই কীর্তন করিবার অধিকার প্রদান করিয়াছেন। যিনি এই অধিকার প্রদান করেন, তিনি কৃষ্ণ ব্যতীত অন্য কোন বস্তু হইতে পারেন না। যেহেতু যাঁহার তাদৃশ দেয় বস্তু না থাকে, তিনি উহা কোথা হইতে দিবেন? নাম নামী—অভিন্ন, সুতরাং নামকীর্তন হইলেই কৃষ্ণপ্রেমা অবশ্যম্ভাবী—একথা কৃষ্ণই বলিতে পারেন। কৃষ্ণেতরচিন্তাময় জনগণের উহা দুষ্প্রাপ্য বলিয়া কৃষ্ণকীর্তন ব্যতীত ইতর শব্দের আবাহনক্রমে জড়ে আবদ্ধতা। জগতের সকল লোক কৃষ্ণ কীর্তন করুক’—এই আজ্ঞা আকর-তত্ত্ব শ্রীজগদ্‌গুরুদেব ও শ্রীনামাচার্যের প্রতি উক্ত হইলেও, ঐ দুই আচার্য যখন ভগবদাজ্ঞা পালন করেন, তখন যে-সকল সুকৃতিসম্পন্ন জন উহা গ্রহণ করেন, তাঁহারাই আচার্যের কার্য করিতে অধিকার লাভ করিয়া থাকেন—তাঁহারাই শ্রীচৈতন্যদাস্যে আত্মনিয়োগ করিতে সমর্থ হন। ভিক্ষার ভাষায় “বল-কৃষ্ণ” শব্দ—জীবোদ্ধারক। শ্রবণকারী জীবের নিকট যখন উহা উপস্থিত হয়, তখন তিনি চৈতন্যদেবের আজ্ঞা পালন করিয়া প্রাপঞ্চিকবিচারমুক্ত হন ও ভগবৎপ্রকাশ স্বরূপ আচার্যাবতারের কার্য করেন। একমাত্র জগদ্‌গুরুবাদ নিরস্ত হইয়া মহান্ত-গুরুগণে গুরুতত্ত্বের প্রকাশ-সমূহ জীবোদ্ধারের কার্য করে।  

    ‘ভজ কৃষ্ণ,’ শ্রীচৈতন্যদেব প্রচারকদ্বয়কে বদ্ধজীবকুলের নিকট কৃষ্ণভজন করিবার প্রার্থনা জানাইতে আদেশ করিলেন॥ জীব কৃষ্ণবিমুখ হইয়া কৃষ্ণেতর বস্তুতে আকৃষ্ট হওয়ায় বস্তুসমূহের দুর্বলতা লক্ষ্য করিয়া তাহাদিগের ঈশ্বর হইবার বাসনায় ভোগবৃত্তির আশ্রয় করে। সুতরাং কৃষ্ণভজন পরিহার করিয়া ইন্দ্রিয়ভোগ্য ব্যাপারকে ‘বস্তু-জ্ঞানে তাহার প্রভু হইবার বাসনা করে। এরূপ কার্যই তাহার ভজনভাধক। কৃষ্ণভজন-বিমুখ জনগণের প্রপঞ্চে বিবিধ অধিকার(?) । সেইসকল অধিকার লাভ করিবার জন্য কাম-ক্রোধাদি রিপুষট্‌কের সেবায় জীব কৃষ্ণভজন ছাড়িয়া আপনাকে দৃশ্য জগতের ভোক্তা মনে করিয়া অমঙ্গল আবাহন করে। জীবকল্যাণার্থ মহাবদান্য শ্রীবিশ্বম্ভর শ্রীনিত্যানন্দ ও শ্রীহরিদাস-প্রভুদ্বয়কে নামাশ্রয়ে কৃষ্ণভজন করিবার বিচারের প্রচারার্থ আদেশ করিলেন॥

    ‘কর কৃষ্ণশিক্ষা’—কৃষ্ণই একমাত্র শিক্ষণীয় বস্তু। “কর্তারমীশং পুরুষং ব্রহ্মযোনিং’’ জানিয়া যখন স্বরূপোদ্বুদ্ধ জনগণ নিত্যচিন্ময় দর্শন করেন, তখন কৃষ্ণেতর শিক্ষার অকিঞ্চিৎকরতা উপলব্ধি হয়। কৃষ্ণই জগতের সকল বস্তুর আকর্ষক। তাঁহার সৌন্দর্য অসামান্য ও অতুলনীয়। তিনি পূর্ণজ্ঞানময়; তিনিই কৃষ্ণেতর বস্তুকে বিরাগভাজন করিতে সমর্থ। তিনি কাষ্ণব্যতীত অন্য বস্তুর সহিত বিলাস-কার্যে বিমুখ। কৃষ্ণশিক্ষাপ্রভাবে জীবের নিত্যত্ব উপলব্ধ হয়। তাদৃশী শিক্ষা জীবের সকল অবিদ্যা ও অজ্ঞান বিনাশ করে এবং কৃষ্ণ-শিক্ষা-বলে ইতর বস্তুর সান্নিধ্যজন্য নিরানন্দের অবকাশ হয় না। কৃষ্ণশিক্ষা লাভ করিলে সর্বার্থ সিদ্ধি হয়—চিত্তদর্পণ মার্জিত হয়—ভব-মহাদাবাগ্নি নির্বাপিত হয়—পরম শ্রেয়োলাভ ঘটে—সকল বিদ্যার তাৎপর্যই যে কৃষ্ণশিক্ষা—ইহা উপলব্ধ হয়। তাহা হইলে আত্মা কলুষিত হইতে পারে না; পরন্তু স্নিগ্ধ হয় এবং প্রতি মুহুর্তেই পরম সুখ লাভ ঘটে। কৃষ্ণশিক্ষা যাবতীয় অভিধেয়-ধিক্কারিণী সর্বৈশ্বর্যপ্রদা, সর্বমাধুর্যের সর্বোত্তমত্বপ্রদায়িকা। কৃষ্ণশিক্ষা জীবের ভোগপ্রবৃত্তি নিবারিকা ও মোক্ষতুচ্ছকারিণী। সুতরাং স্বকল্যাণ প্রার্থী জীবমাত্রেরই কৃষ্ণশিক্ষাই পরমোপযোগিনী।

Page execution time: 0.0606210231781 sec