হেন নাম অজামিল কৈলা উচ্চারণ।
তেঞি চিত্র নহে অজামিলের মোচন॥
জগতে যত প্রকার অপরাধ হইতে পারে, সর্বাপেক্ষা বৈষ্ণব-ব্রাহ্মণের বিদ্বেষ করা ও বিষ্ণুভক্তি-রহিত করিয়া ব্রাহ্মণতার সংহার করার তুল্য অপরাধ আর নাই। চতুর্দশ-লোকমধ্যে ব্রহ্মজ্ঞের শ্রেষ্ঠতা। সেই ব্রহ্মজ্ঞকুলের মধ্যে বিষ্ণুভক্তি একমাত্র ব্রহ্মজ্ঞতার উপান্ত ফল এবং বিষ্ণুভক্তিপ্রভাবে ভগবৎপ্ৰমাই চরম ফলরূপে কথিত হইয়াছে। ভক্তির বিদ্বেষ করিলে জীবের নামভজনে রুচি হয় না। তখনই ভক্তি বিনা অন্য পথ-গ্রহণের অনুরাগ দেখা যায়। উহাই ‘ব্রহ্মবধ’; কিন্তু তাদৃশ ব্রহ্মবধ করিয়াও যদি ভক্তপ্ৰসাদজ ভাবানুগমনে জীবের নামভজন প্রবৃত্তির উদয় হয়; তাহা হইলে কোটী কোটী ব্রহ্মজ্ঞ বধের অপরাধ হইতে মুক্ত হইয়া নাম-নামীর অভিন্নতা উপলব্ধ হয়। সেইকালে জীবের শব্দের অবিদ্বদ্রূঢ়ি স্তব্ধ হইয়া পড়ে। কৃষ্ণনামই—কৃষ্ণ এবং তদ্ভিন্ন ইতর-শব্দাদি বিদ্বদ্রূঢ়িতে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত তাহাদের ভেদকল্পনা-জন্য মহা অমঙ্গল বরণ করিয়া জীব কৃষ্ণবৈমুখ্য লাভে শব্দসমূহের অন্যাৰ্থ করিবার জন্য বাস্ত হয়। অচিন্ত্যভেদাভেদ-বিচার শব্দের অবিদ্ধঢ়িবৃত্তির সহিত বিদ্বদ্রূঢ়িবৃত্তির অবরতাবৈষম্য নিরস্ত করিয়া চিন্ত্য ভোগ্য জগতের ভেদ নাশ করে। সুতরাং প্রাপঞ্চিক ভোগ-বুদ্ধি হইতে জীবের পরিত্রাণ-লাভ ঘটে।
অজামিল নানাপ্রকার কুভোগে আবদ্ধ ছিল। ভগবানের নামোচ্চারণ-প্রভাবে তাহা হইতে তাহার মুক্তি হইয়াছিল। সাধারণ বিচারে বৈকুণ্ঠ-নামকে প্রাপঞ্চিক শব্দজ্ঞানে যে অবিচার উপস্থিত হয়, তাহাতে ব্রহ্মবধ প্রভৃতি বৈকুণ্ঠ-নামের দ্বারা অপসারিত হয় না। কিন্তু যাঁহারা সম্বন্ধাভিধেয়-প্রয়োজনবিশিষ্ট, তাঁহারাই বুঝিতে পারেন যে, বৈকুণ্ঠ-নামোচ্চারণ-ফলে অজামিলের মুক্তি আশ্চর্যের বিষয় নহে।