ইহাতে বিশ্বাস যার, সেই কৃষ্ণ পায়।
ইথে যার সন্দেহ, সে অধঃপাতে যায়॥
যাঁহারা শ্রীকৃষ্ণের গৌরলীলা বুঝিতে না পারিয়া বিষয়ভোগে প্রমত্ত হন, তাঁহারা কোনদিনই সেবোন্মুখতা লাভ করিতে পারেন না। সুতরাং তাঁহাদের জড়াভিনিবেশ অনিবার্য এবং নানাবিধ সাংসারিক ক্লেশ তাঁহাদিগকে চাপিয়া রাখিয়া নিম্নস্তরে অবস্থিত করায়; আর শ্রীগৌরভক্তগণ অনায়াসে কত সেবা করিতে সমর্থ হন। যাহারা জড়জগতে প্রলুব্ধ হইয়া ভোগ-কামনা করে, তাহারা ভগবৎসেবা অপেক্ষা জড়বিষয়ের প্রভু হইবার জন্যই প্রযত্ন করিয়া থাকে; সুতরাং তাহাদের অধঃপতন অনিবার্য। কৃষ্ণসেবোন্মুখতা লাভই যে একমাত্র পরমার্থ এবং সর্বতোভাবে আপেক্ষিক প্রয়োজন-লাভের মধ্যে সর্বোত্তম—এই উপলব্ধি না থাকিলে জীব অমঙ্গল হইতে অধিকতর অমঙ্গলে অবতরণ করে। জাগতিক ব্রাহ্মী, খরৌষ্টি ও সান্কী ভাষা এবং শব্দোদিষ্ট বিষয়সমূহে জীব প্রলুব্ধ হইলে মায়ার আবরণী ও বিক্ষেপাত্মিকা শক্তি দ্বারা জড়বিষয়ভোগে আকৃষ্ট হয়। তখন প্রপঞ্চে সুষ্ঠুভাবে আহারবিহারাদিতে তাহার শ্রদ্ধা সমৃদ্ধ হইতে থাকে, ইহাই তাহার অধঃপতনের কারণ। বহির্মুখ জীব চিৎসাহিত্য আলোচনায় দিন দিন স্বীয় বৈমুখ্যবৃত্তিতে রুচি লাভ করে। শ্রীগুরুপাদপদ্ম হইতে যাঁহার বিদ্বদ্রূঢ়িবৃত্তিবিশিষ্ট শব্দ লাভ ঘটে, তাঁহার প্রকৃতির অতীত নিত্যচিদ্বিলাস-বৈচিত্র্যে আগ্রহ বাড়িয়া যায়। তিনি তখন শব্দের অবিদ্বদ্রূঢ়ি আশ্রয় করিয়া বিভিন্ন ভোগোপকরণকে শব্দের উদ্দিষ্ট বিষয় না জানিয়া বিষ্ণুই যে সকল ইন্দ্রিয়ের নিত্যগতি, তাহা বুঝিতে পারেন এবং গুরুকৃপায়, ও তদীয় বাক্য শ্রবণ করিয়া তাঁহাতে শ্রদ্ধান্বিত হন। এইকালে শ্রীরাধামদনমোহন কৃষ্ণজ্ঞান তাঁহাকে জড়ভোগ বিষয়ানুভূতি হইতে রক্ষাবিধান করেন। অভিধেয় কৃষ্ণভক্তি লাভ করিবার জন্য শ্রীরাধামদনমোহন তৎকালে শ্রীরাধাগোবিন্দ-মূর্তিতে সপরিকরবিশিষ্ট হইয়া সেবাসুখাধিকার প্রদানের জন্য আবির্ভূত হন এবং তৎকালে জীব গোপীজনবল্লভের রাসস্থলীতে স্বীয় প্রয়োজনসিদ্ধি লাভ করেন। গৌরসুন্দরের চরণে শ্রদ্ধার এত মহিমা। গৌরবিদ্বেষী শব্দোচ্চারণকারী এবং শব্দার্থবিদ্গণের কপটতায় মূঢ়তা লাভ কখনই শ্রদ্ধা-বৃত্তির বিষয়। হওয়া উচিত নয়।