কৃষ্ণের পূর্ণশক্তি নিত্যানন্দের প্রসাদেই বিষ্ণুভক্তি লভ্য—
নিত্যানন্দের প্রসাদে সে হয় বিষ্ণু-ভক্তি।
জানিহ—কৃষ্ণের নিত্যানন্দ পূর্ণ-শক্তি॥
মহাপ্রভু বলিলেন, —শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে কৃষ্ণের পূর্ণশক্তি বলিয়া জানিবে। তিনি কৃষ্ণের সেবকগণের সর্বপ্রধান। কেবলমাত্র তাঁহার অনুগ্রহেই বিষ্ণুভক্তি লভ্য হয়। তিনি সন্ধিনীশক্ত্যধিষ্ঠিত বিষ্ণু-বিগ্রহ। স্বয়ং বিষ্ণু হইয়াও পরতম বিষ্ণু-তত্ত্বের সেবক। তাঁহার অনুগ্রহেই জীবের হরিভজন-প্রবৃত্তির উন্মেষ লাভ ঘটে। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভু শ্রীবার্ষভানবীর অনুজারূপে মধুর রতির পোষণ করেন। এ জন্য শ্রীঠাকুর নরোত্তম বলেন, —“হেন নিতাই বিনে ভাই, রাধাকৃষ্ণ পাইতে নাই, দৃঢ় করি’ ধর নিতাইর পায়॥’’ জগদ্গুরুবাদে শ্রীনিত্যানন্দই গুরু-তত্ত্বের আকর। মহান্তজগদ্গুরুবাদে শ্রীমহান্ত গুরুদেব শ্রীচৈতন্য-প্রকাশস্বরূপ শ্রীনিত্যানন্দের অবতার বলিয়াই (মর্যাদা-পথে) কথিত হন। শ্রীমহান্ত-গুরুদেব কৃষ্ণের প্রেষ্ঠতত্ত্ব বলিয়া শ্রীনিত্যানন্দের সহিত অভিন্ন শ্রীচৈতন্য-প্রকাশ এবং তিনি নিত্যানন্দস্বরূপ বলিয়া প্রসিদ্ধ। শৌক্র-পদ্ধতিতে নিত্যানন্দ-বংশ-পরিচয় ভক্তিপথের কোন পথিকই স্বীকার করেন না। অভক্ত বিষ্ণু সেবা-বিরোধী স্মাৰ্তমণ্ডলী ঐরূপ শৌক্রবংশে ভগবৎকৃপার যে আরোপ করেন, তাহা ভক্তিবিচারের পরিপন্থী। আম্নায়-পারম্পর্যে নিত্যানন্দবংশ শৌক্রপারম্পর্যে নহে বলিয়া বিভিন্ন গ্রামী-পরিচয়ে শ্ৰীবীরভদ্র প্রভুর শিষ্য-পারম্পর্যে শ্রীনিত্যানন্দ-শৌক্রবংশধারা উৎপত্তি লাভ করিয়াছে। খ্রীষ্টীয় ১৯শ শতাব্দীর শেষার্ধে বেনিয়াটোলার (কলিকাতা) জনৈক ব্যক্তি ‘নিত্যানন্দবংশ-বিস্তার’-নামক যে পুস্তকটী রচনা করিয়াছেন, তাহা আধুনিক এ ইতিহাস-বিরুদ্ধ মাত্র।